পঞ্চগড়ের আউলিয়া ঘাট দিয়ে তারা দুই ভাই বোন মিলে যাচ্ছিল বদেশ্বরী মন্দিরে পূজা দেখতে। নৌকায় উঠার পর একটু এগুতেই সেটিতে পানি ওঠা শুরু করে। একটু পর ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। এরপরই নৌকাটি তলিয়ে যেতে শুরু করে। শুরু হয় যাত্রীদের হাহাকার। নৌকার সকল যাত্রী পানিতে ডুবে যেতে থাকে। তার সাথে ডুবতে থাকে ভাই-বোন ঈশিতা কলি রায় এবং তর্পণ রায়। পানিতে ডুবতে থাকার সময় ছোট ভাই টেনে তোলে বড় বোনকে।
গত রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) মহালয়ার দিনে আউলিয়ার ঘাট পার হতে এই নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬৫ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে। আরও অন্তত ১০ জন নিখোঁজ রয়েছে। ঈশিতা-তর্পণ মাড়েয়া বামুন হাট ইউনিয়নের সর্দারপাড়া গ্রামের কৈলাশ চন্দ্র রায় এবং সুচিত্রা রানীর দুই সন্তান। তারা দুইজনই মাড়েয়া উচ্চ বিদ্যলয়ের শিক্ষার্থী। বোন ঈশিতা এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। তর্পণ পড়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ।
বড়বোন ঈশিতা জানায়, বদেশ্বরী মন্দিরে প্রতিবার পরিবারের সবাই মিলে যাই। এবারও আমরা পাড়ার অন্যান্যদের সাথে যাচ্ছিলাম। সবার সাথে আমরাও নৌকায় উঠি। নৌকায় ছিলো অনেক লোক। দাঁড়ানোর যায়গা ছিলোনা। ছাড়ার একটু পরই নৌকার মধ্যে পানি ঢুকতে শুরু করে। তারপরেই ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। নৌকা ডুবতে থাকে পানির নিচে । যাত্রীরা চিৎকার করতে থাকে। আমিও ডুবতে থাকি। সাঁতার জানতাম । কিন্তু ওড়নায় আমার দুই পা আটকে যায়। আমি খালি ডুবছি আর উঠছি। আর সবাইকে ডাকছি। এমন সময় আমার ছোট ভাই তর্পণ আমার হাত ধরে টানতে থাকে। আমাকে একটি নৌকার কাছে নিয়ে আসে। পরে নৌকাটিতে উঠি। এরপর আর কিছু বলতে পারিনা। বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হওয়ার পর জ্ঞান ফেরে। এই স্মৃতি কোনদিন ভুলতে পারবোনা।
ছোট ভাই তর্পণ জানায়, নৌকাটা ডুবতে থাকলে আমি সাঁতার কাটতে থাকি। পাশে আমার বোন হাবুডুবু খাচ্ছে। আর চিৎকার করে লোকজন ডাকছে। আমি তখন বোনের একটি হাত ধরে ফেলি। এরপর তাকে টানতে থাকি। একটি নৌকা এগিয়ে আসে। আমরা নৌকায় উঠে পড়ি।
মা সুচিত্রা রানী জানান, আমি তাদেরকে এবার মন্দিরে যেতে নিষেধ করেছিলাম। বলেছিলাম পরেরবার যাবো। তাদের বাবা বলেছিলো যাক। আমি ওদের রাস্তায় এগিয়ে দিয়েছি। এরপর ঘন্টাখানেক পড়েই শুনি নৌকা ডুবি হয়েছে। একজন বললো আমার ছেলেমেয়েও ওই নৌকায় ছিলো। আমি চিৎকার করতে করতে ঘাটের দিকে যাচ্ছিলাম। এমন সময় দেখি তর্পণ আসছে। পরে তার কাছে শুনি ঈশিতাকে বোদায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রাতে ঈশিতাকেও বাড়ি নিয়ে আসা হয়। তারা এখনো খুব দুর্বল। তাদের আতঙ্ক কাটেনি ।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ