সরকারের ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সখীপুর পৌরসভা মডেল হিসেবে মনোনীত হয়েছে। গত ৭ বছর ধরে টাঙ্গাইলের সখীপুর পৌর এলাকায় মানববর্জ্য থেকে কো-কম্পোস্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে জৈব সার প্রস্তুত করে সখীকম্পোস্ট সার নামে বাজারজাত করে আসছে। ইতোমধ্যেই এই জৈব সারের চাহিদা ও জনপ্রিয়তাও বাড়ছে।
সখীপুর পৌর এলাকার বাসা বাড়ির সেফটি ট্যাংক থেকে লিকুইট মানববর্জ্য সংগ্রহ করে কো-কম্পোস্ট প্ল্যান্টে আনা হয়। এখানে পরিবেশ সম্মতভাবে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় অর্গানিক, শুকনা মানববর্জ্য ও কাঠের গুড়া একত্রে মিক্সিং করে দীর্ঘ ৫৬দিন কম্পোস্টিং করা হয়। এই কম্পোস্টিং ট্যার্নিং এর মাধ্যমে জৈব সার তৈরি হয়। স্থানীয় ভাষায় সখীকম্পোস্ট জৈব সার নামে এগুলো বাজারজাত করা হচ্ছে। এই সখীকম্পোস্ট জৈব সার ১৫টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এই সার স্থানীয় কৃষকরা জমিতে ব্যবহার করে ব্যাপক ফলন পাচ্ছে। সখীপুর পৌর এলাকার সাড়ে চার হাজার মানুষকে এই মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা হয়েছে। মানববর্জ্য সংগ্রহের জন্য ভ্যাকুট্রাক চালক ও দুইজন সহকারী রয়েছে। সখীপুর পৌরসভ কর্তৃক নির্ধারিত একজন উদ্যোক্তার মাধ্যমে ৫জন লোক এই কাজ করে যাচ্ছে।
প্রতি বছর এই ১২শ‘ মেট্রিকটন জৈব সারের চাহিদা থাকলেও বর্তমানে ৭২০ মেট্রিক টন উৎপাদন করা হচ্ছে।
কৃষক মো. আনছের আলী বলেন, কম দামে এই সার ব্যবহার করে অধিক ফলন পাওয়া যায়। তাই আমি এই সার ব্যবহার করছি গত ২-৩ বছর যাবত।
সখীপুর পৌরসভা কো-কম্পোস্ট প্ল্যান্টের টেকনিক্যাল অফিসার মো. মাসুদ হাওলাদার জানান, সখীপুর পৌরসভায় ৫৮% মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে পেরেছি। ভবিষ্যতে এটিকে বাড়িয়ে ১০০% করার পরিকল্পনা রয়েছে।
কো-কম্পোস্ট প্ল্যান্টের কর্মরত একজন কর্মী জানান, ‘আমরা বাসাবাড়ি থেকে মানববর্জ্য সংগ্রহ করে পরিবেশ সম্মতভাবে জৈব সার তৈরি করে থাকি। এই কাজে এখন আমরা অভ্যস্থ হয়ে গেছি।’
সখীপুর পৌরসভা মেয়র আবু হানিফ আজাদ জানান, মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত করতে চাইলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে প্রাধান্য দিতে হবে।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, জনস্বাস্থ্য ও সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলে আগামী প্রজন্ম আমাদের পরবর্তী বংশধর সুন্দর ও দীর্ঘ জীবনযাপন করতে পারবে।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি বলেন, প্রতিটি জনপদে যেখানে যেভাবে বর্জ্য রয়েছে তা পরিশোধনের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা এবং বর্জ্যকে অর্থকরীতে রূপান্তর করতে পারলে দেশ এগিয়ে যাবে। সখীপুর পৌরসভার মতো সারাদেশের সকল পৌরসভায় এই প্রকল্পটি চালু করতে পারলে সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সার উৎপাদন করে আমরা স্বাবলম্বী হতে পারি।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল