৯টি উপজেলা এবং ২৬৩৬. ৫৮ বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ে গঠিত হবিগঞ্জ জেলা। এ জেলায় ১৮ লক্ষাধিকের উপরে মানুষের বসবাস। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাস করে ৬৯৩ জন মানুষ। আর এসব মানুষের চিকিৎসা সেবার শেষ আশ্রয়স্থল ২৫০ শয্যা জেলা সদর আধুনিক হাসপাতাল হবিগঞ্জ। এবার সেই হাসপাতালেই দেখা দিয়েছে তীব্র বিশুদ্ধ পানি সংকট। এমন অবস্থায় জেলার দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীসহ তাদের স্বজনরা পড়েছেন বিপাকে। ফলে বাধ্য হয়েই বাহির থেকে পানি কিনে নিয়ে ব্যবহার করতে হচ্ছে তাদের। মূলত হাসপাতাল এলাকায় ৩ থেকে ৪টি টিউবওয়েল থাকলেও সবক’টি টিউবওয়েলই রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। যার কারণে বিশুদ্ধ পানির এ সংকট দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, ২৫০ শয্যা জেলা সদর আধুনিক হাসপাতাল হবিগঞ্জে প্রতিদিন জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অন্তত ৩ থেকে ৪ শতাধিক রোগী আসে চিকিৎসা সেবা নিতে। এর মধ্যে প্রতিদিনই নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে অন্তত ১ শত থেকে ১৫০ জন। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা নিয়ে বাড়ি চলে যায়। এখানে চিকিৎসা আসা রোগীদের মধ্যে নারী ও শিশুদের সংখ্যাই বেশি দেখা যায়। এদের মধ্যে বেশির ভাগ রোগীই আবার মধ্যবিত্ত। তাই ঔষধপত্রের সাথে বাহির থেকে পানি কিনতে অতিরিক্ত টাকা খরচ হচ্ছে তাদের। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালে এমন রোগীও রয়েছে যারা সপ্তাহ খানেক বা তারও বেশি সময় ধরে ভর্তি রয়েছেন। প্রতিজন রোগী ও তাদের স্বজনদের দিনে অন্তত ৫ থেকে ৭ লিটার করে পানি বাহির থেকে কিনতে হচ্ছে। ফলে ঔষধ কিনার টাকা শেষ হচ্ছে পানির কিনতেই।
সরেজমিনে হাসপাতাল এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের উত্তর ও পশ্চিম ভাগে অন্তত ৩ থেকে ৪টি টিউবওয়েল রয়েছে। সবগুলো টিউবওয়েলই অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কোন কোন টিউবওয়েলে আবার চুরির ভয়ে নিরাপত্তার জন্য বাঁধা থাকলেও সেগুলোও নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। হাসপাতালের সাধারণ রোগীরা বলছেন, একটি জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালের পানির এমন সংকট মেনে নেয়া যায় না। তারা বলেন, দিনের পর দিন টিউবওয়েলগুলো নষ্ট হয়ে পড়ে থাকলেও কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে উদাসীন। টিউবওয়েলগুলো এমন অবস্থায় পড়ে রয়েছে সেগুলো দেখতে মনে হয় এসব যেন দেখার কেউ নেই।
কথা হয় হাসপাতালে আসা রোগীর স্বজন তোফায়েল চৌধুরীর সাথে। তিনি বলেন, গত দুইদিন যাবত আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছি। কিন্তু টিউবওয়েলগুলো নষ্ট হওয়ায় প্রতিদিন আমাদের ৫ লিটার করে বিশুদ্ধ পানি বাহির থেকে কিনে আনতে হচ্ছে। এতে আমাদের অতিরিক্ত টাকা খরচ হচ্ছে। তিনি বলেন, হাসপাতালের লাইনের পানির অবস্থাও খারাপ, তাও ব্যবহার করার মতো না।
আছমা আক্তার নামে এক নারী বলেন, আমরা গরীব মানুষ। এখানে এসে ওষুধ কিনার টাকাই পাই না এখন পানিও কিনে খেতে হচ্ছে। রাহুল নামে এক যুবক বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণেই টিউবওয়েলগুলো অকেজা হয়ে পড়ছে। এ বিষয়ে তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ২৫০ শয্যা জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আমিনুল ইসলাম সরকার বলেন, কয়েকটি টিউবওয়েল নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। তবে ইতোমধ্যে এ সংকট মোকাবেলায় গণপূর্ত বিভাগের পক্ষ থেকে নতুন করে একটি প্লান নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, নতুন এ প্লানটি এ বছরের মধ্যেই সম্পূর্ণ হবে। তা হলে বিশুদ্ধ পানি সংকট কেটে যাবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল