গাজীপুরের কাপাসিয়ায় সূর্য্যনারায়নপুর গ্রামে স্বজনদের সাথে ভাড়া থেকে গার্মেন্টে কাজ করতো সাবিনা। ২০১৯ সালের ২৫ জুন নতুন বাসা খোঁজার জন্য বের হয়। রাতে না ফেরায় তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। দুইদিন পর ২৭ জুন সাবিনার মৃতদেহ জেলার শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ী বাজারের একটি পুকুরের পানিতে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। ওইদিনই নিহতের খালা ফুলেমা খাতুন সাথী অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে শ্রীপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
শ্রীপুর থানা ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-২ দীর্ঘদিন মামলাটি তদন্ত করলেও হত্যার রহস্য উদঘাটনে করতে না পারায় মামলাটির তদন্তভার পায় গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে পিবিআই জানালো, খালুর নির্দেশেই সাবিনাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ সিমেন্টের পিলারে বেঁধে পানিতে ডুবিয়ে দেয়া হয়।
ভিকটিম সাবিনা (২০) ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া থানার জোকা গ্রামের লাল মিয়া মেয়ে। সে খালা, খালু ও নানীর সাথে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সুর্য্যনারায়নপুর গ্রামের কামালের বাড়িতে ভাড়া থেকে স্থানীয় গার্মেন্টে কাজ করতো।
এ ঘটনায় গ্রেফতার মো. তুলা মিয়া (২৪) ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া থানার দর্শা-মোড়লবাড়ি গ্রামের মো. আব্দুল ছালামের ছেলে। তাকে বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) ভোরে ময়মনসিংহের ভালুকার ভরাডোবা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তুলা মিয়া হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান।
গাজীপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান জানান, ভিকটিম সাবিনা তার খালা, খালু এবং নানীর সাথে কাপাসিয়া উপজেলার সূর্য্যনারায়নপুর গ্রামে বসবাস করে স্থানীয় একটি গার্মেন্টে চাকরি করতেন। সাবিনার আগে ৪টি বিয়ে হয়েছে, এছাড়াও তার বিভিন্ন ছেলেদের সাথে সম্পর্ক ছিল এবং বিভিন্ন ছেলেদের সাথে ঘুরে গভীর রাতে বাসায় আসতো। এনিয়ে সাবিনার সাথে খালু সুজনের প্রায় বাকবিতন্ডা হতো। এলাকার সাধারণ মানুষ বিষয়টি নিয়ে খালু সুজনকে বিভিন্ন কথা বলে বিচার দিতো। ঘটনার দিন এক বন্ধুর সাথে সাবিনা ঢাকায় বেড়াতে যায় এবং রাতে দেরিতে ফেরায় সাবিনার খালুর বাবা সাবিনাকে গালিগালাজ করে। এসময় সাবিনা উত্তেজিত হয়ে খালুর বৃদ্ধ বাবাকে চড় মারে। পরে বাবাকে চড় মারায় খালু সুজন সাবিনাকে লাঠি দিয়ে মারধর করলে সাবিনার হাত ভেঙ্গে যায়। সাবিনা দৌঁড়ে পাশের কক্ষের অপর ভাড়াটিয়া তুলা মিয়ার রুমে যায়। এসময় তাকে মারধর করায় থানায় গিয়ে মামলা করবে বলে সাবিনা বাসা থেকে বের হয়ে যায়। রাতে সাবিনা বাসায় না ফেরায় রাত ১১টায় তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা রিসিভ না করায় খালু সুজন ও তুলা মিয়াসহ অন্যান্যরা সাবিনাকে খুঁজতে বাসা থেকে বের হয়। এক পর্যায়ে তারা শ্রীপুর উপজেলা রাজাবাড়ী বাজারে সাবিনার সন্ধান পেলে তাকে বাসায় ফিরতে বললে সে অস্বীকৃতি জানায় এবং খালুর বিরুদ্ধে মামলা করার কথায় অনড় থাকে। এরপর খালু সুজন ও তুলা মিয়াসহ অন্যরা সাবিনাকে কৌশলে রাজাবাড়ী বাজারের পেছনে পুকুর পাড়ে নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ সিমেন্টের পিলারে বেঁধে পানিতে ডুবিয়ে দেয়।
গাজীপুর পিবিআই’র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, পিবিআই মামলাটির তদন্তভার পাওয়ার পর মামলার নথিপত্র, পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মামলার ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামি তুলা মিয়াকে গ্রেফতার করলে মামলার রহস্য উৎঘাটন হয়। সাবিনা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করলে আসামিকে বৃহস্পতিবার (৮ডিসেম্বর) আদালতে সোপর্দ করা হয়। আসামি নিজেকে মামলার ঘটনার সাথে জড়িয়ে অপর আসামিদের নাম উল্লেখ করে ভিকটিম সাবিনা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল