কুমিল্লার দাউদকান্দিতে এক গৃহবধূকে হত্যার পর থানায় জিডি করে শ্বশুরের পরিবার। লাশ ফেলা আসা হয় দূরের গ্রামের কবরস্থানে। নিহত গৃহবধূ রুমা বেগম (৩৫) উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের মো. দুলাল মিয়ার মেয়ে এবং একই উপজেলার ভিটি চারীপাড়া গ্রামের প্রয়াত মোস্তফা মিয়ার স্ত্রী। ভাসুর জীবন মিয়ার স্ত্রী জ্যোৎস্না আক্তার কুমিল্লার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যার এইসব তথ্য জানান।
মূলত সন্তানকে শাসন করা নিয়ে একটি ঘটনার জের ধরে ভাসুর সাফায়েত, ভার ভাগিনা আল-আমিনসহ শ্বশুর বাড়ির কয়েকজন মিলে রুমাকে হত্যা করে বলেও তিনি জানান। মঙ্গলবার পিবিআই, কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো.মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে জ্যোৎস্না আক্তার বলেন- ঘটনার দিন সকালে ডাল রান্না না করায় ছেলে সিয়াম তাঁর মা রুমা আক্তারের সঙ্গে রাগ করে। এতে বিরক্ত হয়ে মা তাঁর ছেলেকে চড় দেন। ক্ষিপ্ত হয়ে শাশুড়ি পুত্রবধূ রুমাকে চড় দেন; এক পর্যায়ে রুমাও শাশুড়িকে আঘাত করেন। এমন সময় ভাসুর সাফায়েত ওই নারীকে মারধর করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ঘটনাস্থলে মারা যান। শাশুড়ি ও অন্য পুত্রবধূরা রুমার লাশ ঘরের মধ্যে লুকিয়ে রাখেন। রাতে সাফায়েত ও ভাগিনা আল-আমিন লাশ ফেলে আসেন। নিজেদের বাঁচাতে সাফায়েত ভিকটিমের বাবার বাড়ি গিয়ে বলেন- রুমা কিছু না বলে কোথাও চলে গেছেন। পরদিন নিহতের শাশুড়িকে থানায় নিয়ে জিডি করান সাফায়েত।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই, কুমিল্লার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাফায়েত আহাম্মদ বলেন, প্রায় ১১ বছর আগে নিহত রুমার স্বামী মারা গেছেন। একমাত্র সন্তান সিয়াম হোসেন (১৩) দিকে চেয়ে তিনি শ^শুর বাড়িতে থাকতেন। ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বারপাড়া এলাকার মানিককান্দি ভ‚ঁইয়া বাড়ির কবরস্থান থেকে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহ দেখে পুলিশ সদস্যরা বুঝতে পারেন- ওই নারী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। তবে প্রাথমিকভাবে পরিচয় না মেলায় স্থানীয় গ্রাম পুলিশের এক সদস্য বাদী হয়ে এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। স্বজনরা বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পেয়ে ওই নারীকে শনাক্ত করেন। ঘটনার পর থেকেই নিহতের বাবার পরিবারের সন্দেহ শ^শুর বাড়ির লোকেরাই তাকে খুন করে মরদেহ ফেলে এসেছে। তিন মাস পর মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), কুমিল্লা।
পুলিশ সুপার মো.মিজানুর রহমান জানান, লাশ উদ্ধারের দুইদিন আগে ২১ নভেম্বর সকালে ওই নারীকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন হত্যা করে। রাতে মানিককান্দি ভুঁইয়া বাড়ির কবরস্থানে ঝোপের মধ্যে ফেলে আসে। এ ঘটনায় গত বছরের ২৪ আগস্ট ভাসুর সাফায়াতকে গ্রেপ্তার করা হলেও তিনি মুখ খোলেননি। তবে তার কথাবার্তা সন্দেহজনক মনে হয়েছে। সবশেষ সোমবার (২৩ জানুয়ারি) ভোরে বিধবা নারীর শ্বশুর বাড়ি থেকে আরেক ভাসুর জীবন মিয়ার স্ত্রী জ্যোৎস্না আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/এএম