চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনায় আজ মধ্যরাত থেকে দু’মাস অভয়াশ্রম চলাকালে জাটকাসহ (ইলিশের পোনা) সকল প্রকার মাছ ধরা সরকার নিষিদ্ধ করেছে। এ সময় জেলার ৪৪ হাজার ৩৫ জন নিবন্ধিত জেলেদেরকে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল (৪ মাস) খাদ্য সহায়তা হিসেবে ৪০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স সচেতনতামূলক প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে।
জেলা মৎস্য বিভাগ জানান, ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি ও জাটকা রক্ষায় চাঁদপুর, শরীয়তপুর, লক্ষীপুর, বরিশাল, ভোলার পদ্মা-মেঘনাসহ দেশের ৬টি নদী অঞ্চলে এই অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে। এ সময় নদীতে জাল দিয়ে সকল প্রকার মাছ ধরা নিষিদ্ধ। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে কার্যক্রম শুরু হবে।
চাঁদপুর সদর, হাইমচর, মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলায় পদ্মা-মেঘনার ৭০ কিলোমিটার এলাকা অভয়াশ্রমের অন্তর্ভুক্ত। অভয়াশ্রম চলাকালে এই চার উপজেলার প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক জেলে বেকার হয়ে পড়বে। সরকার নিবন্ধিত ৪৪ হাজার জেলের মধ্যে ৪০ হাজার জেলেকে প্রতিমাসে ৪০ কেজি করে চাল বরাদ্দ করেছে। গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা রক্ষায় কম্বিং অপারেশন সমন্বয় করে এই চার মাসের বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের চাল বিতরণ চলছে। জানা গেছে, অধিকাংশ জেলে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে জাল নৌকা মেরামত করেছে। মাছ ধরা বন্ধ হলে তারা কিভাবে তাদের কিস্তি প্রদান করবে। এ নিয়ে তাদের মাঝে রয়েছে শঙ্কা।
সরেজমিনে চাঁদপুর সদরের বিষ্ণুপুর, কল্যাণপুর, আনন্দবাজার, টিলাবাড়ী, পুরাণবাজার ও দোকানঘর গিয়ে দেখা গেছে, জেলেরা তাদের নৌকা ডাঙ্গায় উঠাচ্ছে। আবার অনেকে নৌকা এবং ইঞ্জিন মেরামত করছে। নদীতে অভিযান দিলে আমাদের জেলেরা মাছ ধরতে নদীতে নামে না। কিন্তু জেলার বাহিরের জেলেরা এসে জাটকা ধরে নিয়ে যায় এবং আমাদের উপর দোষ চাপায়।
চাঁদপুর কান্ট্রি ফিসিং বোট মালিক সমিতির সভাপতি শাহ আলম মল্লিক জানান, আমরা আড়ৎদার ও বিভিন্ন এনজি থেকে ঋণ নিয়ে জাল নৌকা মেরামত ও জেলেদের অগ্রিম টাকা দাদন দিয়ে থাকি। এছাড়া অনেক জেলে সাংসারিক প্রয়োজনেও ঋণ নিয়ে থাকে। অভয়াশ্রম চলাকালে কিস্তির টাকা পরিশোধে তারা চরম বেকায়দায় পড়ে। এছাড়াও বরাদ্দ না আসায় নিবন্ধিত ৪ হাজার জেলের জন্য দ্রুত চাল সহায়তা বরাদ্ধ প্রদানের জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানান। পাশাপাশি অভয়াশ্রমকালে কিস্তি আদায় বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা টাস্কফোর্সের সভাপতি ও জেলা প্রশাসকের নিকট দাবি জানান।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, পদ্মা-মেঘনার ৭০ কিলোমিটার এলাকা অভয়াশ্রম বাস্তবায়নে টাস্কফোর্সের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী কর্মকর্তা, নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ড, নৌ-বাহিনী ও মৎস্য বিভাগ দু’মাস নিয়মিত নদীতে অভিযান পরিচালনা করবে। আশা করছি, জেলেরা নিজেদের সম্পদ বিবেচনা করে জাটকা আহরণ থেকে বিরত থাকবে।
বিডি প্রতিদিন/এএ