সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী আম্রপালি আম বাজারজাতকরণের আরো কয়েকদিন বাকি থাকলেও গরমে আমে পাক ধরায় নওগাঁর সাপাহারে এখন থেকেই ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় সরগরম হয়ে উঠেছে আমের হাট। দেশের উত্তরাঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বড় আমের হাট বসে নওগাঁর সাপাহারে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা আম ব্যাবসায়ীরা অন্যান্য বছরের মতো এবারও এসেছেন আম কিনতে সাপাহারে। নওগাঁর বরেন্দ্র এলাকা সাপাহারের আম মিষ্টি হওয়ায় দেশের সর্বত্রই এই আমের চাহিদা ও রয়েছে অনেক।
প্রতিদিন সকাল ৮টায় হাটে ভ্যান, ট্রলি, পিকআপসহ নানা ভাবে আসা আমের বেচাকেনা চলে এই হাটে। সাপাহার সদরের জিরো পয়েন্ট থেকে পাশের পত্নীতলা উপজেলার দিবরের মোড় পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ হয় এই হাট। তবে এই বছর লম্বা খরা ও তীব্র তাপদাহের প্রভাবে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বিভিন্ন জাতের আমের সাথে আম্রপালি আমও আসছে বাজারে। এবার সাপাহার সদরে প্রায় ২৫০টি আম আড়তে আমের বেচাকেনা হচ্ছে বলে আম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কার্তীক সাহা জানিয়েছেন। প্রতিদিন এসব আড়ৎগুলো থেকে ৫ থেকে ৮ হাজার মণ আম ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন স্থানে। তবে চলতি মাসের ২২ তারিখের পর এই বেচাকেনার পরিমাণ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন এখনকার আম ব্যাবসায়ী ও ক্রেতারা। এছাড়াও উপজেলার খঞ্জনপুর মোড় ফুরকুটির মোড়, উচাডাঙ্গা মোড়, নিশ্চিন্তপুর মোড়, হরিপুর মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় আরও প্রায় ৩৫০টি আড়তে আমের বেচাকেনা চলছে। যার ফলে কর্মসংস্থান হচ্ছে কয়েক হাজার বেকার মানুষের।
আম বিক্রেতা আব্দুর রহিম জানান, এবার কীটনাশকের মূল্য বৃদ্ধিসহ অন্য সবকিছুর খরচের তুলনায় আমের বাজারে আমের দাম অনেক কম। এছাড়া আমের ওজনের ক্ষেত্রে ৪৫ কেজি থেকে ৪৮ কেজিতে এক মণ হিসেবে কেনাবেচার কথা থাকলেও আম আড়তদাররা আম চাষিদের জিম্মি করে ৫০-৫৩ কেজিতে এক মণ হিসেবে পরিমাপ করাচ্ছেন। সঠিক নিয়মে নির্ধারিত ওজনে আম কেনাবেচার জন্য আম চাষিরা বাজার মনিটরিং কমিটি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। সাপাহার বাজার আম চাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান জানান, আমের ওজনের বিষয়ে কিছু বৈষম্য লক্ষ্য করা গেছে। দ্রুতই বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা করা হবে এবং প্রশাসনিকভাবে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঘোষণা অনুযায়ী, এবার গুটি (স্থানীয়) আম ২২ মে পাড়া শুরু হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে গোপালভোগ ২৮মে, খিরসাপাত/হিমসাগর ২জুন, নাক ফজলি ৭জুন, ল্যাংড়া/হাঁড়িভাঙা ১০জুন, ফজলি ২০জুন, আম রুপালি ২২জুন এবং আশ্বিনা/বারি-৪/গৌড়মতি/কাটিমন ১০জুলাইয়ের মধ্যে হারভেস্টিং শুরু হবে। আর এই সময়ের মধ্যে বাগান থেকে আম সংগ্রহ করবেন আম চাষিরা। বৃহস্পতিবার সাপাহার সদর আম হাট ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে ল্যাংড়া আম ১১০০-১৩০০, নাকফজলি ১৭০০-২০০০, খিরসাপাত ২০০০-২৫০০, এবং আম্রপালি ২০০০-২৭০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল