সরাদেশে মা ইলিশ রক্ষা অভিযান চলছে। পদ্মা নদীর চাঁদপুর মোহনা থেকে নড়িয়ার সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় মা ইলিশ রক্ষায় অভিযান পরিচালনা করছে ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণ আদালত, নদীতে অভিযান, নদীর তীরে চেকপোস্ট বসানোসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। কিন্তু কোনোভাবেই জেলেদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। নদীতে জেলেরা ভয়ংকর সন্ত্রাসী আচরণ করছে প্রশাসনের সাথে। সুযোগ পেলেই লাঠিসোঁটা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে অভিযানে থাকা সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের উপরে।
জেলেদের অভিযোগ, প্রতিদিন নদীতে মাছ ধরতে ৫ হাজার টাকা দেই পুলিশকে। এরপরও আমাদের হয়রানি করছে তারা। ধরে নিয়ে জেল জরিমানা করছে।
এদিকে, অভিযানে নৌ পুলিশ ও কোস্ট গার্ডের সদস্যদের যথাযথ সহযোগিতা পাচ্ছে না উপজেলা প্রশাসন। এ নিয়ে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসনের ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে উপজেলা প্রশাসনের গোপন সূত্রগুলো। নৌ পুলিশের এক এসআইয়ের বিরুদ্ধে নৌপুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে বলে দাবি করেছে ওই সূত্র। ২৩ অক্টোবর ভেদরগঞ্জ উপজেলা আইন শৃঙ্খলা সভায় মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের সার্বিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জেলেদের ভয়ংকর সন্ত্রাসী হয়ে ওঠার পেছনে দুইজন ইউপি চেয়ারম্যানের নেপথ্য ইন্ধনের অভিযোগ উঠেছে। তাদের ছত্রছায়ায় থেকেই জেলেরা মাছ ধরতে নদীতে নামছে এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে পুরো উপজেলাতে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির মোল্যা তার বক্তব্যে বলেছেন, জেলেরা বলছে পুলিশকে টাকা দিয়ে নদীতে নামছে তারা। এই পুলিশ কারা নৌপুলিশ না থানা পুলিশ আমরা তা জানিনা। যদি কেউ এ জাতীয় অপরধের সাথে জড়িয়ে থাকেন- তাদেরকে সতর্ক করা হচ্ছে। মা ইলিশ রক্ষা অভিযান সফল করতে আমরা বদ্ধপরিকর।
সরেজমিনে পদ্মা নদীতে কথা হয় জসিম, কালা মিয়া, কামাল, লিল চাঁনসহ বেশ কয়েকজন জেলের সাথে। তারা জানায়, আমাদের আরৎদাররা প্রতিদিন নদীতে মাছ ধরতে পুলিশকে নৌকা প্রতি ৫ হাজার টাকা দেয়। আমি মাছ পাই বা না পাই- আমাকে ওই টাকা পরিশোধ করতে হবে। নদীতে যারা আসে তারা সবাই এই টাকার ভাগ পায়। এরপর আবার কেন আমাদেরকে নির্যাতন করবে? এমনিতেই মাছ পাইনা, তারপর পুলিশ নির্যাতন করছে।
উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়নের মোল্লা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, শতশত নৌকা নদীতে জাল ফেলে অপেক্ষা করছে। প্রকাশ্যে মাছ বেচাকিনা করছে আরৎদাররা। জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীদের অভয় অরণ্যে পরিনত হয়েছে মোল্যা বাজার।
নরসিংহপুর নৌ পুলিশ ফাঁরির ইনচার্জ মো: নাজমুল ইসলাম বলেন, আমরা জেলেদের নিয়ে কাজ করি। অভিযানে অনেক জেলে আটক হয়েছে। তাই ক্ষিপ্ত হয়ে জেলেরা টাকা পয়সার অভিযোগ তুলছে। নৌপুলিশের সাথে কোন আরৎদার বা জেলের আর্থিক কোন সম্পর্ক নেই। এসব অভিযোগ মিথ্যে ও ভিত্তিহীন। প্রশাসনকেও আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছি। কেন আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বুঝতে পারছি না।
ভেদরগঞ্জ উপজেলার তারাবুনিয়া কোস্টগার্ড ইনচার্জ এর মোবাইল নাম্বারের বারবার ফোন করেও কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, জেলেরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সুযোগ পেলেই আক্রমণ করছে। জেলেদের হামলা মোকাবেলা করে আমরা অভিযান সফল করতে জিরো টলারেন্স নীতিতে এগুচ্ছি। প্রতিদিন মাছ ধরার সাথে জড়িত জেলেদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করে যাচ্ছি।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মা ইলিশ রক্ষার্থে প্রতিদিন নদীতে অভিযান চলমান রয়েছে। মাঝে মাঝেই জেলেরা আক্রমণাত্মক আচরণ করছে। উত্তর তারাবুনিয়ার মোল্যা বাজারে আমি নিজেই অভিযান পরিচালনা করেছি। সেখানে শতশত জেলে একত্রিত হয়েছিল তাদেরকে অভিযানের বাকি সময়ে নদীতে না নামতে উৎসাহিত করেছি। তারা ওয়াদা করেছে বাকি সময়ে নদীতে নামবে না। মোল্যা বাজারে নিষিদ্ধ সময়ে মাছ বেছাকেনায় জড়িতদের কঠোর হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। জেলেরা পুলিশকে টাকা দিয়ে নদীতে নামে এমন অভিযোগ করেছে আমার কাছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে স্ব স্ব ডিপার্টমেন্টকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হবে।
বিডি প্রতিদিন/এএ