শস্যভান্ডার হিসাবে পরিচিত বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা। এই উপজেলায় ১৮ হাজার ৫ শত হেক্টর জমিতে কৃষকরা আলু উৎপাদন করেছে। এর মধ্যে ১৫০ হেক্টর জমিতে সান-সাইন জাতের আলুতে লেট ব্লাইট রোগে আক্রান্ত হওয়ায় কৃষক চিন্তায় পড়েছেন।
উপজেলার বিহার, ধামাহার, গুজিয়া, মোকামতলা, বুড়িগঞ্জ, আটমুল, নয়াপাড়া গ্রামের কৃষকরা জানান, গত কয়েকদিন ধরে বৈরী আবহাওয়ার কারণে আমাদের আলুর গাছে লেট ব্লাইট রোগ দেখে দিয়েছে। এর ফলে আলু গাছে পচন ধরায় আমরা শংকিত হয়েছি। এ জাতের আলু ৭০ দিনের ফসল অথচ আলুর গাছের বয়স ৪০ থেকে ৪৫ দিন হচ্ছে। ঔষুধ স্প্রে করেও কোন ফল পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা কৃষকরা দুশ্চিন্তাই পড়েছি। আলু বীজ, সারসহ প্রতি বিঘায় প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। লেট ব্লাইট রোগের কারণে কৃষকদের লোকসান গুনতে হবে।
জানা যায়, গত মৌসুমে বগুড়ায় ৫৩ হাজার ২১৫ হেক্টর জমি থেকে ১২ লাখ ২৪ হাজার টন আলু উৎপাদন হয়েছে। আলু উৎপাদনের ক্ষেত্রে উদ্বৃত্ত জেলা ধরা হয় বগুড়াকে। আলু উৎপাদনের পর সারাবছর পর্যায়ক্রমে বিক্রির জন্য ৩৭টি হিমাগার গড়ে উঠেছে। গত বছরের অক্টোবরে আলু চাষের মৌসুমের শুরুতে দাম বৃদ্ধি নিয়ে ক্রেতারা বিপাকে পড়ে যান। আলুর দাম বৃদ্ধির কারণে অনেক কৃষকই বেশি দাম পাওয়ার আশায় একটু আগেই আলু চাষ শুরু করেন। নতুন এই আলু বাজারে আসতে শুরু করলে দাম ভালো পাবেন, এই আশায় চাষবাস দ্রুত হলেও কুয়াশায় আলু ক্ষেত রোগ বালাই এর মাঝে পড়েছে।
শীত আর ঘন কুয়াশায় বগুড়ায় আলুর ক্ষেতে রোগ বালায় দেখা দিচ্ছে। বগুড়ার বিভিন্ন মাঠে মাঠে আলুর গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। পাতা ও কান্ড হলুদ হয়ে পচন ধরে যাচ্ছে। কৃষকরা জানান, চাষের শুরুতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর জমিতে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। তবে গাছ পুষ্ট হবার পর এখন ঘন কুয়াশায় লেটব্লাইট রোগে গাছ নষ্ট হচ্ছে। অনেক স্থানেই গাছের পাতা কুকড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষি বিভাগের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে জমিতে ছত্রাকনাশক স্প্রে করে কিছুটা প্রতিকার পেলেও কুয়াশা তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর লেট ব্লাইট রোগ হলে জমির অপরিপক্ব আলু তুলে ফেলে দেয়ার কোন বিকল্প থাকবে না।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান ফরিদ জানান, শীতকালীন ফসলে অতীতে রোগ বালাই ছিল এখনও আছে। তবে এ বছর আলু ক্ষেতে লেট ব্লাইট রোগ বা পাতা পচন রোগ দেখা দিয়েছে সে বিষটি মাথায় রেখে কৃষি বিভাগ কাজ করছে। বগুড়ার ১২টি উপজেলার গ্রামে গ্রামে আলু ক্ষেতে রোগের বিষয়ে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ, উঠান বৈঠক করা হচ্ছে। চলমান কর্মসূচিতে কৃষকদের সচেতন করার জন্য নানা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত বগুড়ায় লেট ব্লাইট রোগটি স্বাভাবিক রয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে আরো স্বাভাবিক হবে।
বিডি প্রতিদিন/এএম