বিগত কয়েক বছর ধরেই প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগে হাওরবাসী। নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলের কৃষকদের দুর্ভোগ যেন কাটছেই না। গেল বছর খড়ায় নিলো। আগের বছর বন্যায়। এমন করে প্রায় প্রতিবছর নতুন করে স্বপ্ন বুনে আবারও ফসল ফলান। চিটায় ধান নষ্ট হওয়ায় ২৮ ধানের পরিবর্তে অনেকেই নতুন জাতের বোরা আবাদ করেছে এবার। যে কারণে ধান উঠতে কিছুটা সময় নিচ্ছে।
এদিকে কয়েক বছর ধরেই ঈদের সময় ধান কাটা শুরু হয়। এবার দেখা গেছে ধান পাকবেই ঈদের পরে। যে কারনে হাওরের কৃষকদের একমাত্র আয়ের উপর নির্ভরশীল ধান জমিতে থাকায় ঈদসহ পহেলা বৈশাখের আমেজ ফিকে। শঙ্কায় রয়েছেন যেন কোন দুর্যোগ না হয়। ফসল ঘরে উঠতে উঠতে কোন ধরনের দুর্যোগে পড়লেই সর্বনাশ।
হাওর ঘুরে দেখা গেছে, নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরীর বিভিন্ন হাওরের বিস্তৃত মাঠে দুলছে সোনালী ফসল। আয়ের একমাত্র উৎস্য এই বোরো ফসলে ঝুলে আছে কৃষকদের ভাগ্য। বছরে ছয়মাস পানি থাকায় হাওরের মাঠে একটি মাত্র ফসল হয় বোরো ধান। যা দিয়ে কৃষকের খুড়াকিসহ কৃষক সন্তানদেন পাড়াশোনা মিলে পুরো বছরের চলার অর্থ জোগান হয়। কিন্তু গত তিন বছর ধরে নানা দুর্যোগে রয়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা।
গোবিন্দশ্রী গ্রামের রমজান আলী বলেন, ২০২২ সনে আগাম বন্যায় কাঁচা ধান কেটে ক্ষতিতে পড়েছেন। পরেরবার দুবছর ধরে খড়ায় ধানে চিটা হয়ে ফলন কমে গেছে। তাই এবার কৃষকরা ভিন্ন জাত লাগিয়েছেন। ফলে দেরীতে পাকছে ধান। যে কারণে এবারও ঈদের আগে ফসল না উঠায় তাদের ঈদ আমেজ ফিকে। নতুন জামা কাপড় দিতে পারবে না সন্তানদের। পুরনো কাপড়ে কাটবে ঈদ। তারপরও তাদের আশা ফসলটা যদি ভালো হয় আগামী দুবছর চলবে খাবার খরচ।
স্কুল পড়ুয়া কৃষকের সন্তান সাব্বির মিয়া জানায়, ধানের উপর নির্ভর তারা। এবার ধান এখনো উঠে নাই। তাই পুরনো কাপড়ে ঈদ করবে। মন কিছুটা খারাপ হলেও জানে তারা আর কোন উপায় নেই। বাবার সাথে জমিতে এবার ধান রোপন করেছে সেও। এখন অপক্ষোয় কবে কাটবে।
কিন্তু এবারও যদি কোন দুর্যোগে পড়ে তাহলে আর দুঃখের সীমা থাকবে না এখানকার কৃষক জনগোষ্টির। যে কারণে নিবীড় পরিচর্চায় ধানের গাছ পাহাড়া দিচ্ছেন এখানকার কৃষকরা। শেষ বেলাতেও পোকা দমনের স্প্রে করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে।
বিডি প্রতিদিন/এএম