বিগত সরকার পতনের পর ঠিকাদার গা ঢাকা দেওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে পাবনার গুরুত্বপূর্ণ টেবুনিয়া-হামকুড়িয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের সংস্কার কাজ। দীর্ঘদিন বেহাল অবস্থায় থাকায় ঢাকায় যাতায়াতের বিকল্প এই মহাসড়কের ১৮ কিলোমিটারের মধ্যে সাড়ে ১২ কিলোমিটার সংস্কার কাজ শুরু হলেও সরকার পতনের পর ঠিকাদার গা ঢাকা দেওয়ায় শেষ হয়নি কাজ। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই এলাকার মানুষ।
স্থানীয় সূত্র বলছে, ২০০৯ সালে পাবনার চাটমোহর ও নাটোরের গুরুদাসপুরের চলনবিলের বিচ্ছিন্ন দুই প্রান্তের সংযোগ স্থাপন করে নির্মাণ করা হয় আঞ্চলিক মহাসড়ক। পরে সড়কটি পাবনা সদর, আটঘরিয়া, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়াসহ কয়েকটি উপজেলার রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগের বিকল্প পথ সৃষ্টি করে। এতে কৃষি ও মৎস্য সম্পদ নির্ভর অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন দেখা দেয়। এ পথে ঢাকা যেতে এক-দেড় ঘণ্টা সময় কম লাগায় দিন দিন এর ব্যবহার বেড়েছে। কিন্তু সড়কটির প্রয়োজনীয় সংস্কার ও প্রশস্থকরণের অভাবে যাত্রী-চালকদের ভোগান্তি বেড়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, চাটমোহরের নতুন বাজার থেকে হান্ডিয়াল বাজার পর্যন্ত সড়কের বেহাল দশা। সংস্কারের জন্য চাটমোহরের নতুন বাজার এলাকা থেকে কয়েক কিলোমিটার সড়কের পিচ খুলে ফেলা হয়েছে। কিন্তু সেগুলোর সংস্কার কাজ শুরু না হওয়ায় সড়কে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কে প্রচুর ধুলাবালি উড়ছে। এতে সড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে। পিচ উঠে সড়কের পুরো অংশজুড়ে শত শত গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
ওই সড়কে চলাচল করা মাইক্রোবাস চালক সাহাব উদ্দিন বলেন, রাস্তার অবস্থা খারাপ। আগে কোনমতে কষ্ট করে চলাচল করলেও সংস্কার শুরুর পর তা অসম্ভব হয়ে পড়েছে, এখন কাজ বন্ধ। কবে শুরু হবে তা কে জানে। ভাঙাচোরা রাস্তায় কয়েকবার আমার গাড়ির চাকা নষ্ট হয়েছে।
ট্রাকচালক আবু হানিফ জানান, এ রাস্তা দিয়ে সিরাজগঞ্জ হয়ে ঢাকায় যাওয়া সহজ। প্রায় ৫০ কিলোমিটার সড়ক কম হওয়ায় সময় ও তেলও কম লাগে। এজন্য এ রাস্তাটি ব্যবহার করি। কিন্তু সড়কের যে বেহাল দশা এতে রাস্তাটি আর ব্যবহার করা যাবে বলে মনে হচ্ছে না।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, চাটমোহরসহ আশপাশের জেলা-উপজেলার লোকজন সড়কটি ব্যবহার করে। হান্ডিয়াল, নিমাইচড়া, ছাইকোলাসহ চাটমোহরের সবগুলো ইউনিয়নের মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। মাছসহ কৃষিপণ্য নিয়ে ঢাকায় ও উত্তরবঙ্গে সহজে যায় এখানকার মানুষ।
সওজ কর্তৃপক্ষ জানায়, চলতি বছরের জুলাই মাসে ১৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২ দশমিক ৫ কিলোমিটার সড়ক মেরামতের কাজ শুরু হয়। কাজ পায় সিরাজগঞ্জের তূর্ণা কনস্টাকশন। আট মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ঠিকাদার পালিয়ে থাকায় কাজের নির্ধারিত সময়ের চার মাস পেরিয়ে গেলেও মাত্র ১০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মনসুর আহমেদ বলেন, ঠিকাদার মো. আজাদ পালিয়েছেন কিনা সেটা বলতে পারব না। তবে তার সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। দ্রুতই কাজ শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন। অন্যথায় আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ