বাড়ি-ঘর নির্মাণ করায় ইতিমধ্যে তিনটি ব্রিজ-কালভার্ট বন্ধ হয়ে গেছে। আরো একটি কালভার্ট বন্ধ করে বাড়ি-ঘর নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। এটি বন্ধ হলে দুই টি বিলের প্রায় সাত হাজার একর জমিতে পানির অভাবে চাষাবাদ বন্ধের আশংকা করছেন স্থানীয় কৃষকরা।পানি প্রবাহে এভাবে বাধার সৃষ্টি করলে বিলে স্থায়ী জলাবন্ধতা দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে বিল দুইটিতে চাষাবাদ একবারেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এমন অবস্থা গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের উত্তর পাড়া গ্রামের দুটি বিলে।
ব্রিজ-কালভার্ট রক্ষায় গোপীনাথপুর গ্রামের পক্ষ থেকে স্থানীয়রা গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক থেকে একটি পিচঢালা সড়ক গোপীনাথপুর উত্তরপাড়া গ্রামের দিকে চলে গেছে। এ সড়কের প্রথম মোড়ে একটি বক্স কালর্ভাট রয়েছে। এ কালভার্ট দিয়ে বিলে পানি প্রবাহিত হয়। কালভার্টেও দক্ষিণপাশে মাটি ফেলে একটি অংশ ভরাট করা হয়েছে। তারও দক্ষিণে জমির মালিক শহিদ মিয়া বালু দিয়ে আড়া-আড়ি বাঁধ দিয়েছেনে। এতে কালভার্ট দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন কালভার্টের কোল ঘেঁষে বালু ফেলে তিনি ভরাট করবেন। এখানে শহিদ মিয়া বাড়িঘর নির্মাণ করবেন। তার পাশের জমির মালিক লিয়াকত খাঁ বাঁশ দিয়ে জমি ঘিরেছেন। এখন বালু ফেলে জমি ভরাট করবেন। তিনিও সেখানে বাড়িঘর নির্মাণ করবেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়া ওই সড়কের রাজ্জাক শরীফ, লায়েক আলী মিয়া ও তারেক মিয়ার বাড়ির সামনের ব্রিজ কালভার্ট বাড়িঘর নির্মাণ করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
উত্তর পাড়া গ্রামের বাসিন্দা মশিউর রহমান বলেন, নিম্নজলা ভূমি বা বিল বেষ্টিত গ্রাম গোপীনাথপুর উত্তর পাড়া। যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের জন্য ১৯৮৪ সালে এ গ্রামের মধ্য দিয়ে ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ করে সরকার। সড়কের উত্তর পাশে গোপীনাথপুর উত্তপাড়া ও ধলগ্রাম বিল। এ বিলে সাড়ে ৩ হাজার একর ফসলী জমি। আর সড়কের দক্ষিণ পাশে গোপীনাথপুর উত্তপাড়া ও কাজীপাড়া বিল। এ বিলেও সাড়ে ৩ হাজার একর ফসলী জমি রয়েছে। বিল ২টিতে চাষাবাদের পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে সড়কে প্রয়োজনীয় ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। বিলের জমিতে সারাবছর ধান, পাট, সরিষা,তিল, মসুর, খেসারী সহ বিভিন্ন ফসল ফলে। এ ফসল দিয়ে গ্রামের ৮০ ভাগ পরিবার জীবিকা নির্বাহ করেন।
ওই গ্রামের কৃষক শাহ আলম মোল্লা বলেন, সড়ক নির্মাণের আগে গ্রামের বাড়িগুলো বিলের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। তখন বর্ষায় নৌকায় ও শুকনা মৌসুমে হেটে বাড়ি যেতে হত। প্রত্যেক পরিবারে লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।এখন খাল বিলে নৌকা চলে না। তাই সড়কের পাশে অনেকে ব্রিজ কালভার্ট বন্ধ করে বাড়িঘর নির্মাণ করছেন। এতে পানির আভাবে আমরা চাষাবাদ বন্ধের আশংকা করছি। বিলে ফসল না হলে আমাদের জীবন জীবিকা বন্ধ হয়ে যাবে।
উত্তরপাড়া গ্রামের কৃষক কেরামত আলী সরদার বলেন, বাড়িঘর করে আগে তিনটি ব্রিজ কালভার্ট বন্ধ করা হয়েছে। এখন আরো একটি কালভার্ট বন্ধ করা হচ্ছে। এতে দুটি বিলে পানির অভাব বা জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে। এমন অবস্থার সৃষ্টি হলে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যাবে।এতে এ গ্রামের ৮০ ভাগ মানুষ জীবন-জীবিকা হারাবে।সুতরাং কৃষির স্বার্থে ব্রীজ কালভার্ট রক্ষা করতে হবে।
কালভার্টে মাটি ফেলার কথা স্বীকার করে শহিদ মিয়া বলেন, এ রাস্তার রাজ্জাক শরীফ, লায়েক আলী মিয়া ও তারেক মিয়ার বাড়ির সামনের ব্রিজ কালভার্ট বাড়িঘর নির্মাণ করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন আমি আমার পৈতৃক সম্পত্তিতে বাড়িঘর নির্মাণ করব। কালভার্ট আমাদের জমির পাশে পড়েছে।
পাশের জমির মালিক লিয়াকত খাঁ বলেন, আমি গরিব মানুষ। আমার ভাগে সামান্য একটু পৈতৃক জায়গা ভাগে পড়েছে। আমার আর কোন জমি জায়গা নিই। তাই ওই জমিতে আমি বালু ভরাট করে বাড়িঘর করব ।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম রকিবুল হাসান বলেন, একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাস্থলে আমাদের পরিদর্শন টিম যাবে। পরিদর্শন টিমের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/এএ