‘বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক দূষণ রোধকরণ’, এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্ব পরিবেশ দিবস-২০২৫ উপলক্ষে গাইবান্ধায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, সাংবাদিক এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করেন।
রবিবার সকালে টিআইবির অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) গাইবান্ধার আয়োজনে ইয়ুথ এনগেজমেন্ট এন্ড সাপোর্ট (ইয়েস) এবং অ্যাকটিভ সিটিজেন গ্রুপের (এসিজি) সহায়তায় শহরের নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংস্থার (গানাসাস) সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সনাক সভাপতি আফরোজা বেগম লুপু, সনাক সদস্য আনিস মোস্তফা তোতন, শিরিন আকতার, সাংবাদিক উজ্জল চক্রবর্তী, ইটিভির জেলা প্রতিনিধি আফরোজা লুনা ও ইয়েস দলনেতা উম্মে হাবিবা কনা।
মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন গাইবান্ধা পরিবেশ আন্দোলন জেলা শাখার সভাপতি ওয়াজিউর রহমান র্যাফেল ও সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক জনি। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সনাক সদস্য শিরিন আকতার।
সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন গাইবান্ধা শহর বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ঘাঘট লেকের দুইপাড়ে দখলদারদের দখলকৃত জমি ছেড়ে দেওয়া, প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করতে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি, ঘাঘট লেকের দুই ধারে হাঁটার পথ তৈরি করা, মশার উপদ্রব কমাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে বৃক্ষরোধন না করা, অবৈধ বা অনুমোদনহীন ইটভাটাসমূহ বন্ধ করা এবং শহরের জনগণকে সচেতন করার মাধ্যমে ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট এলাকার ডাস্টবিনে ফেলতে আহ্বান জানান।
ইয়েস দলনেতা উম্মে হাবিবা কনা সনাক টিআইবি কর্তৃক অংশীজনের জন্য নিম্নোক্ত সুপারিশসমূহ উত্থাপন করেন।
সুপারিশসমূহ-২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে প্লাস্টিক দূষণমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। সেই ঘোষণা ২০২৫ সালের আইএনসি সভা থেকে প্রদান করতে হবে। ‘ন্যাশনাল থ্রিআর স্ট্রাটেজি ফর ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট’ কৌশলপত্রটি হালনাগাদ ও সংশোধনসহ পরিবেশ সংক্রান্ত বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতির আলোকে একটি আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ, পৃথকীকরণ, পুনঃপ্রক্রিয়াজতকরণের ব্যবস্থাসহ একটি আধুনিক ও কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে পরিবেশ অধিদপ্তর, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভাগুলোর কারিগরি ও আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা-বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং জনসচেতনতা ও প্রচারণামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকরি প্রতিষ্ঠান, উদ্যোক্তা, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষার্থী এবং তরুণসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
প্লাস্টিক শিল্পের জন্য আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি ও অন্যান্য প্রণোদনা হ্রাস করে পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণকে উৎসাহিত করতে হবে। অপ্রাতিষ্ঠানিক প্লাস্টিক পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকারীদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে একটি দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে এবং প্লাস্টিক-সংক্রান্ত অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত থেকে পরিবেশ দূষণ হ্রাস করতে হবে।
সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। বিশেষ করে ‘উৎপাদনকারীর সম্প্রসারিত দায়িত্ব’ সম্পর্কিত নির্দেশিকাটির ব্যাপক প্রচারণা নিশ্চিত করতে হবে।
যত্রতত্র প্লাস্টিক ফেলা বন্ধ এবং পরিবেশ দূষণ রোধে সাধারণ জনগণের মধ্যে প্লাস্টিকের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। নদী, জলাশয় ও পরিবেশের বিভিন্ন উৎসে থাকা প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণসহ পরিবেশ সুরক্ষা কার্যক্রমে নাগরিক উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্লাস্টিক দূষণ ও পরিবেশের ক্ষতিসহ এখাত-সংশ্লিষ্ট অনিয়মের সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই