নওগাঁর নিয়ামতপুরে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে স্বামী মোস্তাফিজুর রহমানের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসাইন এ রায় প্রদান করেন। একইসঙ্গে ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে।
রায় ঘোষণার সময় আসামি মোস্তাফিজুর রহমান আদালতে উপস্থিত ছিলেন। মোস্তাফিজুর রহমান জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার হরিপুর গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দিনের ছেলে। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ইকবাল জামিল চৌধূরী লাকি এবং আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন অমরেন্দ্রনাথ।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালে নওগাঁর মান্দা থানার শ্রীরামপুর গ্রামের আনিছুর রহমান সাকিদারের মেয়ে রাণী বেগমের সাথে মোস্তাফিজুর রহমানের বিয়ে হয়। সেসময় নগদ ৪০ হাজার টাকা, একটি ভ্যান গাড়ি ও একটি সেলাই মেশিন যৌতুক হিসেবে প্রদান করা হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে রিফাত নামে এক ছেলে সন্তান আছে। স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান যৌতুকের দাবিতে প্রায় স্ত্রী রাণী বেগমকে মারধর করতেন। ছেলে রিফাতের এক বছর বয়সে স্ত্রীকে তালাক দেন তিনি।
এরপর সন্তানকে নিয়ে রাণী বেগম বাবার বাড়ি চলে যান। এ ঘটনায় বাবা আনিছুর রহমান বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু নাতী রিফাতের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে আনিছুর রহমান মামলাটি প্রত্যাহার করে পুনরায় মেয়েকে মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে বিয়ে দেন। আবারও মোস্তাফিজুর রহমান ভটভটি কেনার জন্য স্ত্রীকে ৫০ হাজার টাকার জন্য শারীরিকভাবে মারধর শুরু করেন।
২০১৫ সালের ১০ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টায় ঝগড়ার একপর্যায়ে মোস্তাফিজুর রহমান কাঠের খাটিয়া দিয়ে স্ত্রী রাণী বেগমের মাথায় আঘাত করে রক্তাত্ত জখম করে হত্যা করেন। ঘটনার পর স্থানীয় চৌকিদার লুৎফর রহমানের মাধ্যমে জানতে পেরে বাবা আনিছুর রহমান ও তার আত্মীয়স্বজন নিয়ে মেয়েকে দেখতে যান। পরদিন বাবা আনিছুর রহমান বাদী হয়ে নিয়ামতপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলায় দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসাইন আসামি মোস্তাফিজুর রহমানের মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান করেন। একইসঙ্গে অভিযুক্তের ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে।
প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ইকবাল জামিল চৌধূরী লাকি বলেন, মামলায় বাদীপক্ষের ১৪ জন এবং আসামি পক্ষে চারজনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। আদালত আসামি মোস্তাফিজুর রহমানের সর্বোচ্চ সাজা প্রদান করেছেন। এই রায়ের মাধ্যমে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা হয়েছে। অন্যায় করে অপরাধীর কোনো ক্ষমা নাই। আমি মনে করি ভুক্তভোগী পরিবার ন্যায়বিচার পেয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই