ময়লা-আবর্জনা আর ভাসমান হকারে ঠাসা বগুড়া শহরে এবার মৃত্যু ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে উন্মুক্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা। শহরের অধিকাংশ এলাকায় ড্রেন উন্মুক্ত থাকায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। বিষয়টি ছোট করে ভাবার কারণে শহরে মৃত্যু ঝুঁকি বাড়িয়েছে এই উন্মুক্ত থাকা ড্রেনগুলো। শহরে ড্রেনের স্লাব না থাকায় রাতে অন্ধকারে যে কেউ পড়ে গিয়ে আহত হচ্ছেন। বগুড়া পৌরসভা বা জেলার প্রকৌশল বিভাগ এসব বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় ঝুঁকি থেকে যাওয়ায় মৃত্যু অপেক্ষা করছে মোড়ে মোড়ে।
বগুড়া পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, দেশের কয়েকটি সিটি কর্পোরেশনের চেয়ে আয়তনে এবং জনসংখ্যায় বড় বগুড়া পৌরসভা। ২১টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত বগুড়া পৌরসভা প্রায় ৭০ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ৮ লাখের বেশি। নতুন ভোটার নিয়ে ২০২১ সালে ভোটার দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ লাখ ৭৫ হাজার ৮৭০ জন। ‘ক’ শ্রেণীর এই পৌরসভাটি আয়তন বড় হলেও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় অন্যান্য পৌরসভার মতই বরাদ্দ পেয়ে থাকে। বগুড়া পৌরসভায় কাঁচা ও পাকা সড়ক মিলিয়ে আছে ১ হাজার ৩৪০ কিলোমিটার। পৌরসভা এলাকায় কাঁচা ও পাকা ড্রেন রয়েছে ১ হাজার ২১০ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে সড়ক আলো করতে লাইট রয়েছে প্রায় বিশ হাজার। বগুড়া শহরে বৃষ্টি হলেই ড্রেনের পানি উপচে উঠে। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে ভালো ব্যবস্থা না থাকায় দীর্ঘসময় ডুবে থাকছে বগুড়া পৌরসভার বেশ কিছু এলাকা। বৃষ্টিতে জেলা শহরসহ পৌর এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। পানি দ্রুত নেমে যাওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। এর সঙ্গে উন্মুক্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে দুর্ঘটনা ঘটছেই। উন্মুক্ত ড্রেনেজ দেখা যায় শহরের প্রধান সড়ক কাজী নজরুল ইসলাম সড়ক, শেরপুর সড়ক, ঝাউতলা, ফতেহ আলী বাজার, বাদুরতলা, চকযাদু রোড, স্টেশন রোড, মালতীনগর, খান্দার, উত্তর ভাটকান্দি, সাবগ্রাম, ঘুনিয়াতলা, দত্তবাড়ি, ঠনঠনিয়া, উপশহর, চেলোপাড়া, জলেশ্বরীতলাসহ বিভিন্ন এলাকায়। এসব এলাকায় ফুটপাত নির্মাণ করার পরেও মাঝে মাঝে ড্রেনের উপর স্লাব না থাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটছে। এইসব এলাকার সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়ছেন ড্রেনজ ব্যবস্থা উন্মুক্ত থাকায়।
বগুড়া পৌর শহরের একাধিক বাসিন্দারা জানান, এই পৌরসভায় নির্বাচনে একাধিক মেয়র জয়ী হয়ে দায়িত্ব পালন করলেও ড্রেনেজ ব্যবস্থার কোনো উন্নয়ন হয়নি। বৃষ্টি হলেই এখনো শহরের জিরো পয়েন্ট জলবদ্ধতায় ভরে যায়। পানি নিষ্কাশন দ্রুত না হওয়ার কারণে ড্রেনের মধ্যে অনেকেই পড়ে গিয়ে আহত হয়ে থাকেন। ড্রেনের পানি এখনও উপচে শহরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়। পথচারিরা ড্রেনের ময়লা আবর্জনা মাড়িয়ে চলাচল করেন। বিভিন্ন এলাকায় পৌরসভার ময়লা ড্রেনের উপর জমা করে রাখা হয়। সেগুলো আবার বৃষ্টির সাথে ড্রেনের মাঝে চলে যায়। পরিকল্পনা না থাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা অনেক স্থানেই রয়েছে উন্মুক্ত। এসব উন্মুক্ত স্থান দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে অনেকেই ড্রেনের মধ্যে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন।
বগুড়া পৌরসভার বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম জানান, উত্তর ভাটকান্দিসহ বিভিন্ন এলাকায় এখনো আলোর ব্যবস্থা করা হয়নি। অথচ পৌরসভা ট্যাক্স আদায় করছে। ড্রেনের কোনো ব্যবস্থাই করা হয়নি। বৃষ্টি হলে পানি জমে থাকে। পানি নিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। যেটুকু ড্রেন রয়েছে তার উপর ঢাকনা বা স্লাব না থাকায় মাঝে মধ্যেই ড্রেনের মধ্যে সাধারণ পথচারিরা পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। মানুষ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের প্রাণী পড়ে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
গত ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছোট গেটের পাশের এলাকায় আলোহীন পথে হাঁটার সময় খোলা ড্রেনে পড়ে গুরুতর আহত হয় শহরের চেলোপাড়ার বাসিন্দা নবম শ্রেণির ছাত্র সাদাফ আল বিন সাম্য (১৫)। তাকে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় তার ডান পাশের কিডনি দুই ভাগ হয়ে গেছে এবং রক্ত জমাট বেঁধে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
সাম্যের বাবা নিয়াজ মাহমুদ জানান, আল্ট্রাসনোগ্রাফি ও সিটিস্ক্যানে দেখে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সাম্যের ডান পাশের কিডনি ফেটে দুই ভাগ হয়ে গেছে এবং ভেতরে রক্ত জমাট বেঁধেছে। এখন তার অবস্থা জটিল।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকায় অসংখ্য শিশু কিশোর শিক্ষার্থীরা কোচিং করছে রাত ১১ টা পর্যন্ত। এই এলাকায় অসংখ্য মোড়ে মোড়ে ড্রেনের উপর স্লাব নেই। ইচ্ছেমত ফুটপাত দখল, ভবন তৈরীর সময় চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা না ছাড়ায় সংকুচিত সড়ক ও সড়কের পাশের ড্রেনে ভালোমানের স্লাব না থাকায় দুর্ঘটনা ঘটছে। পৌরসভা থেকে কিছু আলোর ব্যবস্থা করা হলেও সেই অল্প আলোতে চলতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে সাধারণ পথচারীরা। নাটাইপাড়া, চেলোপাড়া ও রাজাবাজার এলাকায় একাধিক ড্রেন দীর্ঘদিন ধরে উন্মুক্ত অবস্থায় রয়েছে। রাতে আলো না থাকায় সেগুলোতে দুর্ঘটনা ঘটছে প্রায়ই।
বগুড়া পৌর প্রশাসক মাসুম আলী বেগ জানান, ‘ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কার কাজ করা হবে। পৌরসভা থেকে কোনো খোলা ড্রেন নেই। যদি থেকে থাকে তাহলে অতি দ্রুত সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
বিডি-প্রতিদিন/জামশেদ