ছেলেটির নাম আতা। সামনে তার খাতা। পাশে কয়েক রঙের কলম। সঙ্গে এক কৌটা মলম। আঁকবে প্রিয় ছবি। এটা তার হবি। আঁকল একটি আম। আঁকল একটি জাম। সবুজ কালো দুই রঙের কালি। খুশিতে বাবা-মা দিলেন হাততালি।
এবার আঁকলো একটা হাতি। গেল বিদ্যুৎ জ্বালাল মোববাতি। রুম কিছুটা অন্ধ। ছবি আঁকা বন্ধ।
আতা বলল, ‘মা, মোবাবাতির আলো দেখ কী অদ্ভুত। এখন কি রুমে আসবে ভূত!’
মনে সাহস বাড়ানোর জন্য মা দিলেন আতার মাথায় স্নেহের হাত। মায়ের হাতের আদর পেয়ে আতা বলল, এখন তো বেশ রাত।
মা বললেন, ‘আসবে না কোনো ভূতনাথ।’
আতার মনোবল বৃদ্ধি করার জন্য বাবা বললেন ‘রুমে আসার সাহস পাবে না কোনো ভূতের জাত।’
বাবা-মায়ের কথা শুনে সাহস করে আতা বলল, ‘ভূতকে আটকানো বুদ্ধি আমার কাছে আছে অনেক খাত।’
মা বললেন, ‘একটা খাতের কথা বল।’
আতা বলল, ‘তাহলে একটু দূরে চল।’
বাবা বললেন, ‘অন্ধকারে রুম দেখাচ্ছে কালো। রুমে আগে আসুক আলো।’
‘নিভিয়ে দাও মোমবাতির আলো। হারিকেনে তেল ঢেলে জ্বালো।’
‘অনেক দিন পর আঁকব হারিকেনের ছবি। হারিকেনটা হাতে ধরে থাকবেন একজন কবি।’
মা বললেন, ‘এখন বল কীভাবে ভূতকে দেখাবে খাত।’
আতা বলল, ‘ভূতকে দেখে সাদা কাগজে বিভিন্ন রং দিয়ে তার ছবি হবে আঁকা। নিজের ছবি খাতায় বন্দি দেখে দেবে দৌড় তখন রুম হবে ফাঁকা।’
একটু পর চলে এলো বিদ্যুৎ রুম হলো আলো। ভয় দূর হয়ে আতার কী যে লাগছে ভালো।
মা বললেন, ‘এবার আঁকবে হারিকেন আতা। কোথায় তোমার আঁকার খাতা।’
টেবিলের এক পাশ থেকে খাতা হাতে নিয়ে আতা বলল, ‘এই যে আমার খাতা। নষ্ট হয়নি কোনো পাতা।’
বাবা বললেন, ‘ছবি যেন হয় না যা-তা। তাহলে পাবে না ব্যয় ভাতা।’
আঁকল হারিকেনের ছবি। পাশে একজন কবি। ছবি দেখে খুশি হয়ে বাবা-মা আবারও দিলেন হাততালি। সঙ্গে সঙ্গে বলেন, তোমাকে আরও দেবে বিভিন্ন রঙের কালি।
বাবা-মায়ের উৎসাহ পেয়ে আতা বলল, ‘কার ছবি এবার আঁকব বল। প্রয়োজন হলে রুমের বাইরে চল।’
মা বললেন, ‘এত রাতে কোথাও যাওয়া ঠিক হবে না। তোমাকে নিয়ে এই রাতে কোথাও যাব না।’
‘তাহলে এবার আঁকি পাখি। বাইরে যাওয়া বাদ রাখি।’
আতা গভীর মনোযোগ দিয়ে ছবি আঁকতে লাগল। বাবা-মা পাশে থেকে দেখতে ভালো লাগল।
হঠাৎ জানালা দিয়ে দ্রুতগতিতে উড়ে এলো একটা জীবিত পাখি। অদ্ভুত পাখি দেখে ভয়ে তিনজনের বড় বড় হয়ে গেল আঁখি।
পাখি বলল, ‘তোমরা ভয় পেয়ো না আমি দেখতে এসেছি আতা কেমন আঁকছে ছবি।’
বাবা বললেন, ‘আতা সত্যি আঁকে ভালো ছবি। ও আমাদের সত্যিকারের রবি।’
মা বললেন, ‘ধৈর্য ধরে দেখেন আঁকা ছবি। এটাই তার এক মাত্র হবি।’
আতা খাতা কলম হাতে নিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে বসে আঁকছে পাখির ছবি। কিছুক্ষণ পর ছবি দেখে মুগ্ধ হয়ে পাখি বলল, ভালো হয়েছে আঁকা ছবি।
পাখি ঠোঁট দিয়ে আঁকা খাতার পৃষ্ঠাটা নিয়ে বলল, ‘তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আতা। উপহার দেব অনেক খাতা। এখন তোমাদের জানাই বাই বাই টাটা। ছবির সঙ্গে নিয়ে গেলাম মলমের কৌটাটা।’
আতা বলল, ‘ঠিক আছে আনন্দ করে নিয়ে যাও। তোমাদের রাজ্যের সবার কাছে ভালোবাসা পাও।’
পাখি আঁকা ছবি নিয়ে উড়ে গেল। ওরা গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে গেল।