সাম্রাজ্যের অধিকাংশ ভূম্যধিকারী ও রাজস্ব-সংগ্রহকারী ছিল হিন্দু। তারা চৌধুরী, খুত ও মুকাদ্দাম নামে পরিচিত ছিল। তারা কৃষকদের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে অর্থ আদায় করে অগাধ বিত্তের অধিকারী হয়েছিল এবং প্রায়ই তারা বিদ্রোহের সুযোগ খুঁজত। অতীতের ঘটনা হতে আলাউদ্দিন খলজির বিশ্বাস জন্মেছিল, হিন্দুদের ওপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে না পারলে তারা কখনো বাধ্য ও অনুগত হবে না। এ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক স্মিথ বলেন, 'আলাউদ্দিন তাদের বিত্তহীন করতে চান, যাতে তারা চক্রান্ত ও বিদ্রোহ করতে না পারে।' সুলতান আলাউদ্দিন এমন কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন, যার ফলে খুত, চৌধুরী ও মুকাদ্দামরা দারিদ্র্য ও দুস্থ অবস্থায় পতিত হলো। বারানি তাদের অবস্থার এক করুণ চিত্র অঙ্কন করেছেন। তার মতে, 'চৌধুরী, খুত ও মুকাদ্দামরা অশ্বপৃষ্ঠে আরোহণ করতে, অস্ত্র সজ্জিত হতে, মিহি বস্ত্র পরিধান করতে অথবা তাম্বুল চর্বণ করতে পারত না। এ বর্ণনার ভিত্তিতে আলাউদ্দিন খলজির 'হিন্দুবিরোধী বিধি ব্যবস্থা' সম্পর্কে একটি মতবাদ গড়ে উঠেছে। এরূপ মত পোষণ করার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই যে, আলাউদ্দিন খলজির আমলে সাধারণ হিন্দুদের সঙ্গে বিশেষ কঠোর আচরণ করা হতো। তবে রাষ্ট্র পরিপন্থী কেউ কোনো কাজ করুক- এটি তিনি চাইতেন না এবং এর প্রতিরোধকল্পে বিদ্রোহীমনা হিন্দু ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ইতস্তত করতেন না। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, সুলতান তার মুসলিম প্রজাদের জায়গির, ধর্মীয় উদ্দেশ্যে নিয়োজিত সম্পত্তি ও ভাতাসমূহ বাজেয়াপ্ত করেছিলেন। হিন্দুদের প্রতি সুলতান আলাউদ্দীনের গৃহীত ব্যবস্থা সম্বন্ধে ড. আর. পি. ত্রিপাঠি বলেছেন যে, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে হিন্দুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল- ধর্মীয় কারণে নয়। কারণ মুকাদ্দাম বা গ্রাম্য প্রধান, খুত বা ইজারাদার এবং চৌধুরী বা রাজস্ব আদায়কারীরা ছিল প্রধানত হিন্দু এবং তারা সুলতান আলাউদ্দিনের আগে নানারকম, সুযোগ-সুবিধা ভোগ করত।