শনিবার, ২১ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

শিক্ষিকাকে মারপিট

পেশিশক্তির উপাসকদের সামাল দিন

দেশে শিক্ষকদের অপদস্ত করার যেন মচ্ছব শুরু হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের এক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের লাঞ্ছিত হওয়ার রেশ না কাটতেই ঢাকার ধামরাইয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক প্রধান শিক্ষিকাকে বাথরুম থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে মারপিট করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ওই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সহ-সভাপতি আবদুল মালেক। ধামরাইয়ের পশ্চিম সূত্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ফৌজিয়া ইয়াসমিন গত শনিবার স্কুলের অফিস কক্ষ পরিবর্তন করে অন্য একটি কক্ষকে অফিস হিসেবে ব্যবহার করেন। এ নিয়ে সহকারী শিক্ষক কানিস নাসিমা ও আক্তার হোসেনের সঙ্গে তার কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ওই দুই সহকারী শিক্ষক প্রধান শিক্ষিকার ওপর প্রতিশোধ নিতে বুধবার বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কাজী মোহাম্মদ ফজলুল হক ও সহ-সভাপতি আবদুল মালেককে স্কুলে ডেকে আনেন। আবদুল মালেক স্কুলে এসে প্রধান শিক্ষিকাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। এ অশোভন আচরণের প্রতিবাদ করলে উত্তেজিত হয়ে তিনি তাকে মারতে যান। আত্মরক্ষার্থে প্রধান শিক্ষিকা দৌড়ে বিদ্যালয়ের বাথরুমে আশ্রয় নিলে সেখান থেকে তাকে টেনেহিঁচড়ে বের করে বেদম মারপিট করেন আবদুল মালেক। এতে শিক্ষিকা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। পেশিশক্তির উপাসক রাজনৈতিক টাউট ও গডফাদারদের কাছে শিক্ষকদের কদর থাকার কথা নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটিতে এসব ‘অতিমানবদের’ ঠাঁই পাওয়ার সুযোগ থাকায় তারা যা ইচ্ছা তাই করার সুযোগ পাচ্ছেন। মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকদের তাদের প্রথাগত ব্রত থেকে বের করারও কসরৎ চালাচ্ছে অমানুষেরা। কেউ তাতে আপত্তি করলেই জিঘাংসার শিকার হচ্ছেন তারা। কোথাও ছাত্র শিক্ষক সবার সামনে শিক্ষককে কান ধরে উঠবোসে বাধ্য করা হচ্ছে। কোথাও শিক্ষিকাকে বাথরুম থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে নির্যাতন চালিয়ে ক্ষমতার দাপট দেখানো হচ্ছে। শিক্ষকদের নিগৃহীত হওয়ার ঘটনা বন্ধে ‘অতিমানবরা’ যাতে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হতে না পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেওয়ার বিষয়টিও ভাবা যেতে পারে।  জনপ্রতিনিধি নামধারীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমিটিতে না রাখার বিষয়টিও ভেবে দেখা উচিত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর