ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান, যা ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের প্রতিটি দিক সুন্দর এবং কল্যাণময়ভাবে পরিচালনার নির্দেশ দেয়। মানুষের উপকার করা বা সাহায্যে এগিয়ে আসা ইসলাম ধর্মের অন্যতম মহৎ গুণ। এ গুণ সমাজে পারস্পরিক সেতুবন্ধন সুদৃঢ় করে। ইসলামি সমাজকে করে তোলে সহানুভূতিশীল ও মানবিক। মানুষ এবং যে কোনো সৃষ্টিজগতের উপকারে নিবেদিত হওয়া বিশেষ একটি ইবাদত। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতি উন্নয়নের ভিত্তি। যারা মানব উন্নয়ন ও সৃষ্টিজগতের সেবায় আত্মনিয়োগ করে তারা ইহ ও পরকালে আল্লাহতায়ালার বিশেষ অনুগ্রহ লাভ করবে। আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘তোমরা সৎ কাজ ও আল্লাহভীতির ব্যাপারে একে অপরকে সহায়তা করো, আর পাপ ও সীমা লঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অপরকে সহায়তা করো না।’ (সুরা মায়েদা-২)।
এ আয়াতে মানুষকে কল্যাণমূলক কাজে সহানুভূতিশীল হওয়ার নির্দেশ দেয়। অপর আয়াতে বলা হয়েছে- ‘যে কেউ একটি প্রাণ রক্ষা করে, সে যেন সমগ্র মানব জাতিকে রক্ষা করল।’ (সুরা মায়েদা-৩২)। এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, মানুষের জীবন রক্ষা এবং তাদের নিরাপত্তা ও কল্যাণের জন্য এগিয়ে আসা কত বড় ফজিলতের কাজ। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই ব্যক্তি সবচেয়ে প্রিয়, যে মানুষকে সবচেয়ে বেশি উপকার করে।’ (আল-মুজাম আল-আওসাত, সহিহ)।
তিনি আরও বলেছেন, ‘তোমরা মানুষকে উপকার করো, তোমরা আল্লাহর সাহায্য লাভ করবে।’ (সহিহ মুসলিম)। অপর হাদিসে বর্ণিত আছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দুনিয়ার কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তার কষ্ট দূর করবেন।’ (সহিহ মুসলিম)। আরেক হাদিসে বর্ণিত আছে, ‘রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা জগৎবাসীর ওপর দয়া করো, আসমানের মালিক তোমাদের ওপর দয়া করবেন।’ (তিরমিজি)। মানুষের উপকার এবং মানব কল্যাণ বলতে আমরা অভাবীকে সাহায্য করা, গরিব-দুঃখীর পাশে দাঁড়ানো, শিক্ষা-দীক্ষার ব্যবস্থা করা, পথ প্রদর্শন করা, অসুস্থকে সেবা দেওয়া, দুঃখ-কষ্টে তাদের পাশে থাকা, কাউকে ভালো পরামর্শ বা সহানুভূতির কথা বলা, সৎকর্ম ও পরকালের প্রতি উৎসাহিত করা ইত্যাদি বুঝে থাকি।
আর উপকার করার মাধ্যমে অর্জিত হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ভালোবাসা, গুনাহ মাফ হওয়ার সুযোগ, সমাজে সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি, দোয়া ও বরকতের অধিকার, পরকালে জান্নাতের প্রতিদান ইত্যাদি। ইসলামি জীবনাদর্শে উপকারের প্রতিদান একমাত্র আল্লাহতায়ালাই দিতে পারেন এ বিশ্বাসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই উপকারের মূল উদ্দেশ্য হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। মানুষের প্রশংসা বা পার্থিব কোনো প্রাপ্তি নয়। এ দৃষ্টিভঙ্গি একজন মানুষকে বিনয়ী এবং পরোপকারী করে তোলে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারা আল্লাহর ভালোবাসায় অভাবগ্রস্ত, এতিম ও বন্দিদের আহার করায়, কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, আমরা তোমাদের কাছ থেকে কোনো প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা চাই না।’ (সুরা আদ দাহর-আয়াত, ৮-৯)। মানব জীবনে উপকার করা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা দুটি পৃথক মহৎ গুণ। ইসলাম কেবল আল্লাহর প্রতি নয়, সেই সঙ্গে মানুষের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার প্রতিও অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। একজন মানুষ যখন উপকার লাভ করে তখন তার উচিত, সেই উপকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা। অকৃতজ্ঞতা অহংকারের পরিচয় বহন করে। যা ইসলামে অতি নিন্দনীয় ও গর্হিত কাজ। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, সে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।’ (তিরমিজি)। এক হাদিসে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি কোনো উপকারীকে বলল, জাজাকাল্লাহ! ‘আল্লাহ আপনার বিনিময় প্রদান করুন।’ সে যেন তার পূর্ণ প্রশংসা করল। (সহিহ মুসলিম)। মানুষের উপকার করা একটি মহৎ গুণ। এর মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি হওয়াই উচিত। মানুষের কাছে প্রশংসা, সম্মান ও কোনো প্রতিদান আশা করা ইসলামি শিক্ষার পরিপন্থি। একইভাবে ইসলাম ধর্ম কৃতজ্ঞতাবোধকেও একটি ইমানি গুণ হিসেবে অভিহিত করেছে। তাই উপকার করা এবং কৃতজ্ঞ হওয়াও মহৎ গুণের অন্তর্ভুক্ত। একজন মুসলমানের উচিত সৃষ্টিজগতের উপকার করা এবং উপকারীর প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। সর্বদা সে অনুযায়ী আচরণ করা।
লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা