মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

ফাহিমের জন্য বেদনা

প্রভাষ আমিন

ফাহিমের জন্য বেদনা

নীতিগতভাবে আমি বরাবরই ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে। গত এক দশক ধরে আমি ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে বিরামহীনভাবে লিখছি। কিন্তু ক্রসফায়ার বন্ধ হয়নি। কখনো কমেছে, কখনো বেড়েছে। ক্রসফায়ার কমলে বেড়ে যায় গুম। তাই বিচারবহির্ভূত হত্যার মিছিল খালি লম্বাই হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের সবচেয়ে প্রিয় অস্ত্র ক্রসফায়ার। বিরোধী দলে থাকতে আওয়ামী লীগ ক্রসফায়ারের বিপক্ষে সোচ্চার ছিল। ক্রসফায়ারের বর্তমান ফর্মেট যার হাত দিয়ে শুরু সেই বেগম খালেদা জিয়া এখন ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে সোচ্চার। আমি নিশ্চিত, বেগম জিয়া আবার কখনো ক্ষমতায় গেলেই ক্রসফায়ারের প্রেমে পড়ে যাবেন। বিএনপির হাত ধরেই ক্রসফায়ারের যাত্রা শুরু, এটা লিখলেই কয়েকজন দাবি করেন, বাংলাদেশে ক্রসফায়ারের প্রথম শিকার সিরাজ শিকদার। যেই আমলেই শুরু হোক, অমুক করেছে বলে আমরাও করব; এ ধরনের কোনো যুক্তি দিয়েই ক্রসফায়ারকে জায়েজ করা যাবে না। ক্রসফায়ার মানে ঠাণ্ডা মাথায় খুন। প্রতিটি ক্রসফায়ারই একেকটি খুন। কিন্তু ক্রসফায়ার বাংলাদেশে খুব জনপ্রিয় প্রবণতা। শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেত্রী থাকার সময় দলীয় নেতাদের পরামর্শ উপেক্ষা করেই ক্রসফায়ারের বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু এখন তার আমলেই ক্রসফায়ার হচ্ছে দেদার। সাধারণ মানুষের আপাত পছন্দকে পুঁজি করেই সবগুলো সরকার দিনের পর দিন ক্রসফায়ার চালাচ্ছে। ক্রসফায়ারের পক্ষের সবগুলো যুক্তি আমি জানি। এসব সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের বিচার করা সহজ নয়। গ্রেফতারের কিছুদিন পরই তারা জামিন পেয়ে হাওয়া হয়ে যায়। জামিন না পেলেও বিচার চলে বছরের পর বছর। তাদের বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ সাক্ষী দিতে চায় না। তাই তাদের অপরাধ প্রমাণ করা কঠিন হয়ে যায়। তাই স্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়ায় তাদের সাজা দেওয়াই কঠিন, ফাঁসি তো অনেক পরের ব্যাপার। তাই ধরে এনে তাত্ক্ষণিকভাবে ক্রসফায়ারে দিয়ে দিলে সাধারণ মানুষ খুশি হয়, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। ক্রসফায়ারের পর মিষ্টি বিতরণ, আনন্দ মিছিলের ঘটনাও ঘটেছে। ক্রসফায়ার সন্ত্রাসীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি করে। তাই ক্রসফায়ারে তাত্ক্ষণিকভাবে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়, এটা ঠিক।

কিন্তু একটা দেশে দুই ধরনের বিচার ব্যবস্থা থাকতে পারে না। প্রচলিত বিচার ব্যবস্থায় মামলা হবে, তদন্ত হবে, বিচার হবে, আপিল হবে, রিভিউ হবে। আর ক্রসফায়ারের নামে ধরে তাত্ক্ষণিকভাবে খুন করে ফেলা হবে, এটা চলতে পারে না, চলা উচিত নয়। বঙ্গবন্ধুর খুনিরা, যুদ্ধাপরাধীরা আইনের সর্বোচ্চ প্রটেকশন পাবে; আর সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের ধরে তাত্ক্ষণিকভাবে রায় কার্যকর করে ফেলা হবে, এটা মানা যায় না। প্রতিটি ক্রসফায়ারের পর র‌্যাব বা পুলিশের পক্ষ থেকে একটা প্রেস রিলিজ দেওয়া হয়। সেই প্রেস রিলিজে একই গল্প— আসামিকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারের অভিযানে গেলে সন্ত্রাসীরা গুলি করে। আর তাতে মারা যায় শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে থাকা ব্যক্তিটি। এই গল্পটি যে মিথ্যা, তা সবাই জানেন। প্রতিটি গল্প কিন্তু র‌্যাব-পুলিশের একেকটি অদক্ষতার দলিলও। তাদের গল্প যদি বিশ্বাস করি, তার মানে দাঁড়ায় পুলিশ বা র‌্যাব তাদের হেফাজতে থাকা একজন আসামিকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। পুলিশ ভয়ঙ্কর কোনো আসামিকে আদালতে নেয় বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট এবং হেলমেট পরিয়ে। তাহলে অস্ত্র উদ্ধারের সময় কেন সেই ব্যবস্থা থাকে না? পুলিশ বা র‌্যাবের প্রেস রিলিজে নিহত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কয়টি মামলা আছে, সে কত বড় সন্ত্রাসী তা প্রমাণের চেষ্টা থাকে; যেন মামলা বেশি হলেই ক্রসফায়ারটি জায়েজ হয়ে যায়। কিন্তু সেই মামলায় কি আসামির ফাঁসি হতে পারত? আর হলেও সেটা তো আদালত বিবেচনা করবে, পুলিশ বা র‌্যাব নয়। অনেকে কোনো ক্রসফায়ারের সমালোচনা করেন, কোনো ক্রসফায়ারের পক্ষে বলেন। কিন্তু যেটা অপরাধ সেটা সব ক্ষেত্রেই অপরাধ। যতক্ষণ আমাদের ঘাড়ে না আসছে, ততক্ষণ আমরা দূর থেকে সমালোচনা বা প্রশংসা করে সন্তুষ্ট থাকি। আমি বা আমার কোনো স্বজন ক্রসফায়ারের শিকার না হলে আমরা আসলে বুঝব না ক্রসফায়ারের বেদনা।

আমি কখনোই মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলায় বিশ্বাসী নই। তারপরও যদি সবাই মনে করেন, ক্রসফায়ারেই সব সমাধান নিহিত, তাহলে সংসদে দুটি আইন পাস করে নিতে হবে, একটি হলো ‘প্রচলিত বিচার ব্যবস্থা বিলুপ্তকরণ বিল’, অপরটি হলো ‘তাত্ক্ষণিক বিচার ও রায় কার্যকর বিল’। তখন আর আমরা ক্রসফায়ারকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বলব না। মানুষের জীবনের চেয়ে দামি আর কিছু নেই। কারণ বিজ্ঞান সবকিছু দিতে পারলেও মানুষের জীবন দিতে পারে না। এ কারণেই কাউকে ফাঁসি দেওয়ার আগে আদালত সাক্ষ্য-প্রমাণ অনেক কিছু বিবেচনা করেন। ফাঁসি কার্যকরের আগে আইনের অনেকগুলো ধাপ পেরুতে হয়। এমনকি সব ধাপ শেষ হলেও রাষ্ট্রপতি চাইলে যে কাউকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। কিন্তু ক্রসফায়ারে কোনো ক্ষমা নেই। ধর আর মার। বিচারের ধারণাটাই হলো প্রয়োজনে দোষী ছাড়া পাক, কিন্তু একজন নির্দোষ মানুষও যেন সাজা না পায়। কিন্তু ক্রসফায়ারে তো বিচারই নেই, বিচারের ধারণা আসবে কোত্থেকে।

এত ক্রসফায়ারের মধ্যেও কোনো কোনো ক্রসফায়ার অন্যরকম আলোড়ন তোলে। এই যেমন মাদারীপুরে শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীর ওপর হামলার ঘটনায় হাতেনাতে আটক হওয়া ফাহিমের ক্রসফায়ার নিয়ে তুমুল আলোচনা হচ্ছে। এমনকি যারা ক্রসফায়ারের পক্ষে, তারাও ফাহিমের ক্রসফায়ার নিয়ে উল্টো কথা বলছেন। সম্প্রতি জঙ্গিদের টার্গেট কিলিং আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা এসে সফট টার্গেটকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে পালিয়ে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আসামিদের ধরা যায় না। মাদারীপুরের মানুষ ধাওয়া করে রিপন চক্রবর্তীর ওপর হামলাকারীদের একজন ফাহিমকে ধরে ফেলে। এই ফাহিম মাত্র ১৯ বছরের তরুণ। উত্তরা স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি জিপিএ-৫ পাওয়া। এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। কিন্তু একটি প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা বাকি থাকতেই সে মাদারীপুর চলে যায়। এ পরীক্ষাটি আগেই হওয়ার কথা ছিল। হরতালের কারণে পিছিয়ে যায়। পরীক্ষার আগের রুটিন ধরে মাদারীপুরে হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ফাহিমের কাছে পরীক্ষার চেয়ে হামলাটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়। তাই বাবা-মাকে না জানিয়ে পরীক্ষা ফেলেই সে মাদারীপুর চলে যায়। কখনো না দেখা রিপন চক্রবর্তীকে মারার জন্য হামলায় অংশ নেয় তরুণ ফাহিম। ভালো ছাত্র, নিয়মিত নামাজ পড়ে, বেশিরভাগ সময় তো বাসায়ই থাকে, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা দেয় না। বাবা-মা খুশিই ছিলেন ফাহিমকে নিয়ে। কিন্তু তারা টেরই পাননি, কখন তাদের প্রিয় সন্তানকে গ্রাস করে নিয়েছে অশুভ শক্তি। কখন জাগতিক পরীক্ষার চেয়ে, পারলৌকিক জগতের ভালো থাকাটাই তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে। মানুষ মারতে পারলেই বেহেশত কনফার্ম, এমন অনৈসলামিক ধারণা গেঁথে দেওয়া হয়েছে তার মননে।

হাতেনাতে ধরার পর ফাহিম হতে পারত জঙ্গিবিরোধী অভিযানে পুলিশের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। কারা কীভাবে ফাহিমের মতো তরুণদের মগজ ধোলাই করল, পুলিশ এই নিরীক্ষা চালাতে পারত ফাহিমকে নিয়ে। পেতে পারত আরও অনেক তথ্য। এমনকি তাকে জামিন দিয়ে গোপনে অনুসরণ করে করে পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারত জঙ্গি আস্তানায়। কিন্তু তার কিছুই না করে ১০ দিনের রিমান্ডের প্রথম দিনেই তাকে খুন করে ফেলা হলো কেন? এখন রিপন চক্রবর্তীর ওপর হামলার মামলার তদন্ত আরও দুর্বল হয়ে যাবে না? আদালত যদি ১০ দিন পর ফাহিমকে ফেরত চায়, কী জবাব দেবে পুলিশ? আদালত তো তাকে পুলিশের হেফাজতে দিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ তার হেফাজতে থাকা রিমান্ডের আসামির নিরাপত্তা দিতে পারেনি। এই ব্যর্থতার জন্য কি পুলিশকে কারও কাছে জবাব দিতে হবে? 

গ্রেফতারের পর থানায় সাংবাদিক ও পুলিশের সামনে ফাহিমের অসংলগ্ন আচরণ দেখে তাকে আমার ফাঁদে আটকা ভীত হরিণের মতো মনে হয়েছে। হয়তো এটাই তার প্রথম অভিযান। ফাহিমের ক্রসফায়ারের খবর শুনে আমার মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। কেউ ভাববেন না আমি জঙ্গি বা সন্ত্রাসীদের পক্ষে বা তাদের জন্য কোনো সহানুভূতি দাবি করছি। ১৯ বছরের ফাহিমের জন্যও আইনের বাইরে কিছু চাইনি। ফাহিমদের হামলায় তো রিপন চক্রবর্তীর মৃত্যু হতে পারত। ফাহিমদের বয়সী কারও হামলাতেই অভিজিত বা দীপন খুন হয়েছেন। সাধারণ আইনেই হত্যা বা হত্যাচেষ্টার জন্য আমি তাদের সর্বোচ্চ সাজা চাই। তবে আমি বিষয়টা একটু উল্টো করে দেখতে চাই। আমার ছেলে প্রসূন ফাহিমের চেয়ে কয়েক বছরের ছোট। আমি বারবার ফাহিমের চেহারায় আমার ছেলের প্রতিচ্ছবি দেখেছি। আমি জানি এই বয়সটা খুব বিপজ্জনক। এ বয়সে মানুষ খুব দ্রুত প্রভাবিত হয়। মহৎ কিছু একটা করতে চায়। এই সুযোগটাই নেয় জঙ্গিরা। জীবনের ভালোমন্দ বোঝার আগেই, রূপ-গন্ধ দেখার আগেই তাদের মগজ ধোলাই হয়ে যায়। সহজেই তাদের মরিয়া করে ফেলা যায়। একটা তরুণ যখন জানবে, একটা খুন করতে পারলেই তার পরকাল নিশ্চিন্ত, অনন্ত যৌবনা হুরপরীরা ফুলের মালা নিয়ে অপেক্ষা করে আছে; তাকে আটকানো কিন্তু সত্যি কঠিন। দায় কি আমাদের একেবারেই নেই? আমরা কেন টের পেলাম না, আমাদের সন্তান কখন কোন অন্ধকার জগতে পা ফেলেছে। এই বয়সের একটা ছেলের যখন, প্রাণভরে জীবনকে উপভোগ করার কথা, তখন কেন সে মরণের পথে যাচ্ছে। যে ছেলের বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে আড্ডা মেরে, সিনেমা দেখে, হৈচৈ করে, দুষ্টুমি করে, গান শুনে, প্রেম করে বাবা-মার বকুনি খাওয়ার কথা; সে কেন একা একা রুমে বসে থাকে? আমরা কী কখনো জানতে চেয়েছি? ফাহিম যে এমন এক ভয়ঙ্কর ফাঁদে পড়েছে, সেটা তার বাবা-মা টের পাননি, শিক্ষকরা টের পাননি, বন্ধু-বান্ধবরা টের পায়নি। কী ভয়ঙ্কর কথা। কে জানে, আমার  সন্তান বা আপনার সন্তান এমন কোনো ফাঁদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে কিনা। কেউ যদি আমাকে গ্যারান্টি দেন, ফাহিমের মৃত্যুতে বন্ধ হবে জঙ্গি তত্পরতা, তাহলে শত আপত্তি সত্ত্বেও আমি মেনে নেব। কিন্তু কত হাজার ফাহিমকে আপনি খুন করবেন? চারপাশে পেতে রাখা ফাঁদগুলোকে যদি আমরা দূর করতে না পারি, জঙ্গিদের মগজ ধোলাইয়ের বিপরীতে যদি আমরা আমাদের সন্তানকে জীবনের গল্প শোনাতে না পারি, জীবনের স্বপ্ন দেখাতে না পারি; এমন হাজার হাজার ফাহিম তৈরি হবে। একবার মগজ ধোলাই হয়ে গেলে ফেরানো কঠিন। তাই খেয়াল রাখতে হবে মগজ ধোলাইয়ের সুযোগটাই যেন কেউ না পায়। কিন্তু কাজটা খুব কঠিন। যতই দেরি হবে, কাজটা কঠিনতর হবে। আগে আমরা মাদ্রাসা, বিশেষ করে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও শিক্ষা পদ্ধতিকে দায়ী করতাম। কিন্তু ফাহিম তো উত্তরা স্কুলের ছাত্র। অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মার্ট ছেলেরা হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে জড়িত। তাই আমাদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। ফাহিমরা আমাদেরই সন্তান, তাদের বাঁচানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে আমাদেরই। নইলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না।

জঙ্গিবাদ ক্যান্সারের মতো। এর পুরোটা, শেকড়শুদ্ধ উপড়ে ফেলতে হবে। একটু থাকলেই আবার শেকড় গজাবে। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্সের কঠোর অবস্থান চাই। কিন্তু ক্রসফায়ার তো কঠোর অবস্থান নয়, সবচেয়ে সহজ সমাধান। ধর আর জবাবদিহি ছাড়া খুন করে ফেল। সাঁড়াশি অভিযানের নামে ১৯৪ জন জঙ্গিকে ধরতে প্রায় ১২ হাজার মানুষকে গ্রেফতার করতে হয়েছে। জঙ্গিবিরোধী কঠোর অবস্থান মানে সর্বাত্মক সমন্বিত অভিযান। খেয়াল রাখতে হবে সন্তান কী করছে, কী পড়ছে, কী ভাবছে, কাদের সঙ্গে মিশছে। ধরতে হবে রাঘব বোয়ালদের, বন্ধ করতে হবে অর্থের উৎস। তাদের মগজ ধোলাইয়ের বিপরীতে সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটাতে হবে। তুলে ধরতে হবে প্রকৃত ইসলামের চেতনা। ছড়িয়ে দিতে হবে মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন। আমরা জঙ্গিদের বিচার চাই, হত্যা নয়। আমরা আইনের শাসন চাই, বিচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ড নয়। রাষ্ট্র যখন আইন হাতে তুলে নেয়, তখন পুরো ব্যবস্থাটাই ভেঙে পড়ে। উন্নয়নের ধারায় আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই যেখানে আইনের শাসন থাকবে, সবাই আইনের সমান প্রটেকশন পাবেন, সব ধর্মের, সব মতের মানুষ যেখানে শান্তিতে দিন যাপন করতে পারবে। আমরা জানি ক্ষমতাসীন সরকার মৌলিক চেতনায় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে; উদার, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পক্ষে। সরকারকে শুধু তাদের চাওয়াটারই বাস্তবায়ন করতে হবে।

লেখক : সাংবাদিক।

[email protected]

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর