শনিবার, ১১ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা
বায়তুল মোকাররমের খুতবা

নারী ও শিশু অধিকার সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনা

মাওলানা মুহিবুল্লাহিল বাকী
ভারপ্রাপ্ত খতিব
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ

ইসলাম নারী ও শিশুকে মানবসভ্যতার বাইরে পৃথক কোনো সত্তা হিসেবে কল্পনা করে না, মানবসত্তার বাইরে পৃথক কোনো সত্তা হিসেবে কল্পনা করার বৈধতাও দেয় না। মানুষ হিসেবে সব অধিকার ও মর্যাদাপ্রাপ্তির পাশাপাশি অতিরিক্ত কিছু অধিকার ও যত্ন ইসলাম নারী ও শিশুকে দেয়। কারণ নারী কর্মযোগ্যতার দিক থেকে পুরুষের চেয়েও শিশু প্রাপ্তবয়স্কদের থেকে একটু দুর্বল। এ কারণেই নারীদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যেমন যুদ্ধবিগ্রহের মূল নেতৃত্ব বা সমুদ্রে মাছ ধরার কাজে বা কঠোর পরিশ্রমের কাজ যেমন উঁচু ভবন নির্মাণে শারীরিক পরিশ্রমের দায়িত্ব তাদের দেওয়া হয় না। যেহেতু এসব কাজ তাদের জীবনকে নিরাপত্তাহীন ও ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়। এ রকমভাবে শিশুরা আরও দুর্বল হওয়ার কারণে শিশু বয়সে শিশুদের ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করা ছাড়া অন্য কোনো কাজে তাদের শ্রম নেওয়া নিষিদ্ধ যা তার ভবিষ্যৎ গঠনে অবদান রাখে। নারী মানব সমাজের একটি অঙ্গ। মানুষের একটি অঙ্গ ঝুঁকির মধ্যে থাকলে বা অসুস্থ হলে যে রকম অন্য অঙ্গটি সুস্থ হলেও অসুস্থ অঙ্গের প্রভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে, তদ্রূপ নারী মানব সমাজের একটি অঙ্গ হিসেবে সমাজে নারী নামের অঙ্গটি  ঝুঁকির মধ্যে থাকলে বা অবহেলিত হলে সমাজের পুরুষ নামের অঙ্গটিও এর প্রভাবে প্রভাবিত হতে বাধ্য। এ অনুভূতি গঠনের লক্ষ্যেই আল্লাহতায়ালা আদম সন্তানের আদিমাতা হজরত হাওয়া (আ.)-কে আদম (আ.)-এর মতো সরাসরি মাটি থেকে সৃষ্টি না করে আদম (আ.)-এর বাম পাঁজর থেকে সৃষ্টি করেছেন। ডান হাত ডান পাশের চেয়ে বাম হাত বাম পাশ একটু দুর্বল হলেও দুটি মিলেই একটি মানুষ। তদ্রূপ হাওয়া (আ.) বাম পাশ থেকে সৃষ্টি হওয়ায় একটু দুর্বল হলেও এটি আদম (আ.) নামের পুরুষের অংশ; আদম (আ.)-এর পরিপূর্ণতা একে নিয়েই। নারী নামের মানব সমাজের এই অঙ্গটি একটু দুর্বল হওয়ায় নারী তথা মায়েরা এমনকি যারা নারীবাদী আন্দোলন করেন তারাও মনের ভিতরে একটি পুত্রসন্তান কামনা করেন। কন্যাসন্তানের প্রতি অনীহার কারণে পুত্রসন্তান কামনার মানসিকতা বর্জনের লক্ষ্যে রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি দুটি কন্যাসন্তান লালন-পালন করে আমি এবং সে এভাবে পাশাপাশি জান্নাতে প্রবেশ করব।’ আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি তোমাদের জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি।’

কোনো মানুষের একটি অঙ্গ কম থাকলে যে রকম সে সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ বলে ধরে নেওয়া যায় না, তদ্রূপ কোনো ব্যক্তি নারীর প্রতি বৈষম্যপূর্ণ আচরণ করে বা নির্যাতন করে নারীকে নিজের জীবন থেকে, মানব সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করলে সে ব্যক্তি বা সমাজকেও সুস্থ বা স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া যায় না।

অতএব, মনে রাখতে হবে মানব সমাজের বর্তমান নিরাপত্তা নারীর নিরাপত্তা বিধানের ওপর নির্ভরশীল। আর মানব সমাজের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নির্ভর করে শিশুর জীবনের নিরাপত্তা বিধানের ওপর। আমাদের শিশু যদি জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, শিক্ষা-সভ্যতা থেকে বঞ্চিত হয় তাহলে মনে রাখতে হবে আমাদের শিশুই শুধু নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে না বা শিক্ষা সভ্যতা থেকে বঞ্চিত হলো না বরং ভবিষ্যৎ মানব সমাজ নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকির মধ্যে পড়ে এবং ভবিষ্যৎ মানব সমাজ শিক্ষা-সভ্যতা থেকে বঞ্চিত হয়। অতএব নারী ও শিশুর জীবনের নিরাপত্তা বিধানে মাতা-পিতা ও সমাজকে পরিপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে।

সর্বশেষ খবর