মিথ্যা বলা ও মিথ্যাচার একটি জঘন্যতম অপরাধ এবং ঘৃণিত অভ্যাস। মিথ্যা বলার চেয়ে নিকৃষ্ট গুনা আর নেই। তাই মিথ্যাবাদীকে আল্লাহ প্রচণ্ড ঘৃণা করেন। আল কোরআন ও হাদিসে মিথ্যুক এবং মিথ্যাবাদীর ভয়ানক পরিণতির কথা বলা হয়েছে। নিচে মিথ্যা বলার বিধান এবং তার পরিণতি সম্পর্কে বিভিন্ন আয়াত ও হাদিস উদ্ধৃত করা হলো।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই তার অনুসরণ করো না।’ (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৩৬)।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয় সত্যবাদিতা পুণ্যের পথ দেখায়। আর পুণ্য জান্নাতের দিকে পথনির্দেশনা করে। আর মানুষ সত্য কথা বলতে থাকে, শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কাছে তাকে “মহা সত্যবাদী” রূপে লিপিবদ্ধ করা হয়। আর নিঃসন্দেহে মিথ্যাবাদিতা নির্লজ্জতা ও পাপাচারের দিকে নিয়ে যায়। আর পাপাচার জাহান্নামের দিক নিয়ে যায়। আর মানুষ মিথ্যা বলতে থাকে, শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কাছে তাকে “মহা মিথ্যাবাদী” রূপে লিপিবদ্ধ করা হয়।’ (বুখারি, মুসলিম)।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবন আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকবে, সে খাঁটি মুনাফিক গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তির মাঝে তার মধ্য থেকে একটি স্বভাব থাকবে, তা ত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকের একটি স্বভাব থাকবে। সে স্বভাগুলো হলো— ১. তার কাছে আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে। ২. সে কথা বললে মিথ্যা বলে। ৩. ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে এবং ৪. ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লীল ভাষা বলে। (বুখারি, মুসলিম)।
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এমন স্বপ্ন ব্যক্ত করল, যা সে দেখেনি। [কিয়ামতের দিনে] তাকে দুটি যবদানার মাঝে সংযোগ সাধন করতে আদেশ করা হবে; কিন্তু সে তা কস্মিনকালেও পারবে না। যে ব্যক্তি কোনো জনগোষ্ঠীর কথা শোনার জন্য কান পাতে, যা তারা আদৌ পছন্দ করে না, কিয়ামতের দিনে তার কানে গলিত সিসা ঢেলে দেওয়া হবে। আর যে ব্যক্তি কোনো [প্রাণীর] ছবি তৈরি করে, কিয়ামতের দিন তাকে শাস্তি দেওয়া হবে এবং তাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করার জন্য আদেশ করা হবে, অথচ সে তা করতে পারবে না।’ (বুখারি, মুসলিম)।
যাচাই-বাছাই ছাড়া সংবাদ প্রচার করা মিথ্যার শামিল : আবু হুরাইয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা কিছু শোনে [বিনা বিচারে] তা-ই বর্ণনা করে।’ (মুসলিম, আবু দাউদ)।
সামুরাই রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার তরফ থেকে কোনো হাদিস বর্ণনা করে অথচ সে জানে যে তা মিথ্যা, তবে সে দুই মিথ্যুকের একজন।’ (বুখারি, তিরমিজি)।
মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ : মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা মিথ্যা কথা থেকে দূরে থাকো। (সূরা হজ, আয়াত ৩০)।
তিনি আরও বলেন, [তারাই পরম দয়াময়ের বান্দা] যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না। (সূরা ফুরকান, আয়াত ৭২)।
আবু বাকরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তোমাদের কি অতি মহাপাপের কথা বলে দেব না?’ আমরা বললাম, ‘অবশ্যই বলুন হে আল্লাহর রসুল।’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছু শরিক করা এবং মাতা-পিতার অবাধ্য আচরণ করা।’ তারপর তিনি হেলান ছেড়ে উঠে বসলেন এবং বললেন, ‘শোনো! আর মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া।’ শেষোক্ত কথাটি তিনি বার বার বলতে থাকলেন। এমনকি অনুরূপ বলাতে আমরা [মনে মনে] বললাম, ‘যদি তিনি চুপ হতেন।’ (বুখারি, মুসলিম)।
জবানের হেফাজত করুন : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করুক না কেন তা লিপিবদ্ধ করার জন্য তত্পর প্রহরী (ফেরেশতা) তার কাছেই রয়েছে।’ (সূরা কাফ, আয়াত ১৮)।
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে আমাকে তার দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী (জিহ্বা) এবং দুই পায়ের মধ্যবর্তী (লজ্জা) স্থানের জামানত দেবে, আমি তার জন্য জান্নাতের জামিন হব।’ (বুখারি)।
রসুলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা কি জানো গীবত কী?’ সাহাবিরা বললেন, ‘আল্লাহ ও রসুলই অধিক অবগত।’ তিনি বললেন, ‘তোমার ভাইয়ের অসাক্ষাতে এমন কিছু বলা, যা সে অপছন্দ করে।’ আরজ হলো, ‘আমার ভাইয়ের মধ্যে যদি সেই দোষ থাকে যা আমি বলি?’ হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তুমি যা বর্ণনা কর তা যদি সত্যিই তার মধ্যে থাকে, তবে এটাই গিবত। আর তার মধ্যে যদি সেই দোষ না থাকে তাহলে তো তুমি তাকে অপবাদ দিলে।’ (মুসলিম)।
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার কোনো মুসলমান ভাইকে তার তওবাকৃত অপবাদের কথা উল্লেখ করে লজ্জা দেবে, সে নিজে সেই পাপ না করা পর্যন্ত মরবে না। (তিরমিজি)।
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি চুপ থাকে সে নাজাত পায়।’ (তিরমিজি)।
লেখক : ইসলামী গবেষক।