বুধবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বেপরোয়া মিয়ানমার

নিষেধাজ্ঞাই হবে সর্বোত্তম পথ

সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধে মিয়ানমারের ক্ষমতাদর্পী সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। মিয়ানমারে যখন মানবতা বিপন্ন হয়ে পড়েছে তখন পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলোর এমন চিন্তাভাবনা হতাশার মধ্যেও আশার আলো জাগিয়েছে। মিয়ানমারের জনসংখ্যার ৪০ ভাগই ১৪০টির বেশি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্য, রোহিঙ্গারা এ ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম। শত শত বছর ধরে তারা আরাকান বা রাখাইনে বসবাস করছে। আরাকানে বর্মি আধিপত্য কায়েমের আগে থেকেই সেখানে রোহিঙ্গাদের বসবাস। ব্রিটিশ আমলে পরিচালিত শুমারিতে আরাকানের রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর যেমন উল্লেখ রয়েছে তেমন ১৯৪৮ সালে বার্মার স্বাধীনতার সময় নাগরিকত্ব আইনে আরাকানে বসবাসকারী রাখাইন, রোহিঙ্গাসহ সব জাতিগোষ্ঠীকে আরাকানি হিসেবে চিহ্নিত করে নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এমনকি সামরিক শাসক নে উইনের সময় ১৯৬১ সালেও রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের জাতিগত সংখ্যালঘু হিসেবে বিবেচিত হতো। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী সে দেশের গণতান্ত্রিক সংস্কারকে বাধাগ্রস্ত করতে পরিকল্পিতভাবে বর্মি উগ্র জাতীয়তাবাদকে উসকে দিচ্ছে। অহিংসার প্রতিকৃতি বৌদ্ধ ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে রোহিঙ্গাবিরোধী ডামাঢোল সৃষ্টি করে ক্ষুদ্র এ জাতিগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে। এ গণহত্যাকে বৈধতা দিতে তারা আরসা নামে এক জঙ্গি সংগঠনের হামলাকে অজুহাত হিসেবে খাড়া করছে। রাখাইনে শান্তি বিনষ্টকারী জঙ্গি সংগঠন আরসার বিরুদ্ধে মিয়ানমার সরকার কিংবা সে দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর কড়া পদক্ষেপ নিয়ে সভ্য দুনিয়ার কিছু বলার নেই বা থাকা উচিতও নয়। কিন্তু গুটিকয়েক জঙ্গিকে দমনের নামে একটি ক্ষুদ্র জাতিকে যেভাবে তারা নিধনে উঠেপড়ে লেগেছে তা অপরাধ। এ অপরাধ কর্মকাণ্ডে মিয়ানমারের সেনা কমান্ডাররা যে জড়িত তা একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন গণহত্যায় জড়িত মিয়ানমার সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করলে তা তাদের অপরাধ কর্মকাণ্ড সামাল দিতে অবদান রাখবে বলে আশা করা যায়।  একইভাবে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সামরিক উপকরণ বিক্রি বন্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবা যেতে পারে। মিয়ানমারের সেনা প্রধানসহ সামরিক অধিনায়কদের বিদেশ সফরে নিষেধাজ্ঞা, তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা এবং বিদেশে থাকা সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার কথাও ভাবতে হবে। এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়াও বাঞ্ছনীয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর