শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

মানুষ ও ভাষা একে অপরের অনুষঙ্গ

মুহাম্মদ ওমর ফারুক


মানুষ ও ভাষা একে অপরের অনুষঙ্গ

পৃথিবীর প্রতিটি ভাষা কোনো না কোনো মানুষের মাতৃভাষা। ভাষা ছাড়া যেমন মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে না, তেমনি মানুষ ছাড়া কোনো ভাষার অস্তিত্বও অকল্পনীয়। মানুষ ও ভাষা একে অপরের অনুষঙ্গ।

সব ভাষাই আল্লাহ প্রদত্ত। এটি মহান আল্লাহর একটি কুদরত। আল্লাহ মানব জাতিকে যেমন বিভিন্ন অঞ্চলে এবং বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত করে সৃষ্টি করেছেন, তেমন তিনি তাদের বিভিন্ন ভাষাও দিয়েছেন। ইসলামের দৃষ্টিতে ভাষা হলো মানব জাতির জন্মগত অধিকারের পর্যায়ভুক্ত। মানব জাতির ভাষা, অঞ্চল, বংশ এবং গোত্র সবই আল্লাহর নির্বাচিত। আল্লাহর পছন্দের ওপর কারোর হস্তক্ষেপের অধিকার নেই। প্রত্যেক মানুষের কাছেই তার মাতৃভাষার চেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন আর কোনো ভাষা নেই। মানব শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মাতৃস্নেহে বেড়ে ওঠে এবং ধীরে ধীরে মায়ের ভাষা শিখে আস্তে আস্তে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করে। তাই মা, মাতৃভাষা আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। ভাষা-বৈচিত্র্যের প্রতি ইঙ্গিত করেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন— ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। এতে অবশ্যই জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শনাবলি রয়েছে।’ (সূরা রুম : আয়াত-২২)।

পবিত্র কোরআনের উক্ত আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কুদরতের যেসব নিদর্শন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে তার মধ্যে ভাষা অন্যতম। আকাশ ও জমিন সৃষ্টি তার শক্তির যেমন নিদর্শন মানুষের ভাষার বিভিন্নতাও আল্লাহর কুদরত। সে কারণে কোনো ভাষাকে মন্দ মনে করা কখনো সমীচীন হবে না। ইসলামে প্রয়োজনে যে কোনো ভাষা শিক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশুদ্ধভাবে মাতৃভাষা চর্চা করা প্রিয় নবী (সা.)-এর সুন্নত। তিনি বিশুদ্ধ আরবি ভাষী ছিলেন।

কোনো ভাষাকে বিশেষ ধর্ম বা বিশেষ এলাকার মনে করার দ্বারা ওই ভাষাকে খারাপ ভাবা কিংবা অবজ্ঞা করা ঠিক নয়। বাংলাভাষী সিংহভাগ মানুষ মুসলমান। অথচ এক সময় একশ্রেণির মুসলিম লেখক বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনা করতে গিয়ে হীনমন্যতায় ভুগতেন। তারা বাংলা বর্ণমালাকে বিজাতীয় বর্ণমালা বলে বর্জন করতেন। যারা এভাবে কোনো ভাষাকে অবজ্ঞা করেন মহান আল্লাহর সৃষ্টি রহস্য তাদের কাছে সুস্পষ্ট নয়।

সব ভাষা আল্লাহ প্রদত্ত। যে কোনো ভাষায় প্রার্থনা করলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তা সমভাবে বুঝতে পারেন। সবার মাতৃভাষাই আল্লাহর দরবারে সমান গ্রহণযোগ্য। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবিগণ এবং সব যুগের মনীষীগণ নিজ ভাষায় পণ্ডিত ছিলেন। ইসলাম প্রচারে তারা সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের মাতৃভাষাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। বাংলা ভাষার বিকাশে মুসলমান শাসকদের অবদান অনস্বীকার্য। তাদের আমলেই মধ্যযুগে সাধারণ মানুষের ভাষা রাজ দরবারের ভাষা হিসেবে মর্যাদা পায়। দুনিয়ার সব দেশের আলেমগণ মাতৃভাষায় কিতাবাদী রচনা করেছেন।  বাংলাদেশের আলেম, পণ্ডিত ও শিক্ষিত মানুষদের বাংলা ভাষায় ব্যাপক যোগ্যতা ও চর্চা থাকা বাঞ্ছনীয়। আল্লাহ সবাইকে মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার  তাওফিক দান করুন।

লেখক : ইসলামী গবেষক

 

সর্বশেষ খবর