প্রতি বছরই টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। মানুষকে আল্লাহর পথে আসার আহ্বান জানায় তাবলিগ জামাত। শুদ্ধ মানুষ হওয়ার শিক্ষাও দেয়। তাবলিগ জামাত আয়োজিত ৫৪তম বিশ্ব ইজতেমা আজ শুক্রবার শুরু হবে কহর দরিয়া খ্যাত তুরাগ তীরে। ১৮ ফেব্রুয়ারি তা শেষ হবে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে। আখেরি মোনাজাতে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে দোয়া করা হবে। বিশ্ব ইজতেমায় সমবেত মুসল্লিরা তাদের দাওয়াতি কাফেলাকে বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে আল্লাহর সহায়তা চাইবেন। তাবলিগের দাওয়াত নিয়ে যারা মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘোরেন তারা হলেন মহান স্রষ্টা কর্তৃক উল্লিখিত সেই বান্দা যাদের কথা সূরা আলে ইমরানের ১০৪ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে এমন একদল হোক যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎ কাজে নিষেধ করবে, এরাই সফলকাম।’ বিশ্ব ইজতেমা হলো ওই দাওয়াতদাতাদের ইজতেমা।
দাওয়াত ও তাবলিগের মূলনীতি সম্পর্কে আল কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আপন পালনকর্তার পথের প্রতি আহ্বান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরূপে এবং তাদের সঙ্গে বিতর্ক করুন পছন্দযুক্ত পন্থায়। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তাই ওই ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষভাবে জ্ঞাত রয়েছেন, যে তার পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং তিনিই ভালো জানেন তাদের, যারা সঠিক পথে আছে।’ সূরা নাহল, আয়াত ১২৫।
আল্লাহর প্রিয় হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর অনুসারীদের দাওয়াতি মেহনতে নিয়োজিত হওয়ার দিকনির্দেশনা দান করেছেন। বুখারি ও মুসলিমে হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা মানুষের সঙ্গে নম্র ব্যবহার কর, রূঢ় আচরণ করো না, সুসংবাদ দাও, ভীতসন্ত্রস্ত করো না।’ মূলত কীভাবে দীনের দাওয়াত হবে তার গাইডলাইন বর্ণিত হয়েছে ওই হাদিসে। আল্লাহর প্রকৃত প্রেমিকরা জান ও মাল উৎসর্গ করে তাবলিগের মেহনতে নিজেদের নিয়োগ করেন। আল্লাহ ও রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশিত পথে সবাইকে আসার জন্য আহ্বান করেন তারা। তারা ফরজ হুকুমগুলো যথাযথভাবে পালনের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন, রসুলের সুন্নত ভুলে গিয়ে যারা বিপথে চলছে, কিংবা সিদ্ধান্তহীনতায় হাবুডুবু খাচ্ছে, তাদের সঠিক পথের দিশা দেওয়ার চেষ্টা করেন তারা। জগদ্বিখ্যাত দারুল উলুম দেওবন্দের বুুজুর্গ মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) মানুষকে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের পথে আনার জন্য যে মেহনত শুরু করেন তা আজ দীন প্রতিষ্ঠার মহা আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। তাবলিগ জামাত পথভোলা মানুষকে আল্লাহ ও রসুলের পথের সন্ধান ও বিপথগামীদের সঠিক পথ দেখিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করছে। মানুষকে গুনাহ থেকে দূরে থাকতে উদ্বুদ্ধ করছে তাবলিগ জামাত। সৎ কাজের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনেও তারা মুমিনদের উদ্বুদ্ধ করছে। বিশ্বে শান্তি ও সহমর্মিতার পরিবেশ সৃষ্টিতেও অবদান রাখছে মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) প্রতিষ্ঠিত এই জামাত।
