বুধবার, ৮ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

রমজানের মতোই নেক কাজে কাটাব জীবন

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

রমজানের মতোই নেক কাজে কাটাব জীবন

আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ রমজান পর্যন্ত আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন। হাদিস থেকে জানা যায়, রমজানের চাঁদ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে রহমতের দুয়ার খুলে দেওয়া হয়। কবরবাসীর শাস্তি এক মাসের জন্য মাফ করে দেন আল্লাহ। হাদিসের এ কথা যে কত বাস্তব, কত প্রাণবন্ত প্রথম রোজার সকাল তার বড় প্রমাণ। আগের দিন আসরের জামাতেও মসজিদগুলো ছিল মুসল্লিশূন্য। যখনই পশ্চিমাকাশে মাহে রমজানের বাঁকা চাঁদ উঁকি দিয়েছে, হাদিসের ভাষায় রহমতের দুয়ার খুলে গেছে, হঠাৎ যেন কী হয়ে গেল। ছোট-বড়, যুবক-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ, আলেম-জালেম, ভালো-মন্দ, পাপী-তাপী এক কথায় প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে কে যেন এক আশ্চর্য পরিবর্তন এনে দিল। অন্য দিন আজান কখন শুরু হয়, কখন শেষ হয়- খোঁজ রাখে না কেউ। রমজানের প্রথম দিন আজানের আগেই মসজিগুলো ভরে যাওয়ার দৃশ্য চোখ জুড়িয়ে দিয়েছে। রমজান ছাড়া অন্য কোনো মৌসুমে মসিজদে এত মুসল্লি দেখা যায় না।

মূলত শবেবরাতের পরই মুসলমানদের মনে রমজানের হাওয়া বইতে শুরু করে। চারদিকে কেমন যেন রোজা রোজা ভাব ছড়াতে থাকে। শবেবরাতের পর এক দিন যায় তো পুরো মুসলিম বিশ্ব বলে ওঠেÑ এক দিন এগিয়ে এলো মাহে রমজান। বিশ্বকণ্ঠের সঙ্গে সুর মিলিয়ে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির মুসলমানরাও রমজানের প্রহর গুনেছে আনন্দের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে। দীর্ঘ অপেক্ষা আর আনন্দের প্রস্তুতি শেষে আমরা এখন রোজা পালন করছি। তাই আবারও আল্লাহর কদমে শুকরিয়ার সিজদা দিয়ে বলছি, আলহাদুলিল্লাহ।

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রোজার মাসে শয়তানকে শৃঙ্খলায় নিয়ে আসা হয়। অন্যান্য মাসে সে যতটা বেপরোয়া হয়, যতটা স্বেচ্ছাচারী হয়, মাহে রমজানে তত বেশি বেপরোয়া সে হতে পারে না। একটা সীমানা আল্লাহ তার জন্য বেঁধে দেন। তাই আমরা দেখতে পাই, রমজানের পুরোটা সময় পাপ-পঙ্কিলতা একেবারেই কমে যায়। অশ্লীলতা-বেহায়াপনা চোখে পড়ে না বললেই চলে। চারদিকে ভালো কাজ, নেক কাজের প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। মানুষের আচার-ব্যবহার দেখলে মনে হয়, কোনো এক অলৌকিক জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় বদলে গেছে তার ভিতর-বাইর। অপূর্ব ধৈর্য, সহনশীলতা, পরোপকারী মনোভাব, অন্যের পাশে এসে দাঁড়ানোর প্রতিটি দৃশ্য মনে করিয়ে দেয় পুরো দেশ যেন আল্লাহর রহমতের অপেক্ষায় দিন গুনছে। মাহে রমজানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দৃশ্য হলো, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সর্বস্তরের তরুণের মনে আল্লাহপ্রেম জেগে ওঠে। তারাবি-তাহাজ্জুদসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে তরুণদের উপস্থিতি এ দেশের ভবিষ্যৎ যে ইসলামের উর্বর ভূমি হতে পারে তার ইশারা দেয়। তরুণীদের হিজাবের প্রবণতা আমাদের মনে আশা জাগায়। টিভি-রেডিও, হাট-বাজার, ঘরে-বাইরে সবখানে শুধু কোরআনের তিলাওয়াত আর তিলাওয়াত। চারদিকে কোরআনের সুমধুর তিলাওয়াত, তরজমার ধ্বনি বলে দেয় পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহৎ মুসলিম দেশে কোরআন নাজিলের মাস রমজান বয়ে যাচ্ছে। দুপুরের পর থেকেই এক ধরনের প্রেমময় ব্যস্ততা দেখা যায় রোজাদারের মনে। বাসাবাড়িতে, দোকানে-অফিসে যার যেখানে সন্ধ্যা হয়, দুপুর থেকেই সেখানে ইফতারের ফিকির শুরু হয়ে যায়। অল্প অল্প করে ইফতারের আয়োজন চলতে থাকে সবখানে। সে কি আনন্দ! সে কি উৎসাহ! যেন ইফতারিই রোজাদারের বড় আকর্ষণ। কিন্তু ইফতার শেষে আপনার এ ধারণা ভেঙে যাবে। সারা দিনের ক্লান্ত-শ্রান্ত রোজাদারের দিকে তাকালে মনে হবে, বোধহয় এবার তার বিশ্রাম দরকার। কিন্তু না, রোজাদার প্রস্তুতি নেয় তারাবির জন্য। দীর্ঘ সময় কোরআনের প্রাণবন্ত তারাবিতে ডুবে থাকে সে। তিলাওয়াতের স্বাদ গ্রহণ করে সবাই। এবার সে বিশ্রাম নেয়। কিছুক্ষণ পরই আবার সাহরির আয়োজন। তারপর ফজর শেষে কাজের আগে অল্প বিশ্রাম। এভাবেই কঠিন সাধনার মাধ্যমে সিয়াম পালন করে ধর্মপ্রাণ বান্দা।

পুরো এক মাস এমন কঠিন রুটিনের মধ্য দিয়ে আমরা সিয়াম পালন করব। যেমন পালন করেছিল আমাদের পূর্ববর্তী প্রজম্ম। উদ্দেশ্য একটাই- যেন আমরা মুত্তাকি হতে পারি। যেমন আল্লাহ বলেছেন, ‘ওহে বিশ্বাসীরা! তোমাদের ওপর সিয়াম সাধনা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ সূরা বাকারাহ, আয়াত ১৮৩।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর