সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

কেয়ামতের দিন পুরস্কৃত হবেন রসুল প্রেমিকরা

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

কেয়ামতের দিন পুরস্কৃত হবেন রসুল প্রেমিকরা

পরীক্ষা দিয়ে রেজাল্টের আগে থেকেই টেনশনে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে। গলা শুকিয়ে যায়। রেজাল্ট খারাপ হলে কী হবে? যারা ভালো রেজাল্ট করে তারা আত্মীয়স্বজন, শুভাকাক্সক্ষীদের জানায়। আনন্দ করে। যে খারাপ করে রেজাল্ট পাওয়া মাত্রই সে ভাবে কোথাও যদি পালিয়ে যাওয়া যেত। যদি রেজাল্ট না দিত। যখন জানাজানি হয়ে যায় সে ফেল করেছে, সমাজের কাউকে সে মুখটিও দেখাতে চায় না। বন্ধুদের আড্ডায়, ফেসবুক-টুইটার কোথাও সে নিজেকে আর প্রকাশ করে না। আত্মীয়স্বজন-বন্ধুবান্ধব সবাই তাকে ধিক্কার দিতে থাকে। ছিঃ ছিঃ এত সুযোগ-সুবিধা পেয়েও তুমি ফেল করেছ। তখন সে ভাবে, হায়! আমার শিক্ষক-অভিভাবকরা কত করে আমাকে পড়ার কথা বলেছে, বাজে সময় নষ্ট করতে নিষেধ করেছে; তাদের কথা শুনলে আজ এমনটি হতো না।

উপরের দুটি চিত্রই আমাদের পরিচিত। দুনিয়ার রেজাল্ট নিয়ে যেমন পরিস্থিতির শিকার হতে হচ্ছে, ঠিক একই পরিস্থিতির শিকার হতে হবে কেয়ামতের দিনও। আল্লাহ বলেন, ‘যার আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হবে তার হিসাব সহজ করা হবে। সে দেখবে, তার রেজাল্ট খুবই চমৎকার। আনন্দে আত্মহারা হয়ে সে খুঁজতে থাকবে তার বাবাকে। তার জনম দুঃখিনী মাকে। কোথায় তার প্রিয়জনরা। সবাইকে সে তার ফলাফল জানাবে। শুধু তাই নয়, সে বলবে, মা! বাবা! আমার বন্ধুরা! দেখ  দেখ, কত চমৎকার রেজাল্ট পেয়েছি আমি। একটু হাতে নাও। পড়েই দেখ না আমার আমলনামাটা। (সূরা ইনশিকাক : ৭-৯ এবং সূরা হাক্কাহ : ১৯-২০)।

চূড়ান্ত ফলাফলের দিন যে ফেল করবে তার অবস্থাও বলে দিয়েছেন আল্লাহতায়ালা। ‘যার আমলনামা পেছন দিক দিয়ে দেওয়া হবে, তার বাম হাত বুকের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়ে ঘাড়টা মটকিয়ে দেওয়া হবে। তারপর বলা হবে, পড়!  তোমার এ ফলাফল, জীবন পরীক্ষার খাতা তুমিই পড়। তখন সে বলবে, হায়! যদি আজ রেজাল্ট না দিত। যদি আমি আমার রেজাল্ট না জানতাম। আমার তো সম্পদ-শক্তি কিছুই কাজে আসল না। মৃত্যু! তুমি এসে আমাকে আবার মেরে ফেল। মাটি তুমি ফেটে যাও। আমি তোমার ভিতর লুকিয়ে পড়ি। এ লজ্জামাখা মুখ আমি কাউকে দেখাতে চাই না। (সূরা হাক্কাহ : ২৫-২৮ এবং ইনশিকাক : ১০-১১)।

কেয়ামতের দিন যারা গোল্ডেন এ প্লাস পাবে তাদের জন্য সংবর্ধনার ব্যবস্থা থাকবে। আল্লাহ বলেন, ‘জান্নাতিদের শুভেচ্ছা-স্বাগত জানাতে জানাতে জান্নাতে নিয়ে যাওয়া হবে। ফেরেশতারা বলবে, আপনাদের স্বাগতম। চিরদিনের জন্য চির শান্তির আবাস জান্নাতে প্রবেশ করুন। জান্নাতিরা বলবে, সব প্রশংসা এবং কৃতিত্ব আল্লাহর। আমাদের সঙ্গে করা ওয়াদা সত্য দেখতে পাচ্ছি। আসলে আল্লাহভীরুদের জন্য এমন প্রতিদানই কাম্য। (সূরা জুমার : ৭৩-৭৪)। আর যারা ফেল করবে, লজ্জায় মরে যেতে চাইবে কিন্তু মরবে না, তাদের হাতে ও গলায় বেড়ি পরিয়ে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হবে। একটু পথ এগিয়েই তারা না যাওয়ার জন্য গো ধরবে। তখন ফেরেশতারা তাদের হাতের লাঠির কারুকাজ দেখাবে আর বলবে, ‘তোমাদের কাছে কি আল্লাহর বার্তাবাহক আসেননি? তিনি কি বলেননি একদিন  কেয়ামত হবে। আল্লাহর হুকুম মতো না চললে এভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হবে। চোখ-মুখ শক্ত করে তারা বলবে, আজ আমরা নিজেরাই নিজেদের ধিক্কার জানাই। ছিঃ ছিঃ যদি নবীদের কথা শুনতাম তাহলে তো আজ এ দিনটি এমনভাবে দেখতে হতো না। (সূরা জুমার : ৭১)। হাশরের দিন মা সন্তানকে চিনবে না। ভাই বোনকে চিনবে না। বাবা সন্তানকে, সন্তান বাবাকে পরিচয় দেবে না। স্বামী-স্ত্রী একজন আরেকজন থেকে পালিয়ে বাঁচবে। সূরা আবাসায় এ কথা বলা হয়েছে। এমন কঠিন সময়ে আল্লাহ-আল্লাহর রসুলই আমাদের আপন হবেন। বান্দা ও উম্মত বলে পরিচয় দেবেন। যদি আমরা এ দুই দরদির সঙ্গে একটু সম্পর্ক করতে পারি তবেই আমাদের জীবন সার্থক, আখেরাত সুন্দর ও শান্তির হবে। আসুন! আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কটাকে মজবুত করি। রসুল প্রেমের মালা গলায় পরি। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন।  আমিন।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর