রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

শুধু বলেই যাব শেয়ারবাজার ব্যাংক লুট কাহিনি

নঈম নিজাম

শুধু বলেই যাব শেয়ারবাজার ব্যাংক লুট কাহিনি

ব্যাংক লুট কারা করে? কীভাবে করে? একটা গল্প শোনাই। গল্পটা হলো বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে এক ব্যাংক গ্রাহককে নিয়ে। ব্যাংকটির নাম এবিএম আম্র্রো। একদিন ব্যাংকে একজন গ্রাহক এলেন। কথায়, চলনে, আচরণে ভীষণ বিনয়ী। অসাধারণ ব্যবহার। সারাক্ষণ হাসিখুশি। ব্যাংকের নিরাপত্তারক্ষী থেকে শুরু করে ম্যানেজারÑ সবার সঙ্গেই তার ভাব। লেনদেন করতে এলেই সবাইকে সালাম দেন। গুড মর্নিং, গুড আফটার নুন বলেই পকেট থেকে বের করতেন চকলেট। তারপর সবার হাতে আলাদা করে তুলে দিতেন। দারুণ ব্র্যান্ডের সব চকলেট মুখে দিয়ে সবাই দিনের কাজ শুরু করতেন। তারপর প্রশংসা করতেন এই গ্রাহকের। ব্যাংকে এভাবেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। ব্যতিক্রম এই গ্রাহকের নাম কার্লোস হেক্টর ফ্লোমেনবাউম। হাসিখুশি, প্রাণবন্ত মানুষ কার্লোস। ব্যাংকে সবার সঙ্গে কথা বলতেন। আড্ডা জমাতেন। তারপর টুকটাক লেনদেন করে চলে যেতেন। তার ব্যবহারে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই মুগ্ধ। ভালোই চলছিল। একদিন ব্যাংকে এসে কার্লোস ঘোষণা দেন নতুন স্বাদের চকলেট এনেছেন সবার জন্য। সবাইকে খেতে হবে এ চকলেট। একবার খেলে সারা জীবন টেস্ট লেগে থাকবে। কারও মনে কোনো সন্দেহ এলো না। দীর্ঘদিন থেকে চকলেট-পাগল মানুষটিকে সবাই চেনেন। সব সময় নিত্যনতুন চকলেট নিয়ে আসেন ব্যাংকে। নতুন কিছু না। তাই এবারও সবাই কার্লোসের দেওয়া চকলেট খেলেন। কিন্তু কেউ জানত না এ চকলেটে মেশানো ছিল চেতনানাশক মেডিসিন। একবার খেলে তলিয়ে যেতে হবে গভীর ঘুমে। হলোও তাই। চকলেট খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে গেলেন সবাই। যারা ঘুমাতে বিলম্ব করছিলেন তাদের মুখে স্প্রে করে ঘুম পাড়ালেন কার্লোস। তারপর ব্যাংক থেকে সব অর্থ, সোনাদানা লুটে নিলেন। মোট ২১ হাজার কোটি টাকা সমমূল্যের মুদ্রা ও সোনা ‘নাই’ হয়ে গেল এবিএম আম্রো ব্যাংকের। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যাংক ডাকাতি ছিল এটি। এখনো ব্যাংকিং খাতের নেতিবাচক উদাহরণ টানতে এই ব্যাংকের ডাকাতির উপমা টানা হয়। ভয়ঙ্কর এই ডাকাতির পর তদন্ত শুরু হলো। পুলিশ ব্যাপক তৎপরতা চালাল। কিন্তু দীর্ঘ তদন্তে কার্লোসের আর কোনো হদিস পেল না কেউই। চকলেটমামা গায়েব হয়ে গেলেন। কোথায় গেলেন কেউ জানেন না। ইন্টারপোলকে জানানো হলো। রেড অ্যালার্ট জারি হলো। সারা বিশ্বের অপরাধবিজ্ঞানীরা এ নিয়ে অনেক কাজ করলেন। অনেক ব্যাখ্যা তৈরি করলেন। অনেক গবেষণা হলো। কিন্তু ব্যাংকের অর্থ আর ফেরত এলো না। বাংলাদেশের কোনো ব্যাংকে এভাবে অবশ্য কোনো ডাকাতি হয়নি। তবে আমাদের ব্যাংকগুলোর অর্থ লোপাটের স্টাইলটা একটু ভিন্ন। এখানে আনন্দ উৎসবে ঋণের নামে অর্থ লোপাট হয়। এ লোপাটকে ডাকাতি বলব কিনা বুঝতে পারছি না। তবে বিস্মিত হই যখন দেখি কিছু একটা বুঝিয়ে অখ্যাত অজ্ঞাত ব্যক্তিরা ঋণ নিয়ে চলে যায়। আর ফেরত আসে না। সরকারি, বেসরকারি উভয় ব্যাংক থেকেই হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণের নামে ওরা লুটে নেয় ব্যাংক থেকে। শুধু গ্রাহক সেজে এ লুট হয় না। অনেক সময় ব্যাংকের মালিকরাও নামে-বেনামে ঋণ নেন। এ ঋণ কোনো দিন ফেরত আসবে কিনা কেউ বলতে পারবে না। কারণ কিছু মানুষ ব্যাংকের মালিকই হন লুটের জন্য।

ব্যাংক লুট, ডাকাতি নিয়ে অনেক বইপত্র পড়েছি। সিনেমা দেখেছি। অ্যানালগ যুগে ব্রিটেন, আমেরিকায় ব্যাংক ডাকাতি হতো। এ নিয়ে গল্প-উপন্যাস লেখা হতো। ওয়েস্টার্ন সিরিজগুলোর বর্ণনা ছিল টেনশনে ঠাসা। শুধু গল্প বা উপন্যাস নয়, বাস্তবেও পশ্চিমা দেশে ব্যাংক ডাকাতি হতো। উন্নত বিশ্বে এখন আর ব্যাংক ডাকাতি তেমন হয় না। ব্যাংকিং টুকটাক ডিজিটাল অপরাধ হয়। এ অপরাধ দমনে তারা কঠোর অবস্থানে। এ কারণে ব্যাংক থেকে অবাধে ঋণের নামে টাকা নেওয়ারও সুযোগ নেই। বাংলাদেশ সব সময় ব্যতিক্রম। ব্যাংকিং খাত আলাদা কী করে হবে? হাজার হাজার কোটি টাকা নামে-বেনামে ঋণ হিসেবে ব্যাংক থেকে চলে যায়। অনেক ব্যাংক মালিকও ঠান্ডা মাথায় এ কাজে জড়িয়ে পড়েন। ফারমার্স ব্যাংকের তো নামই বদল করতে হয়েছে। আরও অনেক বেসরকারি, সরকারি ব্যাংকের কান্ড কীর্তি মানুষ দেখেছে, দেখছে। আজকাল কোনো কিছুতেই কেউ বিস্মিত হয় না। আমাদের অনুভূতিশক্তি কমে যাচ্ছে। ব্যাংক মালিকরা ঋণ দেন পরস্পরকে। ভাগবাটোয়ারা করেন সোমনাথ মন্দির লুটের মতো। আন্তর্জাতিক ব্যাংক ডাকাতিকেও হার মানায় অনেকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা। সত্যিকারের ব্যবসায়ীরা ঋণ পান না। হয়রানিতে পড়েন। কিন্তু লুটেরাদের কোনো সমস্যা হয় না। তাদের জন্য অনেক পথ খোলা। দেশটার প্রতি মায়া-মহব্বত নেই কারোরই। হলমার্কের মালিকরা আটক হলেন। কিন্তু ব্যাংকের টাকা কীভাবে ফেরত আসবে সে ব্যবস্থা কেউ করেনি। বড় কেলেঙ্কারির মহানায়করা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। অনেকে বেশির ভাগ সময় বিদেশ থাকেন। তাদের দেখে বোঝার উপায় নেই কীভাবে তারা ব্যাংক খালি করছেন। নামে-বেনামে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে তা জমা রেখে ঋণ নিচ্ছেন। বড়দের দেওয়া বন্ধকি সম্পত্তি যাচাই হয় না। ভুয়া এফডিআরেও ঋণ দিয়ে দেওয়া হয়। যোগসাজশে সবই হয়। ব্যাংকের বড় কর্তারা নীরবে কাজ করেন, আর অনেক সাধারণ ব্যাংকার অসহায় হয়ে নির্দেশ পালন করেন। রাঘববোয়ালদের কিছুই হয় না। তারা থাকেন অনেক ওপরে। এটাই কঠিন বাস্তবতা। রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি ব্যাংকে পরিচালক ও মালিকরাই সবকিছু। তাদের নির্দেশে জালিয়াতি হয়। আর জেল খাটেন নিরীহ ব্যাংকাররা। এমডি, চেয়ারম্যান, পরিচালকদের কিছুই হয় না। ঋণের টাকা বিদেশে পাচারকারী আড়ালের মাফিয়ারাও বহাল থাকেন। এভাবেই চলছে দিনের পর দিন। বছরের পর বছর। সঠিক মনিটরিং কোথাও নেই।

মনিটরিংয়ের অভাবে ইংল্যান্ডের নর্দান ব্যাংকে একবার বড় ডাকাতি হয়েছিল। বেশিদিন আগের কথা নয়। ২০০৪ সালে বড়দিনের আগে ব্যাংকের ম্যানেজারের বাড়িতে গিয়ে ডাকাতরা হানা দেয়। তার পরিবারকে জিম্মি করে। নির্দেশ দেয় ব্যাংক খুলে দিতে। তারপর ডাকাতরা তাদের কাজ সেরে নেয়। একই রকম আরেকটি ঘটনাও আছে ইংল্যান্ডে। এটাও বেশিদিন আগের কথা নয়। ২০০৬ সালের দিকে ব্যাংকের সবাইকে বেঁধে ফেলে ডাকাতরা। তারপর সব লুটে নেয়। এক ঘণ্টা পর এক নিরাপত্তারক্ষী নিজেকে মুক্ত করে পুলিশে খবর দেন। ততক্ষণে ডাকাতরা উধাও। পুলিশ এসে কাউকে পায়নি। খবর নিয়ে দেখা যায়, এই ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ইতালির প্লেবয় নামে খ্যাত ভ্যালোরি। ইউরোপের দেশে দেশে তার বিরুদ্ধে ৫০টির বেশি ব্যাংকে ডাকাতির অভিযোগ ছিল। ইংল্যান্ড, আমেরিকার ডাকাতদের সঙ্গে আমাদের ব্যাংক লুটেরাদের দেখা হয়নি ভাগ্য ভালো। দেখা হলে ইউরোপ, আমেরিকার ব্যাংকিং খাতের খবর ছিল। আমাদের লুটেরারা পরামর্শ দিতেন এত কষ্ট করে ডাকাতির কী দরকার। এতে থানা, পুলিশ, মিডিয়া অনেক ঝামেলা। মানুষ জানাজানি বেশি হয়। সমাজে আতঙ্ক ছড়ায়। তার চেয়ে কম ঝামেলায় পারস্পরিক যোগসাজশে ঋণ নেওয়ার নামে লুট অনেক বেশি সহজ। এখানে কারও কিছু বলার নেই। ব্যাংকগুলো হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়ে দেয় অখ্যাত-অজ্ঞাত ব্যক্তিদের। ব্যবসা-বাণিজ্যে যাদের অতীত নেই, বর্তমানও নেই। বিসমিল্লাহ গ্রুপের মতো অনেক লুটেরাই এই অর্থ নিয়ে বিদেশে চলে গেছেন। আর ফিরবেন না। তাদের কোনো শিল্পায়ন করতে হয় না। ভুয়া স্থাবর সম্পত্তি দেখালেই হয়। ব্যাংক কোনো কিছু শনাক্ত করে না। আর ব্যাংকের মালিক হলে তো কথাই নেই। সরকারি ব্যাংকগুলো নীরবে শেষ হয় বেসিক ব্যাংকের মতো। আর বেসরকারি হলে এক পর্যায়ে ফারমার্স ব্যাংকের মতো নামই বদল করতে হয়।

বড় ঋণ নিয়ে আরেকটা পুরনো গল্প আছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির। ১৭৭২ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ৪ লাখ পাউন্ডের ঋণের জন্য আবেদন করে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের কাছে। পুরো ব্যাংকে হৈচৈ পড়ে যায়। এই কোম্পানি ব্যবসার নামে এসে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল দখলে নিয়ে লুটপাট করে ব্রিটেনে ব্যাপকভাবে আলোচিত। সরকারেরও নীরব সমর্থন রয়েছে লুটেরা কোম্পানিটির প্রতি। সব মিলিয়ে দখলকৃত অঞ্চল, দেশ নিয়ন্ত্রণে রাখতেই ঋণের জন্য আবেদন। ব্যাংক বৈঠকে বসে ঋণ দেওয়া নিয়ে। নথি খুলে দেখা গেল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে ব্যক্তিগত বিশাল বাহিনী গড়ে তুলতে চায়। এ কারণে ঋণের পরিমাণ বাড়াতে আবেদন করেছে। অন্য কিছু নয়। শিল্পায়ন বলে কিছু নেই। ৪ লাখ পাউন্ডের আবেদনের ১৫ দিন পর ব্যাংককে কোম্পানি আবার জানায়, আপাতত ৩ লাখ হলেই চলবে। ব্যাংক জানায় ২ লাখ পাউন্ডের ব্যবস্থা করতে পেরেছে। এ ২ লাখ কোম্পানিকে দিতে পারবে। পরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি জানায়, তাদের আরও ১০ লাখ পাউন্ডের প্রয়োজন। দ্রুত এই ছাড় করতে হবে। সরকারও এ নিয়ে বিতর্কে জড়ায়। সংসদেও আলোচনা যায়। তখন এডমন্ড বার্ক সরকারি প্রতিবেদনে লিখেন, ‘এই অতিলোভী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আর্থিক সমস্যা একদিন সরকারকে রসাতলে নিয়ে যাবে।’ ১৭৬৭ সালে সংসদের বিরোধিতার পরও ৪ লাখ পাউন্ড প্রদান করে কোম্পানিকে। এর পরের ইতিহাস সবার জানা। কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্ষোভের আগুন বাড়তে থাকে ভারতে। দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে কোম্পানির পরিচালক ও তাদের নিয়োজিতরা। ক্লাইভের উত্তরসূরি বাংলার গভর্নর ওয়ারেন হেস্টিংসকে লুটপাটের দায়ে অভিযুক্ত করে ব্যবস্থা নেয় ব্রিটিশ সংসদ। তার বিরুদ্ধে গৃহীত পদক্ষেপ থমকে দিয়েছিল সবাইকে। অনেকে ধারণাই করতে পারেনি মহাক্ষমতাধর হেস্টিংসের বিরুদ্ধে এভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরের ইতিহাস আরও কঠিন। ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের পর সংসদ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বিলুপ্ত করে। কোম্পানির সব সম্পদ ব্রিটিশ সিংহাসনের অধীনে নিয়ে নেওয়া হয়। কোম্পানির পরিচালকদের পরিবর্তে ভারতের শাসক হন রানী ভিক্টোরিয়া। পরবর্তী ১৫ বছরের মধ্যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ইতিহাস বলে, ঋণ নিয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিও টিকতে পারেনি।

আমাদের ব্যাংকগুলোকে নতুন করে ভাবতে হবে অনেক কিছু। অর্থ মন্ত্রণালয়কে নিতে হবে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ। একইভাবে সতর্কতায় যেতে হবে দেশের পুঁজিবাজারকেও। লুটেরারা পুঁজিবাজারে বার বার হানা দিয়ে সব শেষ করে দিয়েছে। যেন শেয়ারবাজার লুটে নেওয়া আরেকটি সহজ কাজ। লুটপাটের কারণে আজ আমাদের শেয়ারবাজার প্রশ্নবিদ্ধ। শেয়ার কেলেঙ্কারির নায়কদের সবাই চেনেন। সবাই জানেন। মুম্বাইয়ের শেয়ার কেলেঙ্কারির খলনায়ক হরশদ মেহতা নিস্তার পাননি। কিন্তু বাংলাদেশের খলনায়কদের কিছুই হয় না। তারা রেহাই পেয়ে যায় বার বার। তাদের শক্তির উৎস অজ্ঞাত। লুটেরাদের কা-কীর্তি দেখেই মানুষের মাঝে হতাশা তৈরি হয়। সমাজে ছড়িয়ে পড়ে অসংগতি। বৈষম্য বেড়ে যায়। তৈরি হয় সামাজিক অনাচার। ন্যায়পরায়ণতা হারিয়ে যায়। মানুষে মানুষে ব্যবধান বাড়ে। সুষম বণ্টনের স্বপ্ন দেখতে পায় না নিরীহ গরিব মানুষ। নীতি-নৈতিকতা হয়ে যায় মুখের বুলি। অসততায় রেকর্ড সৃষ্টি হয়। দেশে সর্বস্তরে অনাচার বেড়ে যায়। ক্যাসিনোর নামে জুয়ার রেকর্ড তৈরি হয়। ক্রীড়াঙ্গনে খেলাধুলা তখন আর হয় না। ক্যাসিনোর প্রভাবে রাজনৈতিক দলে কমিটি বেচাকেনা হয়। পদপদবি মেলে অর্থের বিনিময়ে।

শুধু রাজনীতি নয়, সামাজিক অনাচারও বাড়তে থাকে। কথায় কথায় মানুষ খুন হয়। বাবা-মা খুন করেন সন্তানকে। আর সন্তান খুন করে বাবা-মাকে। শুধু সন্দেহের বশে বিশ্ববিদ্যালয়ে পিটিয়ে মারা হয় নিরীহ মেধাবী ছাত্রকে। এভাবে নৃশংসতা দিন দিন বাড়ছে। মাঝে মাঝে ভাবী, আমরা কোথায় ছিলাম। কোথায় যাচ্ছি। মানবিক মূল্যবোধ কেন শেষ হয়ে গেল। কারও মায়াদয়া বলে কিছু নেই। চোর শুনলে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয় উৎসব করে। পকেটমার শুনলে দেওয়া হয় গণপিটুনি। জমি নিয়ে বিরোধে মুহূর্তেই খুন-খারাবি। ভাই চেনে না ভাইকে। কারণে অকারণে পাড়ায় পাড়ায় ঝগড়া-বিরোধ। আত্মীয়স্বজন সম্পদের জন্য পর হয়ে ওঠে মুহূর্তে। হিংসা-বিদ্বেষ আর ঈর্ষাপরায়ণতা সব সম্পর্ক ধ্বংস করে দেয়। এক অদ্ভুত যুগে হাঁটছি আমরা। দয়ামায়াহীন, ঈর্ষাপরায়ণতা আর স্বার্থপরতার এই যুগে কেউ কারও নয়। সবাই যার যার। তার পরও মানুষ কেন এত ধ্বংসাত্মক খেলায় লিপ্ত হয় বুঝি না। আজ মরে গেলে কাল কিছুই থাকবে না। কেউ বুঝতে চায় না। এক অদ্ভুত প্রতিযোগিতা চলছে সমাজের সর্বস্তরে।

 

                লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

সর্বশেষ খবর