টানা ১০ দিনের সাধারণ ছুটি উপলক্ষ করে গত বুধবার সারা দেশেই কর্মজীবী মানুষের এক বড় অংশের মধ্যে ছিল যেভাবেই হোক ঘরে ফেরার প্রবণতা। করোনাভাইরাসের কবল থেকে মানুষকে রক্ষায় ১০ দিন সবাই যাতে ঘরে থাকতে পারে সেজন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। সামাজিক সংক্রমণ রোধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হলেও উদ্দেশ্য পূরণে কতটা সফল হবে সে সংশয়ও ইতিমধ্যে দানা বেঁধে উঠেছে। বৃহস্পতিবার থেকে সড়কপথে গণপরিবহন চলা বন্ধ হয়ে যাবে- এটি জেনে বুধবার সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত রাজধানীর সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসে ঠাসাঠাসি করেই ঢাকাবাসী ছুটেছে গ্রামের পথে। গাড়িতে ওঠার হুড়োহুড়িতে করোনায় সংক্রমিত হওয়া রোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনাও মানেনি কেউ। এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে টার্মিনালগুলোয় কোনো উদ্যোগও দেখা যায়নি। গণপরিবহন না পেয়ে কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে গাড়ি ও বাস ভাড়া করেও গ্রামে গিয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, গণপরিবহন ব্যবহার ও জনসমাগমের ফলে করোনাভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি বেড়েছে। ঢাকা থেকে ঠাসাঠাসি করে গ্রামে যারা গিয়েছেন, তারা নিজের পরিবারের সঙ্গে গোটা গ্রামকেও ঝুঁকিতে ফেলছেন। শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী ফেরিঘাট ও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটেও ছিল যাত্রীর উপচে পড়া ভিড়। কোনো কোনো ফেরিতে যাত্রীর চাপে পর্যাপ্ত গাড়ি ওঠানো সম্ভব হয়নি। ফেরিতে ওঠাকে কেন্দ্র করে ঘাটে যাত্রীদের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। বুধবার ঘরমুখো মানুষের অতি আগ্রহে পরিবহন চালকরা ছিল চাপের মুখে। এদিন সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ১৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহতের সংখ্যাও কম নয়। বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবনে এসব দুর্ঘটনা মর্মবেদনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকার পোশাকশিল্প বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে। কর্মীরা যাতে সময়মতো বেতন পায় সে ব্যবস্থাও করেছে। এসব ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে করোনাভাইরাসের আগ্রাসন ঠেকাতে। কিন্তু সাধারণ মানুষের অসচেতনতায় তা পন্ড হলে তা হবে আত্মঘাতী এবং সবার জন্য দুর্ভাগ্যজনক; যা রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সবাই যত্নবান হবেন- এমনটিই প্রত্যাশিত।