শুক্রবার, ৩ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

এমপি হওয়ার সহজ পাঠ!

প্রভাষ আমিন

এমপি হওয়ার সহজ পাঠ!

আশির দশকের মাঝামাঝি। দেশ তখন স্বৈরাচারের দখলে। আমরা কলেজে পড়ি। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে উত্তাল রাজপথ। তখন ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়া নয়, জীবনের মূল লক্ষ্য স্বৈরাচার হটানো। ক্লাস রুমের চেয়ে রাজপথ বেশি টানে, পড়ার চেয়ে স্লোগান মুখস্থ হয় তাড়াতাড়ি। অবশ্য ঢাকায় এসে রাজনীতিটা আর করা হয়নি। রাজনীতি থেকে দূরে সরে সাংবাদিকতাকেই বেছে নিই পেশা হিসেবে। তবে আমার কাছে এখনো মনে হয়, রাজনীতিই হলো নীতির রাজা। মানুষের সেবা করার সবচেয়ে সরাসরি উপায়। আমরা যখন রাজনীতি করেছি, তখন রাজনীতি করে এমপি-মন্ত্রী হওয়ার ভাবনাটাই অসম্ভব ছিল। কারণ স্বৈরাচার এরশাদের কবলে দেশ বন্দী ছিল। তবে যারা রাজনীতি করেন, তারা ভবিষ্যতে দলের মনোনয়নে নির্বাচন করতে চান; চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর, মেয়র, এমপি, মন্ত্রী হতে চান। এ চাওয়াটা দোষের নয়। ছাত্র রাজনীতি করেন এমন অনেকের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, তারা ভবিষ্যতে নির্বাচন করতে চান। তাই এখন থেকেই এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, তাদের জন্য কাজ করার চেষ্টা করছেন। দেখে আমার খুব ভালো লাগে। সবাই যদি এভাবে মানুষের হৃদয় জয় করে তাদের প্রতিনিধি হওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে দেশটাই বদলে যাবে। তবে চাইলেই তো আর মনোনয়ন পাওয়া যায় না, মনোনয়ন পেলেও নির্বাচিত হওয়া যায় না। দেশে জাতীয় সংসদে সরাসরি আসন ৩০০টি। বড় দলগুলোয় এমপি হওয়ার মতো যোগ্য নেতা আছেন কয়েক হাজার। কোনো কোনো নির্বাচনী এলাকায় নেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়, গ্রুপিং হয়, মারামারিও হয়। এসবই রাজনীতির অংশ। একজন মানুষ যদি ২০ বছর বয়সে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন এবং এমপি হওয়ার লক্ষ্যের দিকে আগান তাহলে দেখা যায় ৬০ বছর বয়সে গিয়ে তিনি দলের মনোনয়ন পান। তার মানে ৪০ বছর তাকে লক্ষ্যের দিকে এগোতে হয়, সফল হতে কাজ করতে হয়। তবে মনোনয়ন পেলে বা নির্বাচন করলেই যে তিনি জিতে যাবেন, তারও কোনো গ্যারান্টি নেই। রাজনীতির মাঠটা এমনই। এ খেলায় কোনো রানার্স-আপ নেই। এক ভোটে হারলেও আপনি পরাজিতই।

রাজনীতির এ বন্ধুর পথ দেখে ভয় পাবেন না। সামরিক-বেসামরিক আমলা ও ব্যবসায়ীরা এমপি হওয়ার কিছু শর্টকাট উপায় বের করে নিয়েছেন। যেসব আমলার মনে রাজনৈতিক আকাক্সক্ষা থাকে, তারা ক্ষমতায় থাকতে এলাকায় নানান উন্নয়ন কাজ করেন। জনগণকে সাহায্য করেন এবং অবসর নিয়ে রাজনীতিতে যোগ দিয়ে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করে এমপি হন, মন্ত্রীও হন কেউ কেউ। ব্যবসায়ীরাও চালাক হয়ে গেছেন। আগে তারা রাজনীতিবিদদের চাঁদা দিতেন, এমপি-মন্ত্রী বানাতেন। এখন তারা নিজেরাই এমপি-মন্ত্রী হতে চান, মনোনয়ন চান। প্রয়োজনে মনোনয়ন কিনে নিয়ে এমপি হন, মন্ত্রীও হন। যেভাবেই হোক, আপনাকে কিন্তু জনগণের জন্য কাজ করতে হবে, এলাকার উন্নয়ন করতে হবে। তবে ব্যবসায়ী ও আমলাদের রাজনীতিতে আসার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় পিছিয়ে পড়ছেন রাজনীতিবিদরা। ছাত্রজীবন থেকে তিল তিল করে এলাকায় নিজের অবস্থান তৈরি করা ত্যাগী রাজনীতিবিদটি হঠাৎ ব্যবসায়ী বা আমলাদের কাছে পিছিয়ে পড়েন। রাজনীতিবিদকে ‘ক্ষমতায় গেলে মূল্যায়ন করা হবে’ এ সান্ত্বনা দিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয় কোনো ব্যবসায়ী বা আমলাকে। এ প্রবণতা বাড়তে বাড়তে সংসদে এখন রাজনীতিবিদরা সংখ্যালঘু হয়ে গেছেন। আমরা যে বলি রাজনীতি দুর্বৃত্তায়িত হয়ে গেছে, এটা হলো সে প্রক্রিয়া। অর্থের জোরে দুর্বৃত্তরা ক্যারিয়ার পলিটিশিয়ানদের ছিটকে দিয়ে নিজেরা সামনে চলে আসেন।

রাজনীতিবিদ হোক, আমলা হোক, ব্যবসায়ী হোক, দুর্বৃত্ত হোক- সবাইকেই একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। মনোনয়ন পেতে হলে কিছুদিন হলেও দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে হয়। কিন্তু লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শহীদ ইসলাম পাপুল প্রমাণ করেছেন, এমপি হতে এসব কিছুই লাগে না। ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি করে এমপি হওয়ার পথটি দীর্ঘ ও বন্ধুর। আমলা বা ব্যবসায়ীদের এমপি হওয়ার পথটি সংক্ষিপ্ত। তবে শহীদ ইসলাম পাপুল নামের এই দুর্বৃত্ত এমপি হওয়ার একটি সংক্ষিপ্ততম পথ আবিষ্কার করেছেন। তিনি যদি ‘এমপি হওয়ার সহজ পাঠ’ নামে একটি বই লিখেন তাহলে অবশ্যই সেটি বেস্ট সেলার হবে। এই একটি বই তাকে অমর করে রাখবে। এই দুর্বৃত্ত এতটাই চতুর, এমনকি সে মনোনয়নের জন্যও সময় নষ্ট করেনি। জীবনে কোনো দিন এক সেকেন্ডের জন্যও রাজনীতি না করা এবং কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকা শহীদ ইসলাম পাপুল এখন জাতীয় সংসদের সম্মানিত সদস্য।

এমপি হওয়ার সহজ পাঠের ভূমিকাটা একটু জেনে আসি চলুন। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-২ আসনটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মহাজোটের শরিক এরশাদের জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়। এ আসনে জাপার মনোনয়ন পান আগের বারের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নোমান। কিন্তু হঠাৎ করে নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ান নোমান। এ আসনে আগে থেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে রেখেছিলেন শহীদ ইসলাম পাপুল। এরপর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি, পরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি থেকে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে চিঠি দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী শহীদ ইসলাম পাপুলের পক্ষে কাজ করার জন্য স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। চিঠিতে পাপুলকে আওয়ামী লীগের নিবেদিত নেতা ও মাঠ পর্যায়ের সক্রিয় কর্মী উল্লেখ করা হয়। দীর্ঘদিন তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আছেন বলে দাবি করা হয়। যদিও এ চিঠির প্রতিটি শব্দ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। শহীদ ইসলাম পাপুল কোনো দিন এক সেকেন্ডের জন্যও আওয়ামী লীগ বা অন্য কোনো দল করেননি। জাতীয় পার্টিকে ম্যানেজ করে, আওয়ামী লীগকে ম্যানেজ করে বিপুল ভোটে স্বতন্ত্র এমপি বনে যান পাপুল। এরপর নামেন স্ত্রী সেলিনা ইসলামকে এমপি বানানোর মিশনে। শহীদ ইসলাম পাপুল এখানেও ম্যানেজ মাস্টার। স্বতন্ত্র এমপিদের ম্যানেজ করে অরাজনৈতিক স্ত্রীকেও এমপি বানিয়ে ফেলেন। শহীদ ইসলাম পাপুল দুটি কারণে অমর হয়ে থাকতে পারেন। একটি আগেই বলেছি ‘এমপি হওয়ার সহজ পাঠ’ বই লিখে। আরেকটি হলো প্রেমের জন্য। স্বামীর কাছে স্ত্রীদের নানা আবদার থাকে। শাড়ি, গয়না, গাড়ি, বেড়াতে নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি। কিন্তু কোনো দিন কোনো স্ত্রী তার স্বামীর কাছে এমপি বানিয়ে দেওয়ার আবদার করেছিলেন বলে শুনিনি। সেলিনা ইসলাম আবদার করেছেন এবং শহীদ ইসলাম পাপুল তার সে শখ পূরণও করেছেন। মমতাজের সমাধিতে শাহজাহানের তাজমহল বানানোর মতোই পাপুলের এ কীর্তি প্রেমের ইতিহাসে তাকে অমর করে রাখবে। অনন্ত জলিল নাকি অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারেন। কিন্তু আমার ধারণা, তিনিও তার সুন্দরী স্ত্রী বর্ষাকে এমপি বানাতে পারবেন না। গ্রামীণফোন এরপর অসম্ভবকে সম্ভব করার বিজ্ঞাপনে অনন্ত জলিলের বদলে পাপুলকে মডেল বানাতে পারে। অসম্ভবকে সম্ভব করার সত্যিকারের ক্ষমতা একমাত্র পাপুলেরই আছে। মনোনয়ন কেনাবেচার বিষয়টি বাংলাদেশে একেবারে নতুন বা অভিনব নয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপির অনেক মনোনয়নই বিক্রি হয়েছে বলে অভিযোগ শুনেছি। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সংসদ সব নির্বাচনেই মনোনয়ন কেনাবেচার অভিযোগ আছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেও। কিন্তু পাপুল যা করেছেন, তা একেবারে পুকুরচুরি। গত দুটি নির্বাচনে জোটের হিসাব-নিকাশ, হুট করে মূল প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়ে যাওয়াসহ নানা কারণে ভাগ্যগুণে অনেকে এমপি হয়ে গেছেন। কিন্তু পাপুল তেমনও নন। নিজের ভাগ্য নিজে কিনে নিয়েছেন তিনি। শোনা যাচ্ছে, নিজেকে এমপি বানাতে এবং স্ত্রীকে এমপিশিপ গিফট করতে পাপুলের মোট খরচ হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। মানতেই হবে বেশ সস্তায় সওদা করেছেন পাপুল। মাত্র ৫০ কোটি টাকা! হাজার কোটি টাকার মালিক অনেকেও এমপি হতে চেয়ে পারেননি। আসলে টাকা থাকলেই এমপি হওয়া যায় না। এজন্যই আপনাদের পাপুলের সম্ভাব্য বইটি পড়তে হবে। দুটি বড় দলকে ম্যানেজ করে স্বতন্ত্র এমপি হওয়া অবশ্যই একটি বড় ধরনের শিল্প। প্রতারণাকে, রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়নকে অন্য মাত্রায় উন্নীত করেছেন এই পাপুল। শোনা যায়, লক্ষ্মীপুর-২ আসনে মহাজোটের মূল প্রার্থী মোহাম্মদ নোমান ১২ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। শোনা যায়, পাপুলকে এমপি বানানোর মিশনে বদলে গিয়েছিল জাতীয় পার্টির মহাসচিব। পত্রিকায় ছাপা হয়েছে আওয়ামী লীগ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমামের বনানীর বাসায় পাপুলকে এমপি বানানোর প্লট চূড়ান্ত হয়েছিল।

পত্রিকার সব খবর আমি বিশ্বাস করছি না। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি করছি, রাজনীতির সঙ্গে দূরতম সম্পর্ক না থাকা দুর্বৃত্ত দম্পতিকে এমপি বানানোর মিশনে কারা ছিলেন, তা যেন তদন্ত করে বের করা হয় এবং আওয়ামী লীগের স্বার্থে, দেশের রাজনীতির স্বার্থে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়। দলের বদনাম হবে এই ভেবে এটা আড়াল করলে আখেরে দলেরই ক্ষতি হবে। নইলে কেউ আর রাজনীতি করবে না। যেনতেনভাবে টাকা কামাবে। সেটা চুরি করে হোক, মাস্তানি করে হোক, ডাকাতি করে হোক, আদম ব্যবসা করে হোক, ব্যাংকের টাকা লুটে হোক, শেয়ারবাজারের টাকা মেরে দিয়ে হোক। কামাই করবেন ১ হাজার কোটি টাকা; তার থেকে ১০০ কোটি টাকা খরচ করলেই নিজে এমপি হতে পারবেন, স্ত্রীকেও এমপি বানাতে পারবেন। আগের কথা বাদ দিন, ’৭৫-এর পর থেকে ২১ বছর আওয়ামী লীগকে ধরে রাখা, অত্যাচার-নির্যাতন সয়ে কোনো কিছু পাওয়ার আশা না করে মাটি কামড়ে পড়ে থাকা ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের কজন এমপি হতে পেরেছেন। সাধারণ কর্মীদের কথা বাদই দিলাম ’৭৫-এর পর থেকে এখন পর্যন্ত ছাত্রলীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে কজন মনোনয়ন পেয়েছেন বা এমপি হতে পেরেছেন? ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমানে আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল গত নির্বাচনে প্রথম মনোনয়ন পেয়ে এমপি হয়েছেন। তিনি এমপি হয়েছেন বলে তার স্ত্রী, যিনি যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক সংসদ সদস্য এবং টক শোর পরিচিত মুখ অপু উকিল এবার সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন পাননি। আবার অপু উকিল যেবার সংসদ সদস্য ছিলেন সেবার অসীম কুমার উকিল মনোনয়নই পাননি। দুজনই যোগ্য, তার পরও একসঙ্গে দুজন সংসদে যেতে পারেননি। আর সেখানে আদম পাচারের টাকা দিয়ে এক দুর্বৃত্ত মাত্র ৫০ কোটি টাকায় জোড়া এমপিপদ কিনে ফেলবে! তাহলে আর মানুষ রাজনীতি করবে কেন?

শহীদ ইসলাম এমপির ডাকনামটাও অদ্ভুত- পাপুল। আমার ধারণা তার পিতার দূরদৃষ্টি ছিল। সন্তান পাপ উসুল করে ছাড়বে বলেই হয়তো তিনি নাম রেখেছিলেন পাপুল। পাপের পেয়ালা পূর্ণ হলে নাকি প্রকৃতিই একটা বিচার করে। এখন পাপুলের বিচার হচ্ছে কুয়েতে। মানব পাচারের অভিযোগে তাকে আটক করা হয়েছে। তার ব্যাংকে থাকা প্রায় ১৪০ কোটি টাকা জব্দ করা হয়েছে। তবে পাপুল এখানে কোনো ব্যক্তি নন; তিনি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের একজন মাননীয় সদস্য, দেশের একজন আইনপ্রণেতা। কুয়েতে তার এ অপকর্ম গোটা জাতির নাক কেটে দিয়েছে। লজ্জায় আমাদের মাথা হেঁট হয়ে গেছে। এ লজ্জা থেকে জাতিকে উদ্ধার করতে পাপুলের বিচার হতে হবে। পাপী পাপুলকে যারা এমপি বানাল, বিচার হতে হবে তাদেরও।

               লেখক : সাংবাদিক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর