শুক্রবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

বিআরটিসির হালহকিকত

জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে

বাংলাদেশে সড়কপথে গণপরিবহনের সার্বিক চিত্র অত্যন্ত বিশৃঙ্খল। এ বিশৃঙ্খলা সড়ক দুর্ঘটনার উচ্চহারের অন্যতম প্রধান কারণ। শুধু সড়ক দুর্ঘটনা নয় সড়কপথে মানুষের চলাচলের গতিও মন্থর, ঝামেলাপূর্ণ, প্রায়ই দুর্ভোগময়। গণপরিবহনের এ খাতের জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) নামে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা থাকা সত্ত্বেও এর ব্যবসায়িক আধিপত্য বেসরকারি পরিবহন কোম্পানিগুলোর হাতে। মুক্তবাজার অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বেসরকারি খাতের ভূমিকা ব্যাপক ও তার গুরুত্ব কেউ অস্বীকার করে না, কিন্তু রাষ্ট্রীয় খাতের উল্লেখযোগ্য ভূমিকাও প্রত্যাশা করা হয়। দুর্ভাগ্যের হলেও বিআরটিসি সে প্রত্যাশা পূরণ থেকে অনেক দূরে রয়ে গেছে। ধারাবাহিক দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও বেসরকারি বাস মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে গোপন আঁতাতে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে বিআরটিসির সেবা কার্যক্রম। সরকার সংস্থাটির বহরে চাহিদামাফিক বাস-ট্রাক সংযোজন করলেও দুর্নীতি-অনিয়মের মাধ্যমে কেনা এসব বাস ঘোষিত লাইফটাইমের এক-তৃতীয়াংশের মধ্যেই বিকল হয়ে পড়ছে। অবহেলা আর কার্যকর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কোনো বাস অচল হয়ে ডিপোয় গেলে আর রাস্তায় ফিরে আসে না। সংস্থাটির ২২টি ডিপোর অধিকাংশই মেরামত-অযোগ্য পরিত্যক্ত গাড়ির কারণে অবরুদ্ধ হয়ে আছে। গাড়িসংখ্যা কমে যাওয়ায় আয় হ্রাস পেয়েছে সংস্থাটির। সরকারি সংস্থায় চাকরি করেও অর্থকষ্টে আছেন সংস্থাটির শ্রমিক-কর্মচারীরা। গত দুই দশকে বিআরটিসিতে যেসব গণপরিবহন কেনা হয়েছে তার মধ্যে ভলভো দ্বিতল বাসগুলো ছাড়া বাকি সবই নিম্নমানের। নতুন বাস-ট্রাক কেনায় বিআরটিসির মাধ্যমে সরকার খরচ করেছে ১ হাজার ৬১২ কোটি টাকা। এ বিপুল বিনিয়োগের পরও বিআরটিসি লাভের ধারায় ফিরতে পারেনি। সংস্থাটির নানা পর্যায়ের অনিয়মই এর বড় কারণ। রাষ্ট্রায়ত্ত এ সংস্থার অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা, দায়িত্ব পালনে অবহেলার প্রবণতা কত ব্যাপক তা মোটের ওপর সবারই জানা। বিআরটিসিকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। সে জন্য কঠোর জবাবদিহি ও দুর্নীতিবাজদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর