শুক্রবার, ১৯ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা
বিশেষ সাক্ষাৎকারে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান বদিউর রহমান

রাজনীতি এখন ব্যবসায়ী আমলাদের পকেটে

রাজনীতি এখন ব্যবসায়ী আমলাদের পকেটে

সরকারের সাবেক সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান বদিউর রহমানের মতে দেশের রাজনীতি এখন আমলা ও ব্যবসায়ীদের পকেটে। তিনি মনে করেন রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকা উচিত আর আমলাদের হাতে থাকা দরকার আমলাতন্ত্র। রাজনীতিবিদরা যদি আমলাতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন তাহলে তো আমলারা ছড়ি ঘোরাবেনই। দেশপ্রেমিক ও ন্যায়নিষ্ঠ না হলে আমলা যত পাকা হন তিনি তত বেশি শয়তান হন। অতিসম্প্রতি রাজধানীর রূপনগরে নিজ বাসভবনে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে বদিউর রহমান দেশের আমলাতন্ত্র, রাজনীতি, করোনাকালে শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষক রাজনীতি, দেশের উন্নয়ন, গণতন্ত্রসহ সমসাময়িক নানা বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন। বিগত ওয়ান-ইলেভেন সরকার আমলে নির্ধারিত মেয়াদের ১৮ মাস আগেই এনবিআরের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার ব্যাখ্যাও দেন চেয়ারম্যান বদিউর রহমান। ওই সময় সেনা-নির্দেশিত সরকারের নানামুখী চাপের বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি। বলেন, রাজনীতিবিদরাই রাজনীতিকে ব্যবসায়ী ও আমলাদের পকেটে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। এর দোষ ব্যবসায়ী বা আমলার নয়। এজন্য দায়ী রাজনীতিবিদরাই। সাবেক এই সচিব বলেন, দেশে উন্নয়ন যে হচ্ছে তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তবে কোনো বড় উন্নয়নে বা বড় কাজে কিছুটা বর্জ্য থাকে। এ বর্জ্যটা এখন গণতন্ত্রের ওপর চলে এসেছে, এটাই খারাপ। দেশে সুশাসনেরও ঘাটতি আছে। আমলানির্ভরতা শুরু হয় বেগম খালেদা জিয়ার সরকার আমলে। তার আগে এতটা হয়নি। বঙ্গবন্ধুর আমলে তো আমলানির্ভরতা ছিলই না। তখন যেসব নেতা ছিলেন আমলারা তাদের সঙ্গে আলাপ করার আগে তিনবার চিন্তাভাবনা করতেন। এখন আমলাতন্ত্র ও বাণিজ্য রাজনীতিতে চেপে বসেছে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাহমুদ আজহার

 

প্রশ্ন : এখন উত্তাল মার্চ চলছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ। এ মুহূর্তে বাংলাদেশ আজ কোথায় দাঁড়িয়ে?

বদিউর রহমান : আমরা এমন এক প্রজন্মে রয়েছি যারা গরুগাড়ি, ঠেলাগাড়ি, পালকি ব্যবহার থেকে শুরু করে স্যাটেলাইট ও রকেট পর্যন্ত দেখছি। পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে ষাটের দশকের শুরুর দিকে দেশটা ঠেলাগাড়ি, গরুগাড়ি ও পালকির যুগে ছিল। এখন ৫০ বছরে এসে আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠিয়েছি। আমরা এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হয়েছি। এটা একটা বিরাট বড় পাওয়া। আমাদের স্বাধীনতা যদি না থাকত এটা হতাম কিনা সন্দেহ আছে।

প্রশ্ন : নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে এক ধরনের আস্থার অভাব রয়েছে। সামগ্রিকভাবে সমসাময়িককালের নির্বাচন নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?

বদিউর রহমান : ২০০৮ সালে সেনা-নির্দেশিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনো সমালোচনা করছে না। যারা হেরেছেন তারাও কোনো প্রশ্ন তোলেননি। তারপর ২০১৪ সালে বিনা ভোটে নির্বাচন হলো। ১৫৩ বা ১৫৪ জন এমপি বিনা ভোটে নির্বাচিত হলেন। প্রথমটা নির্বাচনের ভোটে, দ্বিতীয়টা বিনা ভোটে, তৃতীয়টা ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর সাংঘাতিকভাবে বিতর্কিত হয়েছে। আগের রাতে সিল মারার গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এজন্য আমি বলি, আটে ভোটে, চৌদ্দতে বিনা ভোটে এবং আঠারোতে সিল মারার নির্বাচন হয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ইসি ফেলও করতে পারেনি। কারণ ১০০ নম্বরের মধ্যে ৭-৮ পেলে সেটাকে ফেলও বলা যায় না। এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যা হচ্ছে, তার দায় কিন্তু নিতে হবে আওয়ামী লীগকে।

প্রশ্ন : দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। অনেকেই বলেন উন্নয়ন হলেও দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের ঘাটতি রয়েছে। আপনি কীভাবে দেখছেন?

বদিউর রহমান : উন্নয়ন যে হচ্ছে তা তো অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। এ উন্নয়নের কারণে গণতন্ত্রে যে ত্রুটি-বিচ্যুতিতে পড়েছে, ভোটে যে কেলেঙ্কারি ঘটছে তার পরও মানুষ চুপ করে আছে কেন? মানুষ চায় দেশটা এগিয়ে যাক, উঠে যাক। আমি মনে করি শেখ হাসিনা না থাকলে পদ্মা সেতু হওয়ার প্রশ্নই উঠত না। তাঁর শত্রুরাও স্বীকার করবেন, একমাত্র শেখ হাসিনার সাহসের কারণে পদ্মা সেতুটা হলো। এজন্য আমি (প্রয়াত) খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের সঙ্গে এক টকশোয় বলেছিলাম- এ সাহসের কারণে পদ্মা সেতুর নাম হোক শেখ হাসিনা সেতু। এখন যে কোনো বড় উন্নয়নে বা বড় কাজে কিছুটা বর্জ্য থাকে। এ বর্জ্যটা গণতন্ত্রের ওপর চলে এসেছে, এটাই খারাপ। দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসনেরও ঘাটতি আছে। গণতন্ত্রটাকে আরও সুন্দর করা প্রয়োজন। এখন নির্বাচনে টাকার ছড়াছড়ি হয়। রাজনীতি কোন পর্যায়ে গেলে লক্ষ্মীপুরে পাপুল এমপি হয়ে যান। তিনি তো হলেনই, তার বউকেও এমপি বানালেন। রাজনীতি কোন পর্যায়ে গেলে স্বামী বিতর্কিত হলে বউকেও মনোনয়ন দেওয়া হয়! যেমন কক্সবাজারে বদির বউকে এমপি বানানো হয়েছে। রাজনীতিতে এ খেলাগুলো কাম্য নয়।

প্রশ্ন : আপনি একজন লেখক, কলামিস্ট ও সাবেক আমলা। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। এ আইনকে কীভাবে দেখছেন?

বদিউর রহমান : ডিজিটাল নিরাপত্তার পুরো আইনটা আমার পড়ে দেখা হয়নি। সবকিছুই ডিজিটাল হওয়ার দরকার নেই। কিছু অ্যানালগ থাকা দরকার আছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটা হওয়ার সময় সংবাদপত্রের কর্র্মী, সম্পাদক বা নেতারা এ নিয়ে বহু সমালোচনা করেছেন। সেগুলো বিবেচনায় নেওয়া হবে বলাও হয়েছিল। কিন্তু তা বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে যে হারে সমালোচনা হচ্ছে তাতে এখনই এটা সংশোধন, পরিমার্জন এবং পরিষ্কার করে চিন্তা করা দরকার। একেবারে বাদ দিতে পারলে হয়তো অনেকের কাছে ভালোই হবে। কিন্তু বাদ দেওয়ার দরকার নেই। সময়ের সঙ্গে আইনেরও প্রয়োজন আছে।

প্রশ্ন : কেউ কেউ বলেন সরকার এখন আমলানির্ভর হয়ে পড়েছে। এর কোনো ক্ষতিকর দিক আছে কিনা, বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?

বদিউর রহমান : আমলানির্ভরতা বেশি রকম শুরু হলো বেগম খালেদা জিয়ার সরকার আমলে। তার আগে এতটা হয়নি। বঙ্গবন্ধুর আমলে তো আমলানির্ভরতা ছিলই না। তখন যেসব নেতা ছিলেন আমলারা তাদের সঙ্গে আলাপ করার আগে তিনবার চিন্তাভাবনা করতেন। তারা আসলেই রাজনীতিবিদ ছিলেন। খালেদা জিয়ার প্রথম মেয়াদ থেকেই আমলানির্ভরতা দেখা যায়। সেখানে মনা শব্দের ব্যবহারও খালেদা জিয়ার আমলে। ওই সময় এক আমলা (খন্দকার শহিদুল ইসলাম) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব ছিলেন। আমি বলতাম ‘অন্ধকার’ শহিদুল ইসলাম। তিনি আমলাতন্ত্রের খারাপ অবস্থা সৃষ্টি করেছেন। তার পছন্দ হয়নি এমন যোগ্য লোকদেরও বাদ দিয়েছেন। আমলানির্ভর হওয়া কোনো সরকারের জন্যই উপকারী কিছু নয়। দেশপ্রেমিক ও ন্যায়নিষ্ঠ না হলে আমলা যত পাকা হন তিনি তত শয়তান হন। আমলার বুদ্ধি নিয়ে দল বা সরকার উপকৃত হতে চায়। কোনো দল যদি নিজের বা পার্টির নেতৃত্বে আমলাকে টানতে চায় তখন আমলা তো সুবিধা নেবেনই। ওই দল তুলনামূলকভাবে আমলানির্ভর হয়ে যাবে।

প্রশ্ন : বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী অনেকের আচরণ  কীভাবে দেখছেন?

বদিউর রহমান : অনেক সরকারি আমলার এখনকার আচরণকে অবশ্যই আমি ভালোভাবে দেখি না। আমি তিন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কাজ করেছি। চাকরিতে প্রথমে আমি প্রেসিডেন্ট জিয়াকে পেয়েছি। এরপর বিচারপতি সাত্তারকে পেয়েছি। মার্শাল ল আসার পর জেনারেল এরশাদকে পেয়েছি। তারা যখন অফিশিয়াল মিটিংয়ের পর দলীয় মিটিং করতেন আমরা তখন থাকতাম না। এখন আমলারাও রাজনৈতিক মিটিংয়ে থাকেন। যার কোনো দুর্বলতা থাকে তিনি আমলাকে প্রশ্রয় দেন। রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকা উচিত আর আমলাদের হাতে আমলাতন্ত্র। অভিযোগ করা হয়, আমলা রাজনৈতিক নেতৃত্বকে মানে না। আপনি যদি নেতৃত্বগুণে রাজনীতিক হয়ে আমলাতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারেন, আমলা যদি আপনার চেয়ে বেশি ধুরন্ধর হয়, বেশি বুদ্ধিমান বা চালাক হয় তাহলে আমলা তো আপনার ওপর ছড়ি ঘোরাবেই। আপনি তাকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন কেন? একসময় আমরা বলতাম রাজনীতিবিদের চেয়ে আমরা (আমলা) বেশি বুদ্ধিমান। এখন ঠাট্টা করে বলা হয়, ব্যবসায়ীরা রাজনীতিবিদ ও আমলাদের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান। পুরো রাজনীতিকে ব্যবসার মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। সংসদে ব্যবসায়ীরা সবাই চলে আসছেন। তারা এখন মজা পাচ্ছেন, আগে রাজনৈতিক দলকে চাঁদা দিতেন। প্রার্থীকে আর্থিক সহযোগিতা দিতেন। এখন ব্যবসায়ীরা মনে করেন রাজনীতিবিদদের চাঁদা দেওয়ার কী দরকার। আমার নিজের পয়সা নিজে খরচ করে আমিই নেতা হয়ে যাই। এখন তারা ব্যবসাও করেন আবার আইনও পাস করেন। রাজনীতিবিদরা রাজনীতিকে ব্যবসায়ী ও আমলাদের পকেটে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। এর দোষ ব্যবসায়ী বা আমলার নয়। এর জন্য দায়ী রাজনীতিবিদরাই।

প্রশ্ন : বিভিন্ন সময়ে সাবেক আমলারা বৈঠক করেন, রাজনৈতিক বক্তব্যও আসে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নানা ধরনের মন্তব্য লেখেন। একে আপনি কীভাবে দেখছেন?

বদিউর রহমান : একটি প্রবাদ আছে- কাজির গরু কিতাবে আছে গোয়ালে নেই। গভর্নমেন্ট সার্ভেন্ট কন্ট্রাক্ট রুলস আছে, পাবলিক সার্ভিস কন্ট্রাক্ট রুলস আছে। চাকরিবিধি আছে। সে নিয়মে আমলাদের গোপন বৈঠক, রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে যোগদান চলে না। এটার জবাবদিহি নেবে কে? রাজনৈতিক নেতৃত্ব। তারা যদি বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করেন তাহলে আমলারা তো এসব করবেনই। এখন আমলারা রাজনীতিবিদদের সঙ্গে বক্তব্য দেন কীভাবে? ওই রাজনীতিবিদ অনুমতি দিচ্ছেন কেন? তাকে ডাকছেন কেন? দুই কারণে হতে পারে। প্রথমত, ওই আমলার কাছ থেকে তিনি প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য উপকৃত হন। দ্বিতীয়ত, ওই আমলার বুদ্ধি নিয়ে এগোতে চান। দুটোই ওই রাজনীতিবিদের জন্য খারাপ।

প্রশ্ন : ‘ডোমুরুয়া থেকে সচিবালয়’ আপনার একটি আলোচিত আত্মজীবনীমূলক বই। সংক্ষেপে যদি এ বইয়ের উল্লেখযোগ্য দিকগুলো বলতেন।

বদিউর রহমান : করোনাকালে বেকার বসে ছিলাম। পত্র-পত্রিকায় লেখালেখিও করিনি। তখন ভাবলাম বেকার বসে আছি তাই এ বইটা লেখা শুরু করলাম। এতে পরবর্তী জেনারেশন, সিভিল সার্ভিস, রাজনীতি, সমাজব্যবস্থায় কাজে আসবে। বইতে আমি আমার শৈশব, তখন আর্থিক নানা টানাপোড়েন, এলাকার আর্থিক চিত্র, সমাজব্যবস্থা তুলে ধরেছি। বইয়ের ফাঁকে ফাঁকে রাজনৈতিক আলোচনাও আসছে। আমার নিজের চাকরিজীবন নিয়েও বইতে লেখা আেন্ডেছ। সহজ-সরলভাবে যা লিখেছি, সত্য লিখেছি। অনেক সত্য লিখতে পারিনি। ডোমুরুয়া হলো আমার গ্রামের নাম। ওই গ্রাম থেকে গরুর ঘাস কেটে, মাঠে খেলে, ঘুড়ি উড়িয়ে, লেখাপড়া করে বৃত্তি পেতে পেতে কীভাবে আমি এখানে এলাম, তারপর আমার জীবনটা কী হলো, এখনকার কী অবস্থা, সব তুলে ধরেছি। মুখবন্ধে আমি বলেছি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সম্পর্কে সবকিছুই আমি লিখতে পারিনি। এটা নিয়ে আলাদা একটা বই লেখার ইচ্ছা আছে। শুধু এইটুকু বলব, আমি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার কারণে পরিচিতি বেড়েছে। অনেকেই আমাকে চিনেছেন। কিন্তু অনেক বড় বড় মানুষ সম্পর্কে আমার শ্রদ্ধাবোধ কমে গেছে। ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে এরা যে কত নিকৃষ্ট চোর হতে পারেন তা দেখেছি। আগে যাদের কথা শোনার জন্য হাঁ করে থাকতাম, নমস্ব ভাবতাম এখন রাজা দেখি ন্যাঙটা।

প্রশ্ন : ওয়ান-ইলেভেনের পর আপনি নির্ধারিত সময়ের ১৮ মাস আগেই চাকরি কেন ছাড়লেন?

বদিউর রহমান : এটা ব্যক্তিত্বের প্রশ্ন। আমি চাকরি স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিয়েছি এজন্য কারণ আমার ওয়ান-ইলেভেনে দায়িত্ব পালন করা সরকারের অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজের ইআরডি অফিসে পাঁচটি সামারি স্বাক্ষর করিয়েছি। কিন্তু আমার যে বদলি হচ্ছে তা তিনি আমাকে বলেননি। একটু ইঙ্গিতও দেননি। তিনি বিশ্বব্যাংকের এক অনুষ্ঠানে দেশের বাইরে চলে যান। এরপর আমি সেখান থেকে কাকরাইল মসজিদের কাছাকাছি আসামাত্রই এক সাংবাদিক টেলিফোনে আমাকে অভিনন্দন জানান। আমি বললাম মন্ত্রী বা উপদেষ্টা হচ্ছি কিনা? তিনি জানালেন, না স্যার। আপনাকে খাদ্য সচিব করা হয়েছে। আমি তো সচিব আছিই। আমি চেয়ারম্যান তো পরে। সচিব-কাম-চেয়ারম্যান হিসেবেই তো এনবিআরে দায়িত্ব পালন করি। তিনি জানালেন, আপনি তো সচিব হিসেবে পরিচিত নন। সবাই আপনাকে চেয়ারম্যান হিসেবেই চেনে। এজন্যই হয়তো খাদ্য সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমি অবাক হলাম। যে উপদেষ্টার সঙ্গে আমি এত ক্লোজলি কাজ করলাম তিনি আমাকে কিছুই বললেন না। তাতেও আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু তিনি আমার জুনিয়র মজিদকে বললেন। এ ঘটনায় আমার মন খারাপ হলো। এরপর সিদ্ধান্ত নিলাম এদের সঙ্গে কাজ করা আমার উচিত হবে না। আরেকটি বিষয় হলো- আমাকে বদলি করার জন্য ফখরুদ্দীন ও মির্জ্জা আজিজ এ দেশে চাকরি করেননি। যুগ্মসচিব পর্যায়ে চাকরি করার পর বিশ্বব্যাংক বা আইএমএফে চাকরি করেন। ওয়ার্ল্ডব্যাংক বা আইএমএফ থেকেও হয়তো চাপ থাকতে পারে। তারা হয়তো সেটা ফলো করেছেন।

অনেকেই আমাকে বলেন, আমি নাকি বোকা। আমি পুরো চাকরিটা করলে পেনশনের ৪৮ লাখ টাকা পেতাম। কিন্তু ওই সময় ছেড়ে দেওয়ায় ৩০ হাজার টাকা স্কেলে ২৭ লাখ টাকা পেয়েছি। ১২ মাসের বেতনে ২ লাখ ৭৬ হাজার টাকা পেয়েছি। এতে কিছু যায় আসে না। আমি যা খাই, যেভাবে চলি এটাই আমার কাছে অনেক।

প্রশ্ন : ওয়ান-ইলেভেনে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে আপনি কাজ করেছেন। ওই সময় আপনার ওপর কি কোনো চাপ ছিল? আলোচিত কোনো ঘটনা যদি বলতেন-

বদিউর রহমান : সবাই বলে সেনাসমর্থিত সরকার। আমি বলি সেনা-নির্দেশিত সরকার। কারণ তখন মইন উদ্দিন ও মাসুদ উদ্দিনরা দেশ চালাতেন। তাদের নির্দেশনায় সব চলত। শেষের দিকে তারা কিছু কিছু বিষয়ে নাক গলাতে শুরু করেন। যেমন আমার এক অফিসার চট্টগ্রামে কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার মতিউর রহমানকে বদলি করে রাজশাহীতে দিয়েছিলাম। তখন আমার কমিশনের সদস্যদের চার-পাঁচ জন বললেন, মতিউর এত ক্ষমতাশালী তাকে বদলি করলে রাখতে পারবেন না। কারণ মতিউর এত ক্ষমতাশালী যে সে সাইফুর রহমানের বেডরুমে যেত, শাহ এ এম এস কিবরিয়ার বেডরুমেও যেত। তখন আমি একটা চিন্তায় পড়ে গেলাম। একজন জয়েন্ট কমিশনারকে বদলি করে রাখতে পারব না, তাহলে আমি চেয়ারম্যান কীভাবে থাকব। পরে দেখলাম ঠিকই চট্টগ্রামে কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা আমার অর্ডার পাল্টিয়ে মতিউরকে সেখানে রাখতে তারা নিজেরাই একটি অর্ডার জারি করলেন। এ ছাড়া ফরিদ নামে আরেকজনকে যেন রিলিজ না করা হয় সেজন্য চিঠি পাঠিয়ে আমাকে অনুরোধ করা হলো।  আমি তাজ্জব বনে গেলাম। কিন্তু আমি তাদের সে অনুরোধ রাখিনি। পরে একপর্যায়ে সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদও আমাকে ফোন করে বললেন, মতিউরের বদলি আদেশ বাতিল করতে হবে। আমি সেনাপ্রধানকে জানালাম, আমি একজন চেয়ারম্যান হয়ে নিজের অর্ডারই যদি প্রত্যাহার করে নিই তাহলে আমার চেয়ারম্যান পদ তো আর থাকে না। বরং আগে আমাকে বদলি করে দিয়ে তারপর মতিউরকে সেখানে রাখেন। আমি আরও বললাম, তার ক্ষমতা নাকি অনেক বেশি। তখন মইন উ আহমেদ বললেন, এমন লোকই আমাদের প্রয়োজন। তার কাছ থেকে অনেক তথ্য নিয়ে পরে দরকার হলে তাকে আমরা বিদায় করব। আমি বললাম, আই এম স্যরি টু ক্যানসেল দি অর্ডার। শেষ পর্যন্ত আমি আদেশ প্রত্যাহার করিনি। অবশ্য এরপর মইন ইউ আহমেদ আর কিছু বলেননি। সেগুলো শুনলে এখনো বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়। এসআরও করাসহ আরও টুকটাক সমস্যা হয়। আরেকটি ঘটনা হলো অনেকেরই অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়। ঈদে তাদের খরচ বাবদ কিছু টাকা ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বললেন, মাসে ১ লাখ টাকা দিলে সুন্দর হয়। মইন উ আহমেদ বললেন, না, একটু কষ্ট বুঝুক, তাদের ৫০ হাজার করে টাকা দেওয়া হোক। ফখরুদ্দীন বা মির্জ্জা আজিজও কিছু বললেন না। কেউ কিছু বলে না। মইন উ আহমেদ যা বললেন তাই হলো। তাহলে ক্ষমতা কার কাছে? এজন্যই বলি, সেনাসমর্থিত নয়, সেনা-নির্দেশিত ওয়ান-ইলেভেনের সরকার।

প্রশ্ন : এক যুগ ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। এ সময়ের সাফল্য ও ব্যর্থতাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

বদিউর রহমান : দেশ পরিচালনায় আওয়ামী লীগের সাফল্য হলো উন্নয়ন। তরতর করে প্রচুর উন্নয়ন হচ্ছে। আর ব্যর্থতা বললে গণতন্ত্রটা ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছে। সেখানে একদলীয় প্রভাব-প্রতিপত্তি চলছে। এখন সব গাছপালা গরু-ছাগল সবাই আওয়ামী লীগ করে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যত দিন ধরে আছে আমি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যাই না। আগে নিয়মিতই যেতাম। স্লোগান দিয়েছি। বঙ্গবন্ধু দোতলা থেকে হ্যান্ডমাইকে কথা বলতেন। এখন দেখি সেখানে গরু-ছাগল ভেড়া-মহিষ মুরগি-হাঁস যা আছে সবাই আওয়ামী লীগ। এ লক্ষণটা ভালো নয়। বিরোধী দলের কথা বলার স্পেস রাখতে হবে। তাহলে গণতন্ত্র সুষমামন্ডিত হবে।

আওয়ামী লীগের শ্রেণিচরিত্রের মধ্যে দেখা যাবে নেত্রী শেখ হাসিনা যখন দুঃখ করে বলেন, এত মানুষ থাকতে কেউ রাস্তায় বের হয়নি। আমার ভয় হয় যদি কপাল মন্দ হয়ে শেখ হাসিনার জন্য অপ্রিয় কিছু ঘটে আমরা যারা সেই ১৭ মেতে সেখানে বৃষ্টিতে ভিজে দৌড়ালাম বা ৩২ নম্বরে গেলাম তারা হয়তো দল না করলেও কমবেশি থাকব। কিন্তু এই যে গরু-ছাগল হাঁস-মুরগি কজন থাকবে? বঙ্গবন্ধুকে মেরে ফেলা হয়েছে সে জায়গায় যদু মধু কদুরা আসেনি। আওয়ামী লীগের শ্রেণিচরিত্রের মধ্যে কিছু নেতা-কর্মী ছাড়া বেশির ভাগই স্বার্থপর। এরা নিজের স্বার্থ ও সম্পদ রক্ষায় ব্যস্ত থাকে। ওই সময় ছিল, এখনো আছে এবং থাকবে।

প্রশ্ন : রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?

বদিউর রহমান : বিএনপিকে একসময় বলা হতো বিএনপি মূলত ‘নো পার্টি’। সময়ের কারণে বিএনপি লাইমলাইটে চলে আসে। বঙ্গবন্ধুর মতো বিরাট ব্যক্তিত্বকে খুন করা হয়েছে। তখন জিয়াউর রহমান কৌশলে অ্যান্টি আওয়ামী লীগের জামায়াত-রাজাকারসহ সবাইকে একজোট করে একটা ভালো ক্ষেত্র তৈরি করেন। বঙ্গবন্ধু যখন খুন হন তখন আওয়ামী লীগ দল হিসেবেও অজনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সত্য কথা বললে অনেকেই কষ্ট পেতে পারেন, আওয়ামী লীগ সে সময় অজনপ্রিয় হয়ে ছিল। এখন আওয়ামী লীগ-বিএনপি পারিবারিক দল হয়ে যাচ্ছে কিনা তা-ও একটা বড় প্রশ্ন। বিএনপি তো পারিবারিক দলই হয়ে গেছে। বিএনপিতে এত বড় বড় ডিগ্রিধারী ঝানু রাজনীতিবিদ থাকার পরও নেতা হয় তারেক রহমান! তাহলে তো এটা পারিবারিক দলই বলা যায়। এটা হলে যা হওয়ার তাই ঘটবে। আওয়ামী লীগও যদি পারিবারিক দলের মধ্যে বেশি যেতে চায়, পুতুল আসবে না জয় আসবে, নাকি বড় বোনের পর ছোট বোন আসবেন সে ক্ষেত্রে দলের মধ্যে গণতন্ত্র না থাকলে দুর্গতি হয়। রাজনীতির খেলাটাই হলো বিজনেস। যুদ্ধ, ব্যবসা, ভালোবাসা ও রাজনীতি কোনো ইথিক্স মানে না। এখানে ছলেবলে কলাকৌশলে টিকে থাকতে হয়। উন্নয়নশীল দেশে শতভাগ সহি-শুদ্ধ রাজনীতি আশা করা যায় না। এখানে বুদ্ধির খেলা আছে। একটি ছোট্ট খেলায় খালেদা জিয়ার আজ কী দশা! তাঁর পরিবার আবেদন করে মুক্তির জন্য এখন শেখ হাসিনার কাছে। রাজনীতি কখন কাকে কোথায় কীভাবে নেয় তা বোঝা মুশকিল। রাজনীতির খেলায় আওয়ামী লীগের রাশি তুঙ্গে। বিএনপি আওয়ামী লীগের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারবে বলে মনে হয় না।

প্রশ্ন : সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু ঘুষ-দুর্নীতি এখনো বন্ধ হয়নি। অনেক সরকারি কর্মকর্তার ‘রুলস অব বিজনেস’ না মানার অভিযোগ রয়েছে। এর কারণ কী?

বদিউর রহমান : যারা সরকারি চাকরি করছেন তারা এখন অনেক সুবিধা পাচ্ছেন। অনেকেই এখন কোটি টাকা পেনশন পাচ্ছেন। এখন একজন উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা সরকারি গাড়ি পাচ্ছেন। তেল খরচসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে। আমি যখন যুগ্মসচিব হয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলাম, চার-পাঁচ ভাগ ইন্টারেস্টে গাড়ি চেয়েছিলাম তখন জানানো হয় এটা সম্ভব নয়। তখন দেশ রসাতলে চলে যায়। এখন এত সুযোগ-সুবিধার বিপরীতে দুর্নীতি বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগের যথেষ্ট অভাব আছে। একজন সরকারি কর্মচারীর ঘাড়ে একটি মাথা। দুর্র্নীতি করে পার পাবেন এ সাহস তার হয় কী করে? এটা হয় তিন কারণে। এক. দুর্নীতিকে রাষ্ট্র প্রশ্রয় দেয় প্রকাশ্যে-অপ্রকাশে। আইনের ফাঁকফোকরে দুর্নীতিবাজরা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছেন। সমাজ দুর্নীতিগ্রস্তকে সুন্দর করে সালাম দিচ্ছে। আরেকটি কারণ, এখন দুর্নীতিবাজরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হচ্ছেন। রাজনৈতিক দলও দুর্নীতিবাজদের নিয়ে আসছে। অতএব দুর্নীতি বাড়বেই।

প্রশ্ন : অনেক সরকারি কর্মকর্তা রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের চেয়ে অতিমাত্রায় রাজনৈতিক ভূমিকায় সক্রিয়। তাদের এ ভূমিকায় কেউ কেউ ‘হাইব্রিড’ আওয়ামী লীগ বলেন। আপনি কী মনে করেন?

বদিউর রহমান : আমি মনে করি রাজনীতি রাজনীতিবিদের হাতেই থাকা উচিত। মাঠে-ময়দানে পোড়খাওয়া নেতা-কর্মীরাই রাজনীতিতে আসবেন। তারা ভুল বা কিছু চুরি করুক তার পরও তারা নেতা হবেন। কিন্তু কোথাও থেকে কামলা বা আমলাগিরি করে রাজনীতিতে আসা হচ্ছে কেন? আমলাকে আমলাগিরিই করতে হবে। তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া যাবে না। কেউ অপরিহার্য নয়। এখন একটু তোয়াজ করলে তেল মারলে এই মন্ত্রী সেই এমপির সঙ্গে সখ্য থাকলে আমার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগটা হবে। এজন্য আমলারা ওই মন্ত্রীর পেছনে দৌড়াতে শুরু করেন। চুক্তি বা রাজনীতিতে নেওয়া বন্ধ করে দিন তাহলে আমলাতন্ত্র ঠিক থাকবে। রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকবে। শুধু টাকার জন্য ব্যবসায়ীদের রাজনীতিতে আনা উচিত নয়। এর মধ্যে ৬০ ভাগ ব্যবসায়ী সংসদে। বাকিটাও তাদের ওপর ছেড়ে দিন। এখন একজন ব্যবসায়ীকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে দিন। আমলা বা ব্যবসায়ীদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন রাজনীতিবিদরাই। এর দায় তাদেরই নিতে হবে। সরকারি চাকরির আচরণবিধিতে বলা আছে, রাজনৈতিক বৈঠকে যাওয়া, রাজনৈতিক কথা বলা আমলাদের জন্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু কজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে?

প্রশ্ন : চলমান করোনাকালে বাংলাদেশের শিক্ষায় চরম ক্ষতি হয়েছে। সম্প্রতি এইচএসসিতে অটো পাস দিয়েছে সরকার। এ নিয়েও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আপনার মতামত চাই।

বদিউর রহমান : এখন সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে শিক্ষকদের রাজনীতি। এটা খুবই খারাপ দিক। দ্বিতীয়ত, জাতীয় রাজনীতিতে যারা রয়েছেন তারাও শিক্ষক রাজনীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। এটা একটা জাতিকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য একটি উপাদান। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা এখন রাজনৈতিক কথাবার্তা বলেন। রাজনীতিবিদদের তুলনায় রাজনীতি নিয়ে তাদের দরদ বেশি। তাদের নিয়োগও হয় রাজনৈতিকভাবে। এখন কলিমুদ্দিন-সলিমুদ্দিনরা ভিসি হচ্ছেন। এখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি লেখার সময় লেখা হচ্ছে ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়’। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে লাল নীল সাদা গ্রুপ। শিক্ষকের আবার দল কী, তারা তো শিক্ষকই। দল করলে ভিসি বা ডিন হওয়া যায়। চিকিৎসকদেরও এমন বিভক্তি দেখা যাচ্ছে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি শিক্ষাকে রাজনীতিমুক্ত করতে পারেন, কোনো প্রশ্রয় না দেন, উপযুক্ত ব্যক্তিকে উপযুক্ত পদে বসান তাহলে শিক্ষার মুক্তি ঘটবে। নইলে শিক্ষা এভাবেই চলবে।

প্রশ্ন : বাংলাদেশের তরুণদের নিয়ে আপনি কি কোনো আশার আলো দেখতে পান?

বদিউর রহমান : তরুণরা আমাদের সম্পদ। এখন আমাদের বয়সের মধ্যে তরুণরাই সবচেয়ে বেশি। তাদের যে সৃষ্টিশীলতা আছে তা নিয়েই আমরা চলব। তিনটি কাঁচা খারাপ। একটি হলো কাঁচা বয়স। কাঁচা তরকারি। আরেকটি হলো কাঁচা অর্থ। এ তরুণদের কাঁচা অর্থ ও কাঁচা বয়সে একটু গাইড করতে হবে। তরুণদের পয়সা দিয়ে রাজনৈতিক মিছিলে নিয়ে যাওয়া, পার্টি করলে টাকা দেওয়া ‘সম্রাট’ ‘পাপিয়া’ বানানো হবে- তাতে কাজ হবে না। আদর্শের বিষয়টি ঠিক রাখতে হবে।

প্রশ্ন : অবসরে আপনার কীভাবে সময় কাটছে? আপনার লেখা বই কটি?

বদিউর রহমান : আমার কোনো অবসর নেই। চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পর কোনো সময় নেই। ভোরে উঠে ফজর নামাজ পড়ি। কোরআন তিলাওয়াতের চেষ্টা করি। এরপর এক ঘণ্টার মতো হাঁটাহাঁটি করি। এরপর দুই নাতি-নাতনিকে পড়াই। তারপর নিজের কিছু ব্যক্তিগত কাজ করি। তারপর কিছুটা সময় লিখতে বসি, পড়ি। এরপর তো সময়ই পাই না। সময়ই পাচ্ছি না। এ পর্যন্ত আমার নয়টি বই বেরিয়েছে।

সর্বশেষ খবর