শনিবার, ২৬ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

আসুন! একটি সমৃদ্ধ প্রজন্ম গড়ে তুলি

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

আসুন! একটি সমৃদ্ধ প্রজন্ম গড়ে তুলি

সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে নিয়ে যতই ভাবী ততই অবাক হই। ছোট্ট একটি দেশে কী নেই। আল্লাহ যেন নিজ হাতে প্রাকৃতিক ধনভান্ডারের মুখ কাত করে রেখেছেন আমাদের দিকে। নদ-নদীবিধৌত বাংলাদেশের প্রতিটি দৃশ্যপটই কবি-সাহিত্যিকদের সৃজনখোরাক। যেদিকে চোখ যায় সবুজের দেখা মেলে। মেলে প্রাণের কল্লোল। কলম ধরলেই কবিমনের সব ভাব গড়িয়ে আসে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম থেকে শুরু করে জীবনানন্দ দাশ এবং ফররুখ আহমদ পর্যন্ত সবাই বাংলার প্রকৃতির ধনভান্ডার নিয়ে এত এত লিখেছেন যে এক জীবনে সব পড়ে বিশ্লেষণ করা আজ আর আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। হে আল্লাহ! আপনার দুয়ারে লাখো কোটি শুকরিয়া বাংলা মায়ের সন্তান হিসেবে আমাদের কবুল করেছেন এজন্য। শুকরিয়া বাংলার প্রকৃতির মতো এত প্রাণচাঞ্চল্য সম্পদ আমাদের দান করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ।

সুরা রাদের ১১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ! আল্লাহ তোমাদের ভিতর সৃজনক্ষমতা দিয়েছেন। সে ক্ষমতা প্রয়োগ করে তোমরা উন্নতির শিখরে আরোহণ কর। কোনো জাতি যদি হেলাফেলায় নিজেদের ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয় আল্লাহ সে জাতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করবেন না।’ হে আমার প্রিয় ভাই! একটু গভীরভাবে এ আয়াতটি নিয়ে ভাবুন। এ আয়াতের আলোকে আমাদের তরুণ প্রজন্ম কি নিজের সৃজনশীলতার যথাযথ প্রয়োগ করছে? আমাদের শিশুরা কি ফুলের মতো ফুটছে? সংবাদমাধ্যমে প্রায়ই খবর পাই, গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে শহরের কিশোর-তরুণ মাদকের ছোবলে ক্ষতবিক্ষত। মাদকের টাকার জন্য বন্ধুবান্ধব এমনকি বাবা-মাকেও খুন করতে দ্বিধা করছে না। রাজধানীসহ মফস্বলে গড়ে উঠেছে ভয়ংকর কিশোর গ্যাং। পুলিশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে এরা। একে তো এরা এখনো ছোট। কিন্তু এদের অপরাধ খুনখারাবিতে গিয়ে পৌঁছেছে। কেউ কেউ নারী পাচারও করছে বিদেশে। এ অবস্থায় আমাদের প্রজন্মকে খাদের কিনারে দাঁড়ানো ব্যক্তির সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। আমরা যারা অভিভাবক আছি, অনেক দেরি হয়ে গেলেও এখনই আমাদের সচেতন হতে হবে। প্রতি শুক্রবার এ দেশের মসজিদ-গুলোয় খুতবা দেওয়া হয়। প্রজন্মকে বাঁচাতে অভিভাবকদের পাশাপাশি ইমামদেরও গুরুত্বপর্ণূ ভূমিকা পালন করতে হবে। মিম্বরের খতিবও তো একজন অভিভাবক। তিনিও তো কারও না কারও বাবা, চাচা, ভাই। তার আদরের সন্তান, ছোট ভাই, ভাতিজাও আজ মাদকের বিশাল ধ্বংসাত্মক খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে। যে কোনো মুহুর্তেই কলিজার টুকরো সন্তান ভয়ংকর রকম অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে পারে। জাতির এমন নাজুক সময়ে আলেমসমাজকে চুপ থাকলে চলবে না। ইসলামের সোনালি যুগের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, তরুণদের মানসগঠনে আলেম-ইমামদের ভূমিকাই ছিল সবচেয়ে বেশি। তরুণরা কী চায়, কীভাবে বললে, উপস্থাপন করলে তারা ইসলামের সুন্দর আদর্শে নিজের জীবন রাঙাবে এসব নিয়ে বয়োবৃদ্ধ আলেমরা গভীরভাবে ভাবতেন। নিজেদের তারুণ্যের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বর্তমান তরুণদের জন্য পথনির্দেশনা ঠিক করতেন। তাই সে যুগের তরুণরা হতে পেরেছিল রাজি-গাজালি-জাবির বিন হাইয়্যানের মতো জগদ্বিখ্যাত জ্ঞানী-গুণী। তরুণ প্রজন্মের বখে যাওয়ার জন্য, মাদক-কিশোর গ্যাং ও প্রযুক্তি নেশার জন্য দায় সবচেয়ে বেশি আমাদের। আমাদের মনে রাখতে হবে যে আমরা কিন্তু তারুণ্য ও যৌবনের মতো সোনারাঙা সময় পার না করেই এক লাফে বয়োবৃদ্ধের বন্দরে এসে ভেড়াইনি আমাদের জীবনতরী। অনেকের বেলাই দেখা যায় কথাবার্তায় তারুণ্যের প্রশংসা থাকে না। থাকে না তরুণদের জন্য দরদ। যে কারণে আজকের তরুণরা দিন দিন ধর্ম থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। যারা ধর্মের পথে নিজেদের টিকিয়ে রেখেছে তারাও কৌত‚হলী মনের নানান প্রশ্নকে চুপ করিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এভাবে তো বেশিদিন বেশি দূর যাওয়া যায় না। তাই আসুন! আমরা তরুণদের নিয়ে ভাবী। একটি সমৃদ্ধ প্রজন্ম গড়ে তুলতে সময়-মেধা ও শ্রম বিনিয়োগ করি। মহান আল্লাহ আমাদের জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা বাড়িয়ে দিন।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।

সর্বশেষ খবর