মঙ্গলবার, ২৯ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়েছে ৮ হাজার বাংলাদেশি

সুমন পালিত

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়েছে ৮ হাজার বাংলাদেশি

বাংলাদেশে একজনও ইহুদি নেই। পাকিস্তান আমলে রাজশাহীতে ছিল এক ইহুদি পরিবার। বেশ দাপটের সঙ্গেই ছিল তারা।  রেডিও পাকিস্তানে ছিল ওই পরিবারের এক সদস্যের সরব উপস্থিতি। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আগেই তারা চলে যায় এ দেশ ছেড়ে। এ দেশে যেহেতু কোনো ইহুদি নেই সেহেতু এ দেশের নাগরিকদের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ থাকার কথাও নয়। বাংলাদেশের মানুষ বিজ্ঞানী আইনস্টাইনসহ অনেক ইহুদি মনীষীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ইহুদিবিরোধী না হলেও এ দেশের মানুষ নিশ্চিতভাবে ইহুদিবাদবিরোধী। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাক্ষাৎ শত্রুর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন আমেরিকার ইহুদিবাদী পররাষ্ট্র সচিব হেনরি কিসিঞ্জার। পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া টিক্কা-নিয়াজি এবং তাদের দোসর ভুট্টো-মওদুদি-গোলাম আযমের পৃষ্ঠপোষক ভাবা হতো তাকে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর বিজয় ঠেকাতে প্রেসিডেন্ট নিক্সন বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিলেন তার ইহুদি পররাষ্ট্র সচিবের পরামর্শে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসেছে রক্তস্নাত পথে। একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদাররা নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ প্রেক্ষাপটে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তাঁর নির্দেশে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধে ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তাদের মিত্র দেশগুলোর সমর্থন ছিল বাঙালির পক্ষে। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছিল তাদের তাঁবেদার দেশ পাকিস্তানের দিকে। তার পরও কৌশলগত কারণে ৬ ডিসেম্বরের আগে মিত্র দেশগুলো বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো সত্ত্বেও এ ব্যাপারে ইতিবাচক সাফল্য আসেনি। বাঙালি জাতির সেই দুর্দিনে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ইসরায়েল বাংলাদেশকে স্বীকৃতির প্রস্তাব দেয়। ইহুদিবাদী এ দেশটিকে বলা হয় যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য। ইসরায়েলের এ প্রস্তাব বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি মার্কিন সরকারের নেতিবাচক মনোভাব পরিবর্তনের সুযোগ সৃষ্টি করে। কিন্তু সে প্রস্তাবে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী মুজিবনগর সরকার সায় দেয়নি। দুনিয়ার যেসব দেশ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে স্বাধীন দেশের সরকার হিসেবে মর্যাদা দেয় বাংলাদেশ তার অন্যতম। ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে ফিলিস্তিনিরা যে মুক্তিসংগ্রাম শুরু করে তাতে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা হয় গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজবাদী ধ্যান-ধারণাকে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শও ছিল অভিন্ন। যে কারণে একাত্তরের সেই দুঃসময়ে ইসরায়েলি স্বীকৃতি বাংলাদেশের জন্য লোভনীয় হলেও তা মুজিবনগর সরকারকে প্রলুব্ধ করেনি।

প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের নীতিগত এ অবস্থান বাঙালিদের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি করে তাতে কখনো চিড় ধরেনি। ইসরায়েলের আবির্ভাবের পর মুসলিম দেশ তুরস্ক ও ইরান ইহুদি রাষ্ট্রটিকে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৭৩ সালের যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মিসর, জর্ডানসহ অনেক আরব দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করলেও বাংলাদেশ সে পথে পা বাড়ায়নি। বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ইসরায়েল এখনো এক নিষিদ্ধ দেশ।

১৯৭৩ সালে শুরু হয় আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ। এ যুদ্ধ শুরু করে আরবের স্বৈরতন্ত্রী শাসকরা। উদ্দেশ্য একটাই। মিসর, সিরিয়া, জর্ডানের জনসমর্থনহীন শাসকরা চেয়েছিলেন যুদ্ধে ইসরায়েলকে ঘায়েল করে বিজয়ী বীর হিসেবে আরব জনগণের মনে ঠাঁই পাবেন। কিন্তু ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় তাদের লজ্জাজনক পরাজয় হয়। আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ ফিলিস্তিনি জনগণকে বিপদে ফেলে। আরব শাসকরা নতজানু হয়ে যুদ্ধে ক্ষান্ত দিলেও তারা চালিয়ে যায় তাদের প্রতিরোধ সংগ্রাম। এ দুর্দিনে বঙ্গবন্ধু ফিলিস্তিনি আরব ভাইদের মুক্তিসংগ্রামে সহায়তার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের পাঠানোর ঘোষণা দেন। সে ঘোষণায় উদ্বুদ্ধ হয় দেশের মানুষ। এ ঘোষণার পর মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহের বীরউত্তম প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কাছে একটি চিঠি লেখেন। তাতে তিনি ফিলিস্তিনের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রস্তাব দেন। চিঠিটির বাংলা ভাষ্য নিচে দেওয়া হলো-

এম এ তাহের বি উ, লে. কর্নেল (অব.)

ম্যানেজার, সি-ট্রাক ইউনিট

৩০ আর কে দাশ রোড

নিতাইগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা

তারিখ : ১৩ অক্টোবর, ১৯৭৩

জনাব প্রধানমন্ত্রী,

ইহুদিবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমাদের আরব ভাইদের সংগ্রামের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ের জন্য একদল মুক্তিযোদ্ধা পাঠানোর যে আকাক্সক্ষা আপনি ব্যক্ত করেছেন, তা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমাদের বিশ্বাসী ভাইদের এই কঠিন পরীক্ষার সময় তাদের পক্ষ হয়ে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য আমার ইচ্ছা প্রকাশ করছি।

আমার যোগ্যতা প্রসঙ্গে বলতে পারি, দুটি যুদ্ধে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে। আমি ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে পাকিস্তানে ভারতীয় হামলার বিরুদ্ধে শিয়ালকোট সেক্টরে যুদ্ধ করেছি। ১৯৭১ সালের যুদ্ধে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সর্ববৃহৎ সেক্টরকে নেতৃত্ব দেওয়ার সম্মান আমি পেয়েছি। আমার সেক্টরের ছেলেরাই প্রথম ঢাকায় পৌঁছে ঢাকাকে মুক্ত করে।

আমার বর্তমান শারীরিক প্রতিবন্ধিতা যেন একটি বিপন্ন জনগোষ্ঠীর মুক্তি এবং ন্যায়বিচারের লক্ষ্যে চালিত যুদ্ধে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অযোগ্যতা বলে বিবেচিত না হয়। মান্যবর, আপনি অবগত আছেন যে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল স্যাম ব্রাউন, জার্মান সেনাবাহিনীর জেনারেল কাউন্ট ভন স্টফেনবার্গ, ব্রিটিশ বিমানবাহিনীর ডগলাস বাডার প্রমুখ বড় ধরনের শারীরিক প্রতিবন্ধিতা থাকা সত্ত্বেও যুদ্ধ ক্ষেত্রে অসাধারণ যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে যে ইহুদিবাদী সেনাবাহিনীর কমান্ডার জেনারেল মোসে দায়ানেরও শারীরিক প্রতিবন্ধিতা আছে।

জনাব, আপনি যদি আমাকে মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে আমাদের আরব ভাইদের সহায়তা করার সদয় অনুমতি দেন, তবে আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ থাকব।

একান্ত আপনার

(স্বাক্ষর)

এম আবু তাহের বি উ, লে. কর্নেল (অব.)

বঙ্গবন্ধু কর্নেল তাহের বীরউত্তমকে ফিলিস্তিনের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেননি। কারণটি স্পষ্ট। তাহের মুক্তিযুদ্ধে একটি পা হারিয়েছিলেন। যিনি শারীরিকভাবে পঙ্গু তাকে বিদেশবিভুঁইয়ে চরম প্রতিকূল পরিবেশে যুদ্ধে পাঠানোকে বঙ্গবন্ধু যথার্থ মনে করেননি। তবে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের ফিলিস্তিনের মুক্তিসংগ্রামে অংশ নেওয়ার জন্য গ্রিন সিগন্যাল দেন।

ফিলিস্তিনের মুক্তিসংগ্রামে মুসলিম ও আরব দেশগুলোর নতজানু ভূমিকার বিপরীতে বাংলাদেশের ভূমিকাকে ব্যতিক্রম বলে অভিহিত করা যায়। ফিলিস্তিনের মুক্তিযুদ্ধে যেসব বাঙালি তরুণ অংশ নিয়েছেন তার অনেকে শহীদ হয়েছেন। ইসরায়েল বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে নির্মম নির্যাতনের শিকারও হয়েছেন কেউ কেউ। বাঙালির বীরত্ব ও আদর্শবাদিতার প্রশংসাও করেছেন ফিলিস্তিনি নেতারা।

ফিলিস্তিনিদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতৃত্ববোধকে ভালো চোখে দেখেনি বিশ্ব অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক ইহুদিবাদীরা। বাংলাদেশ আমেরিকার জাতশত্রু কিউবার কাছে পাট বিক্রি করায় তাদের টার্গেট হন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষের পেছনে ছিল মার্কিন তথা ইহুদিবাদীদের ষড়যন্ত্র। বাংলাদেশের কেনা গমের জাহাজ তারা ফিরিয়ে নেয় মাঝসাগর থেকে। মনে করা হয় এটি ছিল  ইহুদি লবির প্রতিহিংসা। আমেরিকার রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হয় তাদের হাতে। সে দেশের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রকও তারা। সব রাজনৈতিক দলও পরিচালিত হয় ইহুদিদের অর্থে। বলা যায় গভর্নমেন্টের ওপরে সুপার গভর্নমেন্টের মালিক-মোক্তার ইহুদিরা। এটি মার্কিন প্রচারমাধ্যমেও স্বীকার করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যায় আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর যে হাত ছিল তা ওপেন সিক্রেট। পাকিস্তানি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার কালো হাতও ছিল সক্রিয়। যুক্তরাষ্ট্রের লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের মুক্তিযুদ্ধে প্রায় ৮ হাজার বাংলাদেশি অংশ নিয়েছে। লেবাননের ইংরেজি দৈনিক আল-আখবারে মার্কিন সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ১৯৮৭ সালে ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাতের ঢাকা সফরকালে তাঁকে জানানো হয়, বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৮ হাজার তরুণ পিএলওর পক্ষে যুদ্ধ করতে গেছে। স্মর্তব্য, ফিলিস্তিনের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী তরুণের বড় অংশই ছিল মুক্তিযোদ্ধা তথা আওয়ামী লীগ, জাসদসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল দলের সদস্য। দশম জাতীয় সংসদে নেত্রকোনা থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের একজন সংসদ সদস্যও এ কৃতিত্বের অধিকারী। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধে বাংলাদেশিদের বীরত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ফিলিস্তিনি নেতারা। সিরিয়া সমর্থিত ফিলিস্তিনিদের বিপ্লবী সংগঠন প্যালেস্টাইন ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনের (পিএফএলপি) নেতা, লেবাননের শাতিলা শিবির পরিচালনা পরিষদের সদস্য জিয়াদ হামমো বলেছেন, বাংলাদেশি যোদ্ধারা সামরিক দিক দিয়ে মেধার স্বাক্ষর রেখেছে। তাদের কেউ কেউ এত সুন্দর আরবি বলত যে তাদের বাংলাদেশি হিসেবে ভাবতে কষ্ট হতো। এ যোদ্ধাদের কেউ কেউ শহীদ হয়েছে। ইসরায়েলি হানাদারদের হাতে বন্দী হয়েছে কেউ কেউ। শহীদ বাংলাদেশির একজন কামাল মোস্তফা আলী। লেবাননের হাই রক ক্যামেলের যুদ্ধে তিনি শহীদ হন। ২০০৪ সালে লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েলের বন্দী বিনিময়ের সময় তাঁর লাশ ইসরায়েলিরা ফেরত দেয়। শাতিলা শরণার্থী শিবিরের বাইরে শহীদ গোরস্থানে তাঁকে প্রথমে দাফন করা হয়। পরে তাঁর দেহাবশেষ বাংলাদেশে স্বজনদের কাছে পাঠানো হয়।

ফিলিস্তিনের মুক্তিসংগ্রামে বাংলাদেশি যোদ্ধাদের অংশগ্রহণের কথা নিশ্চিত করেছেন পিএলওর লেবানন শাখার সম্পাদক ফাতি আবু আল আরাফাত। তিনি আল-আখবারকে বলেছেন, এক থেকে দেড় হাজার বাংলাদেশি তাদের হয়ে যুদ্ধ করেছে। পিএলওর এমন ব্যাটালিয়ন ছিল যা বাংলাদেশিদের নিয়ে গঠিত। তিনি বাংলাদেশি যোদ্ধাদের প্রশংসা করে বলেছেন, তারা ছিল সুশৃঙ্খল। অসম্ভব দৃঢ় ছিল তাদের মনোবল। হানাদার ইসরায়েলি সেনাদের হাতে আটক হওয়ার পর নির্যাতনের মুখেও তারা পিএলওর পক্ষে বলেছে এবং ইসরায়েলকে ধিক্কার দিয়েছে।

ফিলিস্তিনের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশি মুক্তিযোদ্ধা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে বঙ্গবন্ধু যে মৈত্রীর বন্ধন রচনা করেন তা অমরতার দাবিদার। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের রজতজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও ফিলিস্তিনের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাতের অংশগ্রহণ ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে তিনি আমৃত্যু দেখেছেন নিজের কন্যা হিসেবে।

পাদটীকা : ফিলিস্তিনি মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে এ লেখাটি লিখতে উদ্বুদ্ধ করেছে গত মে মাসে ফেসবুকে আল্লামা সাঈদী ও আল্লামা মামুনুল হকের এক অনুসারীর স্ট্যাটাস। দুই আল্লামার ওই ভক্ত আশেকান গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আহাজারি করে স্ট্যাটাস দেন, এ সময় দুই হুজুরকে কারাবন্দী করে রাখা না হলে তারা ইহুদিবাদীদের বিরুদ্ধে জিহাদে নামতেন। মুসলমানদের প্রথম কিবলা বায়তুল মুকাদ্দাস মুক্ত করতেন। যুদ্ধাপরাধ ও নারীঘটিত কারণে আটক দুই আল্লামা মুক্ত থাকলে কী করতেন তা নিছক কল্পনার বিষয়। দুই আল্লামা যে বিএনপি জোটের সদস্য সে বিএনপিরই এক নেতা ভারতে গিয়ে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বাংলাদেশের সরকার উৎখাতের এজেন্ডায় বৈঠক করেছেন। সে ছবি গণমাধ্যমেও ফাঁস হয়েছে। ১৯৭৩ সালে ইহুদিবাদীদের হাতে যখন আরব দেশগুলো মার খাচ্ছিল তখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফিলিস্তিন মুক্তির লড়াইয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের পাঠানোর উদ্যোগ নেন। সে সময় আল্লামা সাঈদীর নেতা গোলাম আযম ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নয়, কিসিঞ্জার সাহেবদের মদদে লন্ডনে ও সৌদিতে বসে বাংলাদেশকে পূর্ব পাকিস্তান বানানোর প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। তাদের প্ররোচনায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার আগে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি সৌদি আরব। আল্লামা মামুনুল হকের বাবাজান আল্লামা আজিজুল হক পাকিস্তানের গোলাম হওয়ার খেদমতে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন কি না জানি না। তবে তিনি নিজে কিংবা তার কোনো সাগরেদকে ইহুদিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাঠিয়েছেন, এমন কোনো তথ্য আমাদের জানা নেই।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক।

ইমেইল : [email protected]

সর্বশেষ খবর