রবিবার, ৮ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

বঙ্গমাতা : বিজয়লক্ষী নারী

এ. এস. এম. মাকসুদ কামাল

বঙ্গমাতা : বিজয়লক্ষী নারী

বাঙালি জাতিসত্তার গর্বিত উত্তরাধিকার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব; বঙ্গবন্ধুর প্রিয় সহধর্মিণী ‘রেণু’। অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং কারাগারের রোজনামচায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁকে সহযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়েছেন; কারণ বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের প্রতিটি পর্বে রেণুই তাঁকে উজ্জীবিত এবং ত্যাগের মহিমায় উদ্বোধিত ও অনুপ্রাণিত করেছেন। তিনি ছিলেন কর্তব্যবোধে অবিচল, ধৈর্যশীল; দেশমাতার কল্যাণ কামনায় নিবেদিত এক মহীয়সী নারী; কোমলে-কঠোরে বেড়ে ওঠা ‘বিজয়লক্ষী নারী’।

বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের প্রতিটি পরতে অস্তিত্বমান ছিলেন ফজিলাতুন নেছা মুজিব। সুদিনে দুর্দিনে স্বামী মুজিবকে তিনি পরম মমতায় আগলে রেখেছেন; একজন দূরদর্শী রাজনীতিকের মতো তাঁকে দিয়েছেন কার্যকর পরামর্শ। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় যখন অনেক সহকর্মী বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তির জন্য পাকিস্তান সরকারের প্রস্তাবে সায় দিতে বলেছেন, তখন দ্বিধাবিদ্ধ বঙ্গবন্ধুকে প্যারোল কিংবা জামিনে মুক্তি না নেওয়ার পরামর্শ দেন এই অসমসাহসী নারী। বাংলা মায়ের মর্যাদাকে সমুন্নত রাখার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তায় তিনি দিয়েছেন অকুণ্ঠ সমর্থন। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক রাজনৈতিক ভাষণের প্রেরণাও বঙ্গবন্ধু পেয়েছিলেন তাঁর থেকে। এভাবে বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনৈতিক জীবনের বহুলাংশে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বঙ্গমাতার প্রজ্ঞাময় ভাবনা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। ২০১৮ সালে বঙ্গমাতার জন্মদিনের এক আলোচনা অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমার মা-বাবার মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ছিল অসাধারণ। কোনো জনসভায় বাবা আমাকে দেখলে মনে করতেন আমি মায়ের কোনো বিশেষ বার্তা নিয়ে এসেছি, আমাকে কাছে ডেকে জানতে চাইতেন কী সেই বার্তা।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে বাঙালির মুক্তির আকাক্সক্ষায় গৃহত্যাগী হয়েছিলেন তা কেবলই তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী রেণুর নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগের কারণেই সম্ভব হয়েছিল। টুঙ্গিপাড়ার সেই গৃহলক্ষীর উদার সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া তাঁর পক্ষে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজনীতির মাঠে অথবা জেলজীবনে অবস্থান করা সম্ভব হতো না। স্ত্রীর অসীম ত্যাগ আর সমর্থনের সঙ্গে পিতা শেখ লুৎফর রহমানের উদার প্রশ্রয় তাঁর জীবনকে গতিময় করেছিল; বাঙালির জন্য তাঁর নিঃস্বার্থ সংগ্রামকে অনুপ্রাণিত করেছিল। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘...কলকাতা যাব, পরীক্ষাও নিকটবর্তী। লেখাপড়া তো মোটেই করি না। দিনরাত রিলিফের কাজ, কূল পাই না। আব্বা এ সময় আমাকে একটি কথা বলেছিলেন, “বাবা রাজনীতি কর, আপত্তি করব না। পাকিস্তানের জন্য সংগ্রাম করছ, এ তো সুখের কথা। তবে লেখাপড়া করতে ভুলিও না। লেখাপড়া না শিখলে মানুষ হতে পারবে না। আর একটা কথা মনে রেখ, Sincerity of Purpose and Honesty of Purposeথাকলে জীবনে পরাজিত হবা না”।’ পিতার এই বেদমন্ত্র বঙ্গবন্ধু কস্মিনকালেও বিস্মৃত হননি। বঙ্গমাতাও এ কথাগুলো মন দিয়ে শুনেছেন, আত্মস্থ করেছেন। Sincerity এবং Honesty নিয়ে সারা জীবন মানুষের জন্য কাজ করতে বঙ্গমাতা শেখ মুজিবকে তাই সর্বদা শক্তি-সাহস জুগিয়েছেন। কোনো লোভ-প্রলোভন বঙ্গমাতা এবং তাঁর সন্তানসন্ততিকে এতটুকু স্পর্শ করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু মুজিবের জীবনের প্রতিটি স্তরে বঙ্গমাতা বিরাজ করেছেন আস্থা, বিশ্বাস ও প্রেরণার ছায়াসঙ্গীরূপে।

পুরুষতান্ত্রিক ভারতীয় সমাজব্যবস্থায় নারীকে কখনই মর্যাদার আসন দেওয়া হয়নি। সমাজ ও রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে নারীর অবস্থান ছিল অশ্রদ্ধার; সর্ববিধ বঞ্চনাই ছিল তার বিধিলিপি। আবহমান প্রচলিত এ অমানবিক বিধিব্যবস্থা থেকে বঙ্গবন্ধুর পরিবার ছিল সম্পূর্ণ মুক্ত। বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনে বেগম ফজিলাতুন নেছার অবদানকে অকুণ্ঠ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্বীকার করেছেন। তিনি অবলীলায় বলেছেন, ‘রেণু তার সমস্ত টাকা আমার জন্য জমিয়ে রাখত। আব্বা-আম্মা চোখের আড়াল হলেই রেণু তার জমানো টাকাগুলো আমার হাতে তুলে দিত। আমি নিতে না চাইলেও সে হাতে গুঁজে দিত। আব্বা-আম্মা, ভাই-বোনদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রেণুর ঘরে এলাম বিদায় নিতে। দেখি কিছু টাকা হাতে করে দাঁড়িয়ে আছে।’ এভাবেই মুজিব-রেণুর জীবনবীণা একই সুরে ও ছন্দে অনুরণিত হয়েছে। একদিকে স্বামীর ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধে সিক্ত রেণু তাঁর জমানো সঞ্চয় তুলে দিয়েছেন স্বামীর হাতে, অন্যদিকে স্বামী উদার হাতে তা গ্রহণ করেছেন এবং অকুণ্ঠিত চিত্তে তা লিখে রেখেছেন জীবনের খেরোখাতায়। মুজিব-রেণুর এ অন্তর্জাত ভালোবাসা ও সারল্য দৃশ্যায়িত হয়েছে তাঁদের রাজনৈতিক জীবনে- দেশ ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা জ্ঞাপনে।

সম্ভ্রান্ত ও সচ্ছল পরিবারে বেড়ে ওঠা বেগম মুজিব তাঁর সহজাত গুণাবলির কারণে সাধারণ মানুষের আস্থাভাজন হয়ে উঠেছিলেন। ষাটের দশকের শেষ দিকে বঙ্গবন্ধু যখন পাকিস্তানের জিন্দানখানায় বন্দী ছিলেন, রাজনৈতিক নেতা কিংবা মাঠকর্মীরা যখন সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বিধাগ্রস্ত তখন বেগম মুজিব বিশ্বস্ত কান্ডারির মতো তাদের দিয়েছিলেন পথের দিশা; প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিয়ে আন্দোলনকে করে তুলেছিলেন বেগবান। বেগম মুজিবের দূরদর্শী রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণেই তখন ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটি হয়ে উঠেছিল নেতা-কর্মী ও স্বাধীনতাপ্রেমী মানুষের ঠিকানা; সমগ্র বাংলাদেশের আস্থার প্রতীক। ২০১৮ সালে বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মদিনের আলোচনা সভায় দেশরত্ন শেখ হাসিনা মায়ের দূরদর্শিতা, রাজনৈতিক কৌশল ও প্রজ্ঞার বিষয়ে বলেছিলেন, ‘আমার মা প্রকৃত গেরিলা। কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুর সিদ্ধান্তসমূহ সংগ্রহ করে নেতা-কর্মীদের তা জানিয়ে দেয়ার তাঁর সুনিপুণ গেরিলা কৌশল পাকিস্তানিরা কখনো অনুধাবন করতে পারেনি। গোয়েন্দা রিপোর্টেও তাঁর বিষয়ে কখনো খারাপ কিছু লেখা হয়নি।’ এভাবেই পাকিস্তানি শাসনামলের প্রায় অর্ধেক সময়জুড়ে কারাগারে বন্দী থেকেও কৌশলে বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনৈতিক বার্তা এ দেশের মুক্তিপাগল মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে কারাবন্দী স্বামীর সঙ্গে নেতৃবৃন্দের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগে বঙ্গমাতা পালন করেছেন সেতুসন্ধির ভূমিকা। ফলে সাধারণ মানুষের আস্থায় চিড় ধরেনি; আন্দোলন লক্ষ্যচ্যুত হয়নি। এ ক্ষেত্রে বেগম মুজিবের ভূমিকা নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু দীর্ঘদিন কারান্তরালে থাকাকালে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব প্রায়ই নেতা-কর্মীদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেছেন; প্রকাশ্যে ধর্মীয় কিংবা সামাজিক কর্মসূচির নামে রাজনৈতিক কর্মপ্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছেন। ১৯৬৮ সালের ১২ ডিসেম্বর বেগম মুজিব নিজ বাড়িতে এ রকম এক ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেন। সে আয়োজনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের তেহরিক-ই-ইশতিকলাল পার্টির প্রধান এয়ার মার্শাল আজগর খান। সেখানে জনাব খান পূর্ব পাকিস্তানের উন্নয়নে প্রচুর টাকা খরচ হয়েছে বলে জেনারেল আইয়ুব খান যে বক্তব্য প্রদান করেছেন তাকে ঔপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গি বলে মন্তব্য করেন (দৈনিক আজাদ, ১৩ ডিসেম্বর, ১৯৬৮)। এভাবে সেই ভয়ংকর প্রতিকূল সময়ে স্বামীর অনুপস্থিতিতে সামাজিক-রাজনৈতিক কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছিলেন বেগম মুজিব। এভাবেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন বঙ্গবন্ধুর যোগ্য সহধর্মিণী; রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামের অকৃত্রিম সারথি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিয়ের পুরো বিষয়টি বঙ্গমাতা প্রায় এক হাতেই সম্পাদন করেছিলেন। এমন একসময় এ বিয়ে সম্পাদিত হয় যখন বঙ্গবন্ধু ছিলেন কারাগারে এবং ওই বাড়িতে ভয়েও আত্মীয়স্বজনরা তেমন আসা-যাওয়া করতেন না। ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ গ্রন্থে ড. এম এ ওয়াজেদ লিখেছেন, ‘১৭ নভেম্বর ১৯৬৭ সালে শব-ই-বরাতের রাতে আমাদের বিবাহ রেজিস্ট্রি হয়। পরদিন বিকাল ৪টায় জেলগেটের কাছেই একটি কক্ষে আমাদের বসানো হয়। একটু পর শেখ সাহেবকে উক্ত কক্ষে আনা হয়। তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে আমাদের জন্য দোয়া করেন। ... সাক্ষাৎকার শেষে সন্ধ্যা ৭টার দিকে সবাই শেখ সাহেবের বাসায় ফিরে আসি। বাসায় গিয়ে শাশুড়ি আমাকে বলেন, বাবা তুমি তো বুঝতেই পারছ, মুরুব্বি বলতে এ বাসায় কেউ নেই। কামাল এখনো ছোট। তাছাড়া কোন আত্মীয়-স্বজনও ভয়ে বিশেষ একটা আসে না। তুমি আমার বড় ছেলের মতো। শেখ সাহেব অনুমতি দিয়েছেন যথাসম্ভব তুমি আমাদের সঙ্গে থাকবে।’ এভাবেই প্রতিকূল ও অনিশ্চিত সময়ে সন্তানদের লেখাপড়া, সংসার পরিচালনা, বিবাহবন্ধন সবকিছুর দায়িত্ব বঙ্গমাতা অত্যন্ত নিষ্ঠা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন। তিনি একদিকে সংসার সামলেছেন, স্বামী মুজিবকে সংসারের যাবতীয় দায়ভার থেকে মুক্ত রেখেছেন, সন্তানসন্ততিকে সযত্ন পরিচর্যায় মানুষ করে তুলেছেন; অন্যদিকে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের আন্দোলন-সংগ্রামে সুচিন্তিত পরামর্শ দিয়েছেন। তাই জাতির পিতা তাঁর জীবনীগ্রন্থে বঙ্গমাতার অবদান প্রসঙ্গে যে উচ্ছ¡সিত ছিলেন তা একেবারেই যথার্থ। এটি সবার জানা, শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ ফজিলাতুন নেছার জন্ম টুঙ্গিপাড়ার শেখ বংশে। রেণুর দাদা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আব্বার চাচা। পারিবারিক ঐতিহ্যের কথা বলতে গিয়ে শেখ মুজিব লিখেছেন, ‘আমাদের বাড়ির দালানগুলোর বয়স দুইশত বছরেরও বেশি হবে।’ অর্থাৎ উত্তরাধিকারসূত্রে বঙ্গবন্ধু ছিলেন এক সম্ভ্রান্ত সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। খোকা-রেণু দুজনই আজন্ম নেতৃত্বের গুণাবলি নিয়ে বড় হয়েছেন। রাজনীতিচিন্তা ছিল তাঁদের ধমনিতে; জীবনচর্চায়। এজন্যই শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব অসুস্থ ও শয্যাশায়ী থেকেও স্বামীকে ১৯৪৬ সালে দাঙ্গা-আক্রান্ত এলাকায় যেতে বারণ করেননি; বরং উৎসাহিত করে তাঁকে একটি চিঠিতে লিখেছেন, ‘আপনি শুধু আমার স্বামী হওয়ার জন্য জন্ম নেননি, দেশের কাজ করার জন্যও জন্ম নিয়েছেন। দেশের কাজ আপনার সবচেয়ে বড় কাজ। আপনি নিশ্চিত মনে আপনার কাজে যান। আল্লাহর উপর আমার ভার ছেড়ে দিন।’ এ চিঠিই বেগম মুজিবের সহজাত রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও মানবিক দর্শনের অনন্যসাধারণ দলিল।

বঙ্গবন্ধুর মতো তিনিও ছিলেন অসহায় ও বিপন্ন মানুষের অন্তরঙ্গ স্বজন। বাংলাদেশের মানুষকে তিনি মায়ের মমতায় ভালোবেসেছেন; তাদের জন্য তিনি তাঁর সুখস্বাচ্ছন্দ্য, আরাম-আয়েশ অকাতরে বিসর্জন দিয়েছেন; দুঃখ-দুর্দৈবে তাদের আগলে রেখেছেন। এজন্য টুঙ্গিপাড়ার বালিকাবধূ রেণু, পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধুর আন্দোলন-সংগ্রামের একনিষ্ঠ সহচর বেগম মুজিব কিংবা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জীবনাচরণে আমরা কোনো পার্থক্য দেখি না। কোনো ঠুনকো আভিজাত্যে ঢাকা পড়েনি তাঁর ব্যক্তিত্ব। সহজ-সরল বাঙালি মায়ের মতোই ছিল তাঁর যাপিত জীবন। এজন্যই তিনি বঙ্গমাতা। বঙ্গমাতা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-দর্শন ও রাজনৈতিক চেতনাদর্শের অনুঘটক চরিত্র। বঙ্গবন্ধুর জীবনব্যাপী সাফল্যের সঙ্গে তিনি জড়িয়ে আছেন নিবিড়ভাবে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাম্যবাদী’ কাব্যগ্রন্থের ‘নারী’ কবিতার দুটি চরণ এ প্রসঙ্গে স্মরণযোগ্য-

কোনো কালে একা হয়নিকো জয়ী পুরুষের তরবারি,

প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে বিজয়-লক্ষী নারী।

বঙ্গবন্ধু এবং বাঙালির স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাসকে গৌরবান্বিত করেছেন বঙ্গমাতা। তাই দেশরত্ন শেখ হাসিনা বঙ্গমাতা সম্পর্কে অকপটে বলেছেন, ‘আমার মা’র মতো একজন মহীয়সী নারী আমার বাবার পাশে ছিলেন বলেই বাবা হতে পেরেছেন সমগ্র জাতির মানুষের নেতা। একজন বঙ্গবন্ধু, একজন জাতির পিতা।’ বঙ্গমাতার কাছে বাঙালি জাতির ঋণ তাই অশেষ ও অপরিশোধ্য।

লেখক : প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সর্বশেষ খবর