সিভিল প্রশাসনের নানান ঘটনা ঘন ঘন আলোচনায় আসছে। এসব ঘটনার কেন্দ্রে আছেন মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সচিবও। তবে মাঠের বিষয়টিই আলোচনায় আসছে বেশি। এর মধ্যে অধিক আলোচিত হয়েছে ইউএনওর বাসভবনের বাগানের ফুলগাছ খাওয়ায় ছাগল আটক করে নিলামে বিক্রি, গাড়িতে ধাক্কা দেওয়ায় অটোচালককে তিন দিন ধরে বাসায় আটকে রাখা, নতুন কেনা শটগান গভীর রাতে গুলি ফুটিয়ে পরীক্ষা করা, মাস্ক না পরায় দুই বৃদ্ধকে কান ধরিয়ে উঠবোস করানো ইত্যাদি। এসব ঘটনায় ঘন ঘন আলোচনায় আসছেন ইউএনওরা।
শুধু ইউএনও নয়, অস্ত্র নিয়ে আলোচনায় এসেছেন একজন সিনিয়র সচিব। তিনি এ ছবি নিজেই পোস্ট করেছেন তার ফেসবুক ওয়ালে। সম্প্রতি এই সচিবই আলোচিত হয়েছেন বরিশালের ঘটনায় সীমা লঙ্ঘন করে ভুলে ভরা বিবৃতি প্রদানের মাধ্যমে। এদিকে প্রশাসন ক্যাডারের বিবৃতিকে অতিক্রম করে আলোচনার শীর্ষে পৌঁছে গেছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার, ২৯ আগস্ট দুস্থদের মধ্যে সেলাই মেশিন বিতরণ অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যের কারণে। তিনি আমলাতন্ত্রের দ্বিতীয় ধাপের কর্মকর্তা হলেও জেলা প্রশাসক হিসেবে পদের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ আমলা। বিশ্বের সব সরকারই আমলাতন্ত্র-নির্ভর।
এদিকে আমলাতন্ত্র নিয়ে খুবই বাস্তব কথা বলেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তার উচ্চারণ, ‘আমি নিজেও ছোটখাটো আমলা ছিলাম একসময়। মনেপ্রাণে এখনো বড় আমলা আছি। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় কেটেছে আমলাতন্ত্রের ভিতরে। আমলাতন্ত্র মন্দ নয়, ভালো। আমলাতন্ত্রের কোনো বিকল্প কেউ বের করতে পারেনি। সোভিয়েতরা বের করতে পারেনি, চীনারাও বের করতে পারেনি, ফেরাউন পারেনি, খলিফারাও পারেনি। সেই মহান আমলাতন্ত্র আমাদের মধ্যে আছে।’
আমলাতন্ত্রের বিকল্প নেই- সদাশয় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান যথার্থই বলেছেন। তার মূল বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন না কেউ, এমন সুযোগও নেই। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, আমলাতন্ত্রের বিকল্প বের করতে মাননীয় মন্ত্রীকে কে বলেছে? এ কথা তো কেউ বলেনি! কেবল বলা হচ্ছে, আমলাতন্ত্রের মধ্যে যারা বিধিবিধানের বাইরে আচরণ করছেন, তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে। যা খুবই জরুরি। এর ওপর বেশ কিছুদিন ধরে যেসব খবর আসছে তাতে বিষয়টি খুবই জরুরি হয়ে গেছে। কিন্তু এ জরুরি কাজটি হাতে নেওয়া হয়েছে বলে আমরা আমজনতা অনুভব করতে পারছি না। বরং মাঠপর্যায় থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত আমলাদের আচরণের খন্ডচিত্রগুলো পর্যবেক্ষক মহলকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। উদ্বিগ্ন আমজনতাও। শুধু আচরণ ও বক্তব্য নয়, আমলাদের মূল কাজের ক্ষেত্রে নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর প্রায়ই আসছে গণমাধ্যমে। কেবল তাই নয়, জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে দুস্থদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর আবেগের উপহার ঘর নির্মাণের বিষয়টিও দুর্নীতির বাইরে থাকল না। অথচ নানান অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের খবর তেমন আসে না বললেই চলে। এদিকে পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তা-সদস্যদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আসছে এন্তার। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মৌলিক পার্থক্য আছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ কর্মকর্তা-সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার খবর পওয়া যায় আহরহ। গ্রেফতারের উদাহরণও আছে অনেক। কিন্তু সিভিল প্রশাসনে এমন ছিটেফোঁটা উদাহরণও নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, সিভিল প্রশাসন কি ইনডেমনিটি প্রাপ্ত? তা তো নয়! সিভিল প্রশাসনে আলোচিত নানান অভিযোগের ছড়াছড়ি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভুয়া সনদ দিয়ে সচিবের চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির চেষ্টা, মুক্তিযুদ্ধের পদকে সোনার বদলে পিতল দেওয়ার মতো অনেক ঘটনা আলোচনায় আছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে মাঠপর্যায়ের প্রশাসন নিয়ে। এর মধ্যে বেশি আলোচিত গণতান্ত্রিক শেখ হাসিনা সরকারের আমলে অতিসম্প্রতি বরিশালের ঘটনাটি। প্রায় একই আলোচনার ঘটনা সৃষ্টি হয়েছিল জেনারেল এরশাদের সামরিক শাসনামলে গাজীপুরে। এরশাদ সরকারের সময় গাজীপুরে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত ছিলেন জাকিরুল ইসলাম। তিনি আলোচিত হয়েছিলেন পুলিশের হাত থেকে রাইফেল কেড়ে নিয়ে গুলি করার ঘটনায়। এ সময় তিনি ক্ষমতাসীন দলের নেতা হাসান উদ্দিন সরকারকে হেনস্তাও করেন। এর পরও জাকিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তিনি চাকরির নির্ধারিত মেয়াদ শেষ করে অবসরে গেছেন। অথচ কেবল গাজীপুরে নয়, পুরো চাকরি জীবনেই তিনি নানান অঘটনের জন্ম দিয়েছেন। উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ছাত্রদল নেতা ছিলেন এবং মুহসীন হল ছাত্র সংসদের জিএস নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ছিলেন ছাত্রদলের প্যানেল থেকে একমাত্র বিজয়ী প্রার্থী। ছাত্রজীবনে করা রাজনীতির ‘গরমে’ পুরো চাকরি জীবনে তিনি উগ্র প্রবণতার বাইরে খুব একটা যেতে পারেননি।
অতিসম্প্রতি, ১৮ আগস্ট রাতে বরিশালে সৃষ্ট রহস্যজনক জটিল ঘটনার আলোচনার কেন্দ্রে আর এক আমলা সদর উপজেলার ইউএনও মুনিবুর রহমান। জাকিরুল ইসলামের মতো তিনি পুলিশের রাইফেল ছিনিয়ে নিয়ে গুলি করেননি। তবে তার নির্দেশে কর্তব্যরত আনসার বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ করেছে। মুনিবুর রহমানের দাবি অনুসারে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। এদিকে তার ঘনিষ্ঠজনদের দাবি, স্কুলজীবনে তিনি বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। এ পর্যন্ত আমলা জীবনে তিনি ছাত্র রাজনীতির প্রবণতা থেকে খুব একটা বেরিয়ে আসতে পেরেছেন বলে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে না। এর অনেক উদাহরণের মধ্যে এ পর্যন্ত প্রধান হচ্ছে ১৮ আগস্টের রাতের ঘটনা। অনেকেই মনে করেন, আমলাদের কর্মকান্ডে নানান বিপত্তির কারণ হচ্ছে অনেক আমলাই তার ডেজিগনেটে দায়িত্বে একাগ্র হওয়ার পরিবর্তে অতীতের ‘গরম’ এবং রাজনৈতিক কানেকশনের জাবর কাটেন। আবার এ জাবর কাটা মোটেই অকারণে নয়। এর পেছনে আছে প্রাপ্তিযোগ! যৌবনে কবিতা লেখা যেমন, তেমনই ছাত্রজীবনে রাজনীতি করা আমাদের দেশে অনেকটাই সাধারণ প্রবণতা। এটি দোষের কিছু নয়। কিন্তু ছাত্রজীবনে করা রাজনীতির ধারা সরকারি চাকরি জীবনে প্রকটভাবে প্রলিফলিত হওয়াই হচ্ছে উদ্বেগের। আর এ উদ্বেগের মনুমেন্ট হয়ে আছেন জাকিরুল ইসলাম ও মুনিবুর রহমান। এ দুজনের মধ্যে আবার অধিকতর আলোচনায় আছেন বরিশাল সদর উপজেলার ইউএনও মুনিবুর রহমান। উদ্বেগজনক ঘটনার পর স্থানীয় রাজনীতি ও প্রশাসনের একটি গোঁজামিলের আপসরফা হয়েছে। ফলে আলোচনা অনেকটাই থিতিয়ে পড়েছিল। তবে রয়ে গিয়েছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্পের সংজ্ঞার মতো। কিন্তু তা আবার তুঙ্গে তুলে চাঙা করে দিলেন বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার।
আলোড়ন সৃষ্টিকারী বরিশালে ১৮ আগস্টের ঘটনার ১১ দিনের মাথায় ২৯ আগস্ট বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের গিলাতলী আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল জাহিদ ফারুক শামীমের উপস্থিতিতে জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেছেন, ‘মুনিবুর রহমান ১০ আগস্ট বদলি হয়েছেন, তিনি যত দিন ইচ্ছা এখানে ইউএনও হিসেবে কাজ করবেন! আন্তরিকতাকে যেন কেউ দুর্বলতা না ভাবেন। জেলায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধিত্ব করছেন জেলা প্রশাসক এবং উপজেলায় ইউএনও। ইউএনওর গায়ে কেউ আঘাত করলে তা প্রধানমন্ত্রীকে অপমানের শামিল। যারা রাষ্ট্রের জন্য কাজ করেন তারা প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধিত্ব করেন, তাঁদের সম্মান দেখাতে হবে। কর্মকর্তারা রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করেন। ইউএনওকে তার কাজ করতে দিতে হবে। অনেকে বলেন ইউএনওকে বদলি করা হয়েছে। তাকে বদলি করা হয়েছে ১০ আগস্ট, ঘটনার আট দিন আগে।’
বাংলাদেশের গড় হিসাবে বরিশালের বর্তমান জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার খুবই সুদর্শন। তিনি কথা বলেন আরও সুন্দর করে। তার আকর্ষণীয় বক্তব্য দেওয়ার অসাধারণ যোগ্যতা নিয়ে কারও দ্বিমত থাকার কথা নয়। কিন্তু দ্বিমত আছে তার বক্তব্যের বেশ কিছু শব্দ ও বাক্য নিয়ে। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তিনি এ ধরনের শব্দ ও বাক্য প্রয়োগ করতে পারেন কি না! আরও প্রশ্ন আছে, ১৮ আগস্ট রাতে সংঘটিত মহাবিব্রতকর বিষয়টি আবার কেন আলোচনায় আনলেন বরিশালের জেলা প্রশাসক? এ কি বরিশালে ১০ প্লাটুন বিজিবি চাওয়ার মতো বিষয়, নাকি অন্য কিছু? বিব্রতকর এ প্রশ্ন কিন্তু এর মধ্যেই টক অব দ্য কান্ট্রি হয়ে গেছে।
আরও প্রশ্ন আছে উচ্চ পর্যায়ের প্রশাসন নিয়েও। তা হচ্ছে ১৮ আগস্ট বরিশাল সদর উপজেলা কমপ্লেক্সে অবাঞ্ছিত ও রহস্যজনক ঘটনার পর অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন যে বিবৃতি দিয়েছে সে ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার? বলাবাহুল্য, প্রশাসন ক্যাডারের এ বিবৃতির বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে তা প্রকারান্তরে স্পষ্ট হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল হকের বক্তব্যে। ২৩ আগস্ট মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছেন, ‘বরিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবনের ঘটনায় অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতির বিষয়ে সচিবসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা দ্বিমত পোষণ করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিবৃতিটির ভাষা এমন হওয়া উচিত ছিল না। এ ধরনের ভাষা ব্যবহার ভুল হয়েছে বলে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারাও একমত পোষণ করেন। এ ধরনের ভাষা ব্যবহার শোভনীয় নয়।’
সাধু! সাধু! যথার্থই বলেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব আনোয়ারুল হক। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, অ্যাসোসিয়েশনের আওতায় আমলাদের অগ্রহণযোগ্য লিখিত বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পাল্টা বক্তব্য দেওয়াই কি শেষ কথা? নিশ্চয়ই তা নয়। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আচরণ ও কথাবার্তার সীমারেখা সরকারি চাকরিবিধিতে অত্যন্ত স্পষ্ট। তাহলে ব্যবস্থা নিতে সমস্যা কোথায়? জানা কথা, বিধিবিধানে কোনো সমস্যা নেই, সমস্যা প্রয়োগের ক্ষেত্রে।
সবাই জানেন, দেশ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রধান শর্ত হচ্ছে সুষ্ঠু প্রশাসনব্যবস্থা। কিন্তু তা অনেকটাই ব্যবহৃত হয়েছে নানান কারণে। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে দলীয় আনুগত্যের ছদ্মাবরণে একশ্রেণির আমলার তেলবাজি ও দুর্নীতি। অথচ স্বীকৃত সত্য হচ্ছে, তেলবাজদের পরিবর্তে প্রশাসনে দরকার দক্ষ-মেধাবী-সৎ কর্মকর্তা। সঙ্গে জরুরি হচ্ছে দুর্নীতি থেকে বিরত রাখার ব্যবস্থাগুলো কঠোরভাবে প্রয়োগ করা। সহজে বোধগম্য, দুর্নীতির পেছনে প্রধান প্রবণতা হচ্ছে ভোগবিলাসের বাসনায় টাকা কামানো। মানুষের ইনবিল্ড এ প্রবণতা বিবেচনায় রেখেই সম্পদের হিসাব নেওয়ার একটি বিধান আছে। তা হোক ইউনিয়ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি, অথবা মন্ত্রী-এমপি-ব্যবসায়ী। সম্পদের হিসাব দেওয়ার আইনগত কঠোর বাধ্যবাধকতার মধ্যে আছেন আমলারাও। এখানেই ‘কবি নীরব’। সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর হচ্ছে, ‘সম্পদের হিসাব দিতে আমলাদের অনীহা’।
প্রকাশিত খবর অনুসারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে অফিস আদেশ জারির দুই মাস পেরিয়ে গেলেও সম্পদের হিসাব দেওয়ার কোনো তাগিদ নেই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। ২৬ আগস্ট পর্যন্ত কেউই তাদের সম্পদের হিসাব দেননি বলে প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্পদের হিসাব দেওয়ার অফিস আদেশে সময়সীমা বেঁধে না দেওয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অনেকটা গা-ছাড়া ভাব বিরাজমান। আইন অনুসারে প্রতি পাঁচ বছর পরপর ডিসেম্বরে চাকরিজীবীদের বাধ্যতামূলকভাবে সম্পদের হিসাব দেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯-এ এ বিধান বাস্তবায়ন হচ্ছে না। প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনীহার কারণেই গুরুত্বপূর্ণ এ বিধি বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে ধারণা বিরাজমান। ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদ অর্জনের উৎস সম্পর্কে অন্ধকারেই থেকে যাচ্ছে সরকার। এবং অনেকেই দুর্নীতির মাধ্যমে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কামানোর অপার সুযোগ নিচ্ছেন। এরাই প্রশাসনে সৃষ্টি করছেন নানান অঘটন।
পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, বিরাজমান বাস্তবতায় তৃণমূল থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা খুই জরুরি। আর এ বিধানের আওতায় আনা প্রয়োজন অন্য সব পেশার মানুষদেরও। আর ছাত্রজীবনে কে ক্ষমতাসীন দলের সমমনা রাজনীতির ধারায় সম্পৃক্ত ছিলেন সেটাই আমলার কুষ্ঠিনামা বিচারে একমাত্র পরিমাপক হিসেবে বিবেচনা করা ঠিক নয়। বরং আত্মঘাতী। এ প্রসঙ্গে একটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন, ‘পতিতারও একসময় সতীত্ব থাকে’।
লেখক : জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক।