বৃহস্পতিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ফিরে আসুক উদারনৈতিক সুফি ইসলাম

তসলিমা নাসরিন

ফিরে আসুক উদারনৈতিক সুফি ইসলাম

১. ব্রহ্মপুত্র নদ ছিল আমাদের বাড়ি থেকে হাঁটা দূরত্বে। নদের তীরে প্রায় বিকেলেই চলে যেতাম ছোটবেলায়। দেখতাম তীরে দাঁড়ানো ‘বুড়া পীরের মাজার’টিতে লোকের ভিড়। দেখতাম নারী-পুরুষ মোমবাতি জ্বালিয়ে যাচ্ছে সেই মাজারে। দেখতাম মাজারের পাথরে মাথা ঠেকিয়ে কেউ কিছু চাইছে। দেখতাম দানবাক্সে টাকা ফেলছে নারী-পুরুষ। দেখতাম ভিড়ের নারী-পুরুষ অনেকের গায়ে ধুতি, গায়ে শাখা সিঁদুর। মাকে জিজ্ঞেস করতাম, মুসলমান পীরের মাজারে হিন্দুর ভিড় কেন? মা বলতেন মাও তার ছোটবেলায় এমনই দেখেছে। মাজারে হিন্দু মুসলমান সকলেই যায়। অন্য ধর্মের মানুষও মুসলমান পীরকে মানছে বলে মুসলমান বলে গর্ব হতো মা’র। বড় হয়ে উপমহাদেশের বেশ অনেক মাজারই কাছ থেকে দেখেছি, নয় ওসবের গল্প শুনেছি। শুনেছি শুধু মুসলমান নয়, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান সব ধর্মের লোকই মাজার জিয়ারত করতে যায়। আদিকাল থেকেই যায়। কারণ খুঁজতে খুঁজতে ভারতবর্ষে ইসলাম কী করে এলো তার ইতিহাস পেয়ে যাই। ইতিহাস বলে সপ্তম শতাব্দীতেই আরবের মুসলমান ব্যবসায়ী আরব সাগর পাড়ি দিয়ে ভারতবর্ষে প্রবেশ করেছিলেন মশলার আশায়। মালাবার অঞ্চলে তাঁরা স্থানীয় নারীদের বিয়ে করে পাকাপাকি বাস করতে শুরু করেন। তারও আরও পরে বাগদাদ থেকে হাঁটি হাঁটি পা পা করে সুফিরা ঢুকে যান বিশাল ভারতবর্ষে। সুফিরা এসেছিলেন ইসলাম প্রচার করতে, মুঘলরা নয়। মুঘলদের উদ্দেশ্য ছিল সম্পূর্ণই রাজনৈতিক। যে কোনও উপায়ে ক্ষমতায় আরোহণ। মুঘল সম্রাটরা ধর্ম প্রচারে উৎসাহী ছিলেন না, তাঁরা নিজেরাই বিধর্মীদের বিয়ে করেছেন এবং বিধর্মীদের নিজ নিজ ধর্ম পালনে উৎসাহ দিয়েছেন। সুফিরা যে ইসলাম প্রচার করেছিলেন, সেটি ছিল উদার ইসলাম। উদার মুসলমানের হাতে পড়ে সেই ইসলামটি স্বার্থকে নয়, সেবাকে বড় করে দেখেছে, মহানুভবতাকে সবার ওপরে ঠাঁই দিয়েছে। লোভ লালসা, খুনোখুনি প্রতিশোধ প্রতিহিংসে বাদ দিয়ে আধ্যাত্মিকতায় মনোনিবেশ করেছেন সুফিরা। সুফিরা যে আদর্শ ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন সবখানে, তা হলো, ঈশ্বর এক, ঈশ্বরের সৃষ্ট মানুষ সকলে সমান, যার যা ধর্ম থাকুক, যার যা বিত্ত থাকুক, যার যা জাত থাকুক, সবাইকে মানুষ হিসেবে সমান মর্যাদা দিতে হবে। মানুষের সেবাই ঈশ্বরের সেবা। সুফিদের সমতার আদর্শে আকৃষ্ট হয়ে সমাজের দরিদ্র, নির্যাতিত, নীচুজাত ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হয়ে গেছে। চিশতিদের খানকা শরিফগুলোতে সব জাতকেই এক থালায় খাওয়ানো হতো। কুৎসিত জাতপ্রথাকে অস্বীকার করেছিলেন সুফিরা। সুফিরা মানুষের সততা এবং স্বার্থহীনতাকে মূল্য দিতেন। সমগ্র ভারতবর্ষে মুসলিমরা এই সুফি আদর্শেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম প্রভাবিত হয়েছে। সুফি ইসলাম স্থানীয় হিন্দু সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে এক উদার ইসলামের জন্ম দিয়েছে। বাংলার ইসলামের চর্চা আর রাজস্থানের ইসলামের চর্চা তাই ভিন্ন। তামিল ইসলামের চর্চা আর উত্তর প্রদেশের ইসলামের চর্চা তাই ভিন্ন। একজন বাঙালি মুসলমানের সংস্কৃতি আর একজন রাজস্থানি মুসলমানের সংস্কৃতি আর একজন তামিল বা উত্তর প্রদেশের সংস্কৃতি তাই ভিন্ন। বাঙালি মুসলমানের সংস্কৃতির সঙ্গে তামিল মুসলমানের সংস্কৃতির মিল নেই, মিল আছে বাঙালি হিন্দুর সংস্কৃতির। ভারতীয় উপমহাদেশে আমরা যে উদার ইসলামের দেখা পাই, সেই উদার ইসলাম মধ্যপ্রাচ্যে আমরা পাই না।

কাশ্মীরের চৌদ্দ হাজার ফুট ওপরের অমরনাথ মন্দিরের গুহাটি আবিষ্কার করেছিল বুট্টা মালিক নামের একজন মুসলমান মেষপালক। সেই থেকে মন্দিরটিতে হিন্দু পুণ্যার্থীরা ভিড় করছে। দীর্ঘকাল এই মন্দিরটির দেখাশোনা করেছে এক মুসলিম পরিবার। দক্ষিণে সবরিমালা মন্দিরে যেতেও মুসলমানের মাজার হয়ে যেতে হয়। দর্শনার্থীরা মাজার জিয়ারত করে মন্দির দর্শনে যায়। হিন্দু মুসলমানের পারস্পরিক এই সৌহার্দ্যকে নষ্ট করা হয়েছে বারবারই, সবই রাজনৈতিক স্বার্থে। রাজনৈতিক স্বার্থে দুই সম্প্রদায়ে বিভাজন সৃষ্টি করা হলো। এত বড় ভারতবর্ষ ভেঙে টুকরো হলো। ধর্মের কারণে যদি দেশ ভাগ হয়, তা হলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে পাকিস্তান আর বাংলাদেশে। হই হই করে মৌলবাদ, ধর্মান্ধতা আর জিহাদ বাড়ছে। সুফি ইসলামকে ঠেলে সরিয়ে এসে গেছে দেওবন্দি আর ওয়াহাবি ইসলাম।

আমি আমার শৈশব কৈশোরে দেখেছি আমাদের বৃহৎ যৌথ পরিবারে দু-একজন বৃদ্ধা এবং বৃদ্ধ ছাড়া কেউ নামাজ পড়ে না। আর এখন তিন বা চার দশক পর পরিবারের প্রত্যেকের লেবাস বদলে গেছে, সকলে রোজা রাখে, সকলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। এ শুধু আমার পরিবারেই নয়। প্রায় প্রত্যেক পরিবারের চিত্রই এই। ধর্ম পালন আগের চেয়ে কতগুণ বেড়েছে, তা নিশ্চয়ই গবেষকরা সঠিক বলতে পারবেন। সাধারণ ধার্মিক বা বিশ্বাসীর সংখ্যা এখন কতগুণ বেড়ে ধর্মান্ধ উগ্র মুসলিমে রূপ নিয়েছে, সেও গবেষণার বিষয়। যত ধর্ম বেড়েছে, তত নৈতিকতা কমেছে। কোনও দিন আগে শুনিনি মসজিদের ইমাম শিশু ধর্ষণ করে, কোনও দিন আগে শুনিনি আল্লাহর নাম নিয়ে নাস্তিকদের কুপিয়ে মারা হয়েছে কোথাও। আজ শরিয়াপন্থি তালিবানের ক্ষমতা দখলে মানুষ আনন্দে উল্লাস করে! কোথায় আজ উদারপন্থি মুসলমান?

বর্বর তালিবান স্থলদস্যুদের মতো বন্দুকের জোরে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করেছে। বারবার মিথ্যে বলছে যে তারা এখন আগের তালিবান নেই, তারা বদলেছে, তারা মেয়েদের অধিকার এবার থেকে মেনে নেবে। কিছুই মেনে নেয়নি, তারা আসলে এসব বলে পৃথিবীর মানুষকে বোকা বানাচ্ছে। পরিবর্তনের কথা বললে ইহুদি নাসারাদের ধনী দেশগুলো ভিক্ষে দেবে, তাই বলছে। আসলে তারা আগের তালিবানই রয়ে গেছে, আগের সঙ্গেই বা তুলনা দিচ্ছি কেন, তারা আগের চেয়ে এখন বেশি শক্তিশালী, বেশি ভয়ংকর, বেশি বর্বর। তারা জানিয়ে দিয়েছে, চুরি করলে মানুষের হাত কাটবে, প্রেম ভালোবাসা ‘অবৈধ’ হলে মেয়েদের পাথর ছুড়ে মেরে ফেলবে, তারা মেয়েদের বোরখা বা নিকাব ছাড়া রাস্তাঘাটে দেখতে চায় না, মেয়েদের একা ঘরের বাইরে বেরোনোর স্বাধীনতা নেই, বেরোলে পুরুষ অভিভাবক নিয়ে বেরোতে হবে, ছেলেদের সঙ্গে এক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার অধিকার মেয়েদের নেই। কর্মজীবী মেয়েরা ঘরে বসে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। তাদের চাকরি বাকরি ব্যবসা বাণিজ্য করার অধিকার নেই। বর্বর লোকগুলো শিল্প, সঙ্গীত এবং সব রকম সুকুমারবৃত্তির বিরুদ্ধে। তারা শুধু সঙ্গীত নয়, সভা সমিতি মিছিল সেøাগানও নিষিদ্ধ করেছে। বাকস্বাধীনতাবিরোধী মানবতাবিরোধী নারীবিরোধী এ এক অসহিষ্ণু ইসলাম। এই অসহিষ্ণু ইসলামের চর্চা বহুদিন থেকে আফগানিস্তানে আশ্রয় নেওয়া জঙ্গি জিহাদি সংগঠনগুলো করছে এবং ফুলে ফেঁপে বড় হয়ে বিশ্বময় সন্ত্রাস করে বেড়াচ্ছে।

হিন্দু কি কম উদার ছিল? বহিরাগত অহিন্দুকে আদিকাল থেকে আশ্রয় দিচ্ছে, এমনকি দেশ শাসন করতেও দিয়েছে। সেই হিন্দুও দিন দিন অনেকটাই অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে। জিহাদিদের হিন্দুরা ঘৃণা করে বটে, কিন্তু অনেকে আবার প্রভাবিতও হয়। নিরীহ মুসলমানকে, ধর্মনিরপেক্ষ হিন্দু বুদ্ধিজীবীকে হেনস্তা করতে, এমনকী হত্যা করতেও উগ্রপন্থি চরম ডানপন্থি মাঝে মাঝে দ্বিধা করে না। কোথায় গেল ভাববাদী হিন্দু দর্শন?

কাশ্মীরের মুসলমানরা লক্ষ লক্ষ কাশ্মীরি হিন্দু পন্ডিতকে মেরে উৎখাত করেছে নিজ বাসভূমি থেকে। কোথায় গেল সেই উদারনৈতিক ইসলাম? সুফি ইসলামকে কবর দিয়ে উগ্রপন্থি ইসলামের জয়জয়কার এখন। এই জয়ের পতাকা যারা ওড়াচ্ছে, তারা জানে না, তারা যে আলোকে পুড়িয়ে দিয়ে ঘুরঘুট্টি অন্ধকারকে সাদরে বরণ করছে।

২. কেউ কেউ বলছে প্রতি বছর দুর্গাপুজোর আগে আগে বাংলাদেশে মন্দির বা মূর্তি ভাঙা হয়, এ বছরও হচ্ছে। আবার এও শুনেছি বাংলাদেশের সরকার প্রচুর টাকা ব্যয় করবেন হিন্দু মন্দিরগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। তাহলে কি প্রয়োজনে মন্দির ভাঙা হবে, আবার প্রয়োজনে গড়াও হবে? ভাঙা গড়ার রাজনীতি বেশ জমজমাট! পাকিস্তানি সৈন্য দ্বারা ধংস হওয়া রমনা কালীমন্দির গড়ার জন্য নাকি ভারত টাকা দেবে। ভারতকে কেন টাকা দিতে হবে? বাংলাদেশেরই তো উচিত নিজের টাকায় ঐতিহ্যবাহী রমনা কালীমন্দিরটি গড়া!

আমি ঘোর নাস্তিক হয়েও কেন বলছি ধর্মীয় উপাসনালয় গড়ে দিতে! কারণ আমি মানুষের ধর্ম পালন করার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। ঠিক যেরকম ধর্ম পালন না করার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি।

মানুষ কুসংস্কারমুক্ত হলে, মানুষ সত্যিকার বিজ্ঞানমনস্ক হলে, মন্দির মসজিদ গির্জা সিনেগগ হবে এক একটা জাদুঘর। সেদিন ভবিষ্যতের মানুষ ইতিহাসে পড়বে ধর্মের কারণে এককালে কী কুৎসিত হানাহানিই না করত তাদের পূর্বপুরুষেরা।

৩. নাস্তিক হলেই যে মানুষ মানুষ হিসেবে ভালো হয়, তা নয়। কেউ আস্তিক হলেই যে মানুষ হিসেবে খারাপ, তাও নয়। আমি প্রচুর নাস্তিককে দেখেছি যারা ভীষণরকম নারীবিদ্বেষী। অনেক আস্তিককে দেখেছি যারা কারও অনিষ্ট করে না, নিজের ধর্মকর্ম নিয়ে নিজে থাকে, কারও ওপর নিজের ধর্ম চাপানোর চেষ্টা করে না। তবে এখন যে আস্তিকদের দেখা পাচ্ছি, ওরা বেশির ভাগই অসভ্য আর অশিক্ষিত। ওদের পছন্দের ধর্মটি যারা মানছে না, তাদের ধর্ষণ করছে, তাদের কোপাচ্ছে, তাদের জবাই করছে। হাতের নাগালে না পেলে বিভিন্ন কুৎসিত পদ্ধতিতে তাদের হেনস্তা করছে। এই ধার্মিকদের আল্লাহর বিচারে বিশ্বাস নেই। তাই ওরা নিজেরাই বিচার করছে সবার। ওরা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কে দোষী, কে দোষী নয় এবং এও জানিয়ে দিচ্ছে দোষীদের কী শাস্তি হওয়া উচিত। দুনিয়ার সবাইকে আস্তিক বানাবার, পরহেজগার বানাবার জন্য এই ধার্মিকরা এত মরিয়া কেন, আমি বুঝি না। ওরা কেন সবাইকে নিয়ে বেহেশতে যেতে চায়। দোজখেও তো মানুষকে যেতে হবে। এই যে সাতটা দোজখ আল্লাহ বানিয়ে রেখেছেন, ওগুলো কি খালি ফেলে রাখার জন্য? ওখানে পুড়তে যদি আমার আপত্তি না থাকে, তবে ধার্মিকদের আপত্তি কেন? ওরা কেন আল্লাহ রসুলকে নিজের সম্পত্তি মনে করে! ধর্ম নিয়ে আমার যা ধারণা, তা আমি বলবো। দোজখে যাবো জেনেও বলবো। আমি তো সব আস্তিককে নিয়ে দলবেঁধে দোজখে যেতে চাইছি না। আমি জোরজবরদস্তি কোনও আস্তিককে নাস্তিক বানাতেও চাইছি না।

মানুষের অনিষ্ট করে না, অন্যের বিশ্বাসে নাক গলায় না-এরকম ধার্মিকের সংখ্যা সম্ভবত খুব কম বাংলাদেশে। এই সংখ্যাটা যতদিন না বাড়ে, ততদিন বাংলাদেশ নিয়ে আশা ভরসার কিছু নেই। নাস্তিক বা আস্তিক হওয়ার চেয়ে সবচেয়ে যেটা বেশি প্রয়োজন, তা হলো ভালো মানুষ হওয়া। ভালো মানুষেরা সবার ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। মানুষ গরু খেলো কী শুয়োর খেলো, মদ খেলো কী ফান্টা খেলো, তা নিয়ে মাথা ঘামায় না, এগুলোকে সম্পূর্ণই যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার বলে মানে। এই ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে ঝামেলা করা ধার্মিকদের বন্ধ করতে হবে। মানুষ ঈশ্বরে বিশ্বাস করুক, আপত্তি নেই। কিন্তু যুক্তিবুদ্ধিহীন ধর্মান্ধ যেন না হয়। ধর্মান্ধতা এবং মানবাধিকার-তেল আর জলের মতো, একেবারেই মেশে না। ও দুটোকে না মেশাতে চেয়ে বরং ধর্মান্ধরা যদি চেষ্টা চরিত্তির করে মানবাধিকার ব্যাপারটিকে মেনে নেয়, তবে সমস্যা অনেক কমে যাবে। যত ধার্মিকই হোক, যত ধর্মান্ধই হোক, মানুষ তো। মানুষ কী না পারে! চেষ্টা করলে মন্দ মানুষেরা ভালো মানুষ হতে পারবে না, এ আমি বিশ্বাস করি না।

 

লেখক : নির্বাসিত লেখিকা।

সর্বশেষ খবর