শুক্রবার, ৬ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

রোজা কবুলের নিদর্শন শাওয়ালের ছয় রোজা

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

রোজা কবুলের নিদর্শন শাওয়ালের ছয় রোজা

দুনিয়ার জীবনে মুসলমানের প্রতিটি কাজই এক একটি আমল। দুনিয়ার এসব আমল অনুযায়ী পরকালে প্রতিদান পাবে। সৎ আমলের বিনিময়ে মানুষ পরকালে শান্তিময় জীবন লাভ করবে। এজন্য সৎ আমলগুলো আল্লাহর কাছে গৃহীত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। যারা অনেক ত্যাগ সাধনার মাধ্যমে পবিত্র রমজান পালন করেছে তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য হবে তা কবুল হওয়া, কবুল হওয়ার প্রবল ধারণা করে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং কবুল না হওয়ার ধারণা হলে অনুতপ্ত হওয়া। যাদের রোজা ও সাধনা কবুল হয়েছে তাদের জন্য রয়েছে অফুরন্ত বিনিময়। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই জান্নাতে একটি বিশেষ ফটক রয়েছে যার নাম রাইয়ান। কিয়ামত দিবসে ওই ফটক হয়ে জান্নাতে রোজাদাররা প্রবেশ করবে। এ ছাড়া অন্য কেউ ওই ফটকে প্রবেশ করবে না।’ (বুখারি,মুসলিম) অন্য এক হাদিসে বর্ণিত আছে, ‘যে কেউ আল্লাহর জন্য একদিন রোজা রাখবে আল্লাহ জাহান্নামকে তার থেকে ৭০ বছরের পথ দূরে সরিয়ে দেবেন।’ (বুখারি, মুসলিম)  আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে রোজা পালন করবে তার সব পাপ ক্ষমা করা হবে।’ (বুখারি, মুসলিম) প্রসিদ্ধ একটি হাদিসে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ফরমান, ‘মহান আল্লাহ বলেন, মানুষ সব আমলের বিনিময় তার কর্ম অনুযায়ী পাবে। তবে রোজা, কেননা রোজা শুধু আমার জন্যই পালন করেছে, আমি এর বিনিময় প্রদান করব।’ (বুখারি, মুসলিম) রোজার ফজিলতের ওপর আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বর্ণনা রয়েছে। তবে সব ধরনের ফজিলত যথাযথভাবে অর্জনের জন্য এই রোজা আল্লাহর কাছে কবুল হওয়া একান্ত জরুরি বিষয়। যাদের আমল কবুল হবে না তারা পরকালে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হবে কঠিন বিপদের সম্মুখীন। এজন্য মুমিন মুসলমানকে তার প্রতিটি আমল আল্লাহর কাছে কবুল হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে পালন করতে হবে। কোনো আমল যেন বিফল না হয় সেদিকে সচেতন থাকতে হবে। অবলম্বন করতে হবে আমল কবুল হওয়ার উপায় উপকরণ। আমল কবুল হওয়ার জন্য একান্ত জরুরি শর্তগুলোর অন্যতম হলো যাবতীয় আমল ইখলাস ও নিষ্ঠার সঙ্গে শুধু আল্লাহর জন্য পালন করা। আমল কবুল হওয়ার প্রবল আশা পোষণ করা। কবুল হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা। আমলের প্রতি গর্ববোধ না করে শঙ্কিত থাকা ও নিজেকে ছোট মনে করা, ক্ষমাপ্রার্থনা করা এবং ভয়ভীতি-সহকারে আমল করা। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ খোদাভীরুদের পক্ষ থেকেই তো গ্রহণ করেন।’ (সুরা মায়িদাহ, আয়াত ২৭) আমল কবুল হওয়ার একটি অন্যতম শর্ত ও বিশেষ উপায় হলো আমলের ওপর অটল থাকা এবং এর ধারাবাহিকতা রক্ষা। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমল হলো যা নিয়মিতভাবে করে যাওয়া হয়, যদিও তা অল্প হয়।’ (বুখারি, মুসলিম) এ পরিসরে চিন্তা করার বিষয় হলো আমরা যারা রমজানের রোজা পালন ও ত্যাগ সাধনা করেছি, রমজানের পরও যদি এসব আমলের ধারা অব্যাহত থাকে তাহলে তা রমজানের আমলগুলো কবুল হওয়ার একটি নিদর্শন বহন করে। আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো রমজানের রোজা ফরজ। শাওয়ালে ছয়টি রোজা রাখা সুন্নত। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘যখন তুমি (ফরজ দায়িত্ব থেকে) অবসর হবে, (নফল ইবাদতের মাধ্যমে) তোমার প্রতিপালকের প্রতি মনোনিবেশ কর।’ (সুরা ইনশিরাহ, আয়াত ৮) মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যারা রমজানের রোজা পালন করবে এবং শাওয়ালে আরও ছয়টি রোজা রাখবে তারা যেন সারা বছরই রোজা পালন করল।’ (মুসলিম) বস্তুত এ হাদিসে কোরআনের মর্ম, প্রতিটি আমলে ১০ গুণ সওয়াব- তাই বিবৃত হয়েছে।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর