শনিবার, ৪ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

বিশ্বাসঘাতকতার প্রশ্রয় ইসলামে নেই

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

বিশ্বাসঘাতকতার প্রশ্রয় ইসলামে নেই

বর্তমানে প্রতিনিয়তই ধোঁকা- প্রতারণা ও বিশ্বাস- ঘাতকতার বিভিন্ন রূপ খবরের হেডলাইনে স্থান পাচ্ছে। বিশ্বাসঘাতকতা আজ সমাজের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষিয়ে তুলছে ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনের প্রতিটি অধ্যায়। স্ত্রী স্বামীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে। স্বামী প্রতারণা করছে স্ত্রীর সঙ্গে। আপন পর কেউ যেন আমাদের সমাজে বিশ্বাসঘাতকতার হিংস্র থাবা থেকে নিরাপদ নয়। অফিস-আদালত কিছুই মুক্ত নয় ফাঁকিবাজি ও জালিয়াতির ছোবল থেকে। ইসলাম কোনো ধরনের জালিয়াতি ও ফাঁকিবাজির প্রশ্রয় দেয় না। সমর্থন দেয় না মানুষের প্রতি প্রবঞ্চনা ও বিশ্বাসঘাতকতার। ইসলাম ধর্মে কোনো পশুপাখির প্রতিও বিশ্বাসঘাতকতা ও প্রতারণার সুযোগ নেই। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘সর্বাপেক্ষা বড় প্রতরাণা হলো তুমি তোমার ভাইয়ের সঙ্গে এমন কথা বলবে যা সে সত্য হিসেবে বিশ্বাস করে, অথচ তুমি তাকে মিথ্যা কথা বলছ।’ (আবু দাউদ) মানুষের মন্দ স্বভাবের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট হচ্ছে বিশ্বাসঘাতকতা। এজন্য এর শাস্তিও হবে কঠোর। তাদের অপমানের জন্য হাশরের ময়দানে তাদের প্রত্যেকের পেছনে বিশ্বাসঘাতকদের ঝান্ডা উড়িয়ে দেওয়া হবে। হাশরবাসী তা দেখে বুঝতে পারবে ওরা পৃথিবীতে আপনজন ও স্বজাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। (বুখারি) বিশ্বাসঘাতকের মধ্যে দুটি নিকৃষ্টতম মন্দ স্বভাব পাওয়া যায়। ইসলামের দৃষ্টিতে উভয়টিই জঘন্য অপরাধ। একটি হলো, বিশ্বাসঘাতকের বাহ্যিক আচার-আচরণ বাস্তবতার সঙ্গে মিল থাকে না। তারা মুখে বলে এক রকম, অন্তরে পোষণ করে অন্য। ইসলামী পরিভাষায় এ ধরনের আচরণকে মুনাফেকি বলা হয়। মহান প্রভু তাদের অবস্থা বর্ণনা করেছেন, ‘যখন মুনাফেকরা ইমানদারদের কাছে আসে, ওরা বলে আমরা ইমান গ্রহণ করেছি। আর যখন তাদের শয়তানদের সঙ্গে একান্তে মিলিত হয় তখন বলে, আমরা তো তোমাদের সঙ্গেই রয়েছি।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৪)

রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মুনাফেকদের আলামত চারটি- আমানত রাখলে খেয়ানত করে, কথায় মিথ্যা বলে, অঙ্গীকার ভঙ্গ করে ও ঝগড়া-বিবাদে অশ্লীলতার আশ্রয় নেয়।’ (বুখারি) উল্লিখিত চারটি বিষয়ে মানুষের ভিতরগত অবস্থা ও বাহ্যিক আচরণের সঙ্গে অমিল হয়। তাই এসব আচরণ মুনাফেকের নিদর্শন। আর এটাই হলো বিশ্বাসঘাতকতা। তাই বিশ্বাসঘাতকের আরেক পরিচয় সে মুনাফেক।

বিশ্বাসঘাতকের দ্বিতীয় নিকৃষ্ট স্বভাবটি হলো মিথ্যার আশ্রয়। যা মুনাফেকের অন্যতম লক্ষণ। তাই মুনাফেক ও বিশ্বাসঘাতক মানেই মিথ্যুক। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মিথ্যা হলো মন্দ কাজ। আর সব মন্দ কাজ মানুষকে জাহান্নামের পথে ধাবিত করে।’ (বুখারি)

মুনাফেকের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো মিথ্যা বলা ও ওয়াদা লঙ্ঘন করা। আর এগুলো হলো বিশ্বাসঘাতকের বড় হাতিয়ার। প্রকৃত মোমিন কখনো ওয়াদা লঙ্ঘন করতে পারে না। পারে না মিথ্যার আশ্রয় নিতে। তাই মোমিন কখনো বিশ্বসঘাতক হয় না। কখনো ফাঁকিবাজি ও জালিয়াতিতে লিপ্ত হয় না। আসলে সব মানুষের উচিত অঙ্গীকার রক্ষা করা। যাবতীয় ক্ষেত্রে মিথ্যা বলা ও বিশ্বাসঘাতকতা থেকে দূরে থাকা। পরীক্ষার হল, ব্যবসা, লেনদেন সব অঙ্গনে এবং স্বামী-স্ত্রী ও আপন-পর সবার সঙ্গে ধোঁকা-প্রতারণা পরিহার করা। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘তোমরা প্রতিশ্রুতি পালন করবে, নিশ্চয়ই প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৩৪)

 

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর