দেশে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। এর সঙ্গে করোনাকালে সৃষ্ট শিক্ষা জটিলতার পাশাপাশি জড়িত পারিবারিক অশান্তিও। জড়িত প্রেম কিংবা ব্ল্যাকমেইলিং। রাজধানীর হলিক্রস স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ২৪ আগস্ট ১০ তলা ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে। পরীক্ষায় খারাপ ফল করায় সেই শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের ডেকে পাঠায় স্কুল কর্তৃপক্ষ। ফল খারাপ করার বিষয়টি শিক্ষার্থীটি তার মা-বাবাকে বলতে না পারায় তার মধ্যে হতাশা দেখা দেয় এবং সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। রাজধানীর দক্ষিণখানে ২৭ আগস্ট ১০ তলা ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যার আগে চিরকুটে তার বাবাকে তার মৃত্যুর জন্য দায়ী করে যান। মেয়েটির বাবা পাঁচ বছর আগে না জানিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। চার-পাঁচ মাস আগে দ্বিতীয় বিয়ে জানাজানি হলে দুই পরিবারের মধ্যে সমস্যা দেখা দেয়। এরপর ওই শিক্ষার্থীর মা দুই মাস আগে তার বাবাকে ডিভোর্স দেন। এজন্য তার বাবা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার ফিসহ আনুষঙ্গিক খরচ দেওয়া বন্ধ করে দেন। ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে ২৪ আগস্ট মোবাইল ফোনে রাতভর ভিডিও গেম ‘ফ্রি ফায়ার’ খেলা নিয়ে বাবা রাগারাগি করলে ১৫ বছর বয়সী এক এসএসসি পরীক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। যশোরের ঝিকরগাছায় ২৩ আগস্ট প্রেমিকের ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়ে নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী (১৪) গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করে। লেখাপড়া নিয়ে মায়ের সঙ্গে বাগ্বিতন্ডার জেরে ২৫ আগস্ট বিষপানে আত্মহত্যা করেছে ১৩ বছর বয়সের সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রী। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের নাচনী ঘাগোয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। স্বভাবতই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ব্যাহত হয়েছে। অনেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মনোযোগ দেয়নি পড়াশোনার দিকে। করোনার পর অতিরিক্ত চাপের মুখে পড়ে অনেকে বেছে নিয়েছে আত্মহননের ভুল পথ। সামাজিক নৈরাজ্য ও অর্থনৈতিক সমস্যাও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মঘাতী প্রবণতা বাড়িয়েছে। যা রোধে ব্যাপকভাবে কাউন্সেলিংয়ের উদ্যোগ নিতে হবে জরুরিভাবে।