সোমবার, ২১ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

অশ্বডিম্ব কাহিনি ও সরকার পতনের আন্দোলন

মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.)

অশ্বডিম্ব কাহিনি ও সরকার পতনের আন্দোলন

বিএনপির এক বড় নেতা ঘোষণা দিয়েছেন আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে বেগম খালেদা জিয়ার হুকুমে দেশ চলবে, আর ফেরারি আসামি তারেক রহমান বীরদর্পে দেশে এসে প্রধানমন্ত্রী হবেন। সংগত কারণেই এতে বিএনপির নেতা-কর্মী ও একান্ত সমর্থকদের মধ্যে একটা চাঙা ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপির সঙ্গে অতি বাম, ডান পন্থার নামসর্বস্ব এবং এক নেতা একদল এরকম কিছু রাজনৈতিক ভবঘুরে ও আওয়ামী লীগ থেকে তালাকপ্রাপ্ত কিছু সুপরিচিত ব্যক্তিবর্গ উল্লসিত হয়ে মিডিয়ায় অতি মাত্রায় বাগাড়ম্বর করছেন এই বলে যে, এবার আর শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের রক্ষা নেই। তবে বাংলাদেশের মানুষ এতদসংক্রান্ত অশ্বডিম্ব কাহিনি ও হুংকারের সঙ্গে অত্যন্ত সুপরিচিত, এটা নতুন কিছু নয়। বাঙালি এক সময়ে হুজুগে বাঙালি হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু সেই যুগ আর নেই। বাংলাদেশের শতকরা ৭২ ভাগ মানুষ এখন লিখতে, পড়তে এবং ভালো-মন্দের বিচার করতে পারে; বিগত দিনের ইতিহাসও তাদের অজানা নয়। সুতরাং শুধু মিথ্যা প্রোপাগান্ডার জোরে জনবিপ্লব ঘটিয়ে ফেলা এখন আর বাস্তবসম্মত কথা নয়। শুধু নিজস্ব দলীয় নেতা-কর্মী ও একান্ত সমর্থকদের দ্বারা জনবিপ্লব ও সরকার পতন হয় না, কোনো দিন কোথাও হয়নি। আর বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতির বর্তমান মেরুকরণ এখন এমনই যে, কোনো এক বড় শক্তি ইচ্ছা করলেই সরকার পতনের জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ কোনো পক্ষকে আগের মতো আর সমর্থন ও সহযোগিতা প্রদান করতে পারে না, সেদিন আর নেই। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদ আছে ২০২৩ সালের শেষ পর্যন্ত। তার আগে বিএনপি ও তার মিত্ররা সরকার পতন ঘটাতে পারবে কি না সেটা নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষের বিতর্ক চলতে পারে। সেই বিতর্কে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং ঐতিহাসিক লিগেসির সূত্র কী বলে সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পশ্চিমা বিশ্বের এক নামকরা মনীষী বলেছেন, একজন মানুষ ভবিষ্যৎ কতদূর দেখতে পারবেন তা নির্ভরশীল, তিনি কতদূর পেছনে দেখতে পারছেন তার ওপর। অতীতকে বাদ দিয়ে বর্তমানকে বিচার করা যায় না এবং অতীত-বর্তমানকে উপেক্ষা করে ভবিষ্যতের পথ রচনা করলে তা সময়োপযোগী হয় না। প্রথমেই রাজনৈতিক বাস্তবতার কথা বলব, তারপর আন্দোলন-সংগ্রামের ঐতিহাসিক লিগেসির কথায় আসছি। মানুষই বাস্তবতা রচনা করে। সরাসরি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন সাধারণ ও খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে গত ১৪-১৫ বছরে একটা বড় পরিবর্তন ঘটে গেছে, সেটি কে কতখানি লক্ষ্য করছেন জানি না। ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দলগতভাবে প্রাপ্ত ভোটের বিন্যাস ও মেরুকরণের বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সরাসরি দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও একান্তভাবে দলীয় সমর্থক নয়- এমন মানুষের সংখ্যা হবে শতকরা প্রায় ৩০-৩৫ ভাগ। বাংলাদেশে যত রাজনৈতিক আন্দোলন ও নির্বাচন হয়েছে তাতে এই শতকরা ৩০-৩৫ ভাগের সংখ্যাগরিষ্ঠরা যেদিকে ঝুঁকেছে সেদিকের পাল্লাই ভারী হয়েছে। নির্বাচন অনুষ্ঠিত এবং তার ফল প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত বোঝা কঠিন যে, এই সংখ্যাগরিষ্ঠরা কোন দিকে যাবে। তবে এটা এখন স্পষ্ট যে, জনগণের এই অংশ নিজেদের কাজকর্ম দোকানপাট ফেলে রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে অংশ নেয় না। কিন্তু দেখা যায় বড় রাজনৈতিক দলগুলো একটা বড় জনসমাবেশের জন্য কোটি কোটি টাকার বাজেট করে এবং সাধারণ মানুষকে দৈনিকভিত্তিক মাথাপিছু মজুরি দিয়ে জনসভায় নিয়ে আসে। তাই সরকার পতনের মতো অবৈধ, অসাংবিধানিক ও বেআইনি কাজে অংশগ্রহণের ঝুঁকি, এই টাকার বিনিময়ে আসা মানুষ কখনো নেবে না, এটাই স্বাভাবিক ও বাস্তবতা। ২০১৪-২০১৫ সালে বিএনপি কর্তৃক লাগাতার অবরোধ, হরতাল এবং জ্বালাও-পোড়াওয়ের মাধ্যমে সরকার পতনের আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার উদাহরণসহ আমার উপরোক্ত কথার যথার্থতা প্রমাণ করে। তারপর এরকম রাষ্ট্র ও জনবিরোধী এবং বেআইনি ফৌজদারি অপরাধমূলক কর্মকান্ডে লিপ্ত হলে তারা সংখ্যায় যত বেশিই হোক না কেন, তাদের দমন করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ ও প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ আইনি শক্তি প্রয়োগ করবে- সেটাই স্বাভাবিক। ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রচন্ড গতির প্রভাবে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী জনমানুষের মনের গতি-প্রকৃতি এবং দৃষ্টিভঙ্গিও একই গতিতে পরিবর্তন হয়েছে এবং হচ্ছে। সুতরাং গত শতকের আশি ও নব্বই দশকে যে কৌশল এবং পন্থায় রাজনৈতিক আন্দোলনকে সফল করা গেছে, তা এই ২০২২ সালে এসে একদম অচল। এর উদাহরণ আমাদের চোখের সামনেই আছে। ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করল। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় মেয়াদের সরকারকে উৎখাত ও পতনের জন্য ২০১৫ সালে একনাগাড়ে তিন মাসেরও বেশি সময় বিএনপি আন্দোলন করেও সরকারের পতন ঘটাতে পারেনি। ঘটনাসমূহের পরম্পরা বিশ্লেষণে এমন ধারণা হওয়া স্বাভাবিক যে, বিএনপি হয়তো ভেবেছিল ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের আন্দোলনের ফলে তখন ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত বিএনপি সরকারের যেভাবে পতন ঘটেছিল ঠিক সেভাবেই ২০১৫ সালে বিএনপিও আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটাতে পারবে। কিন্তু ১৯৯৬ থেকে ২০১৫, প্রায় ২০ বছরের পরিবর্তনকে বিএনপি আমলে নেয়নি বলেই সে দিন তারা ব্যর্থ হয়েছিল। এবার বিএনপির জনসভায় লোকের ব্যাপক উপস্থিতির যে খবর মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে সে প্রসঙ্গে আসি। ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে গড়পরতায় বিএনপি প্রায় শতকরা ৩৩ ভাগ ভোট পেয়েছে। তাতে ধরা যায় এর মধ্যে শতকরা ২৫-২৬ ভাগ বিএনপির দলীয় লোক ও একান্ত সমর্থক। তাহলে ১৮ কোটি জনসংখ্যার আনুপাতিক হিসাবে বিএনপির সর্বমোট একান্ত সমর্থক যত মানুষ আছে তার হিসাবে ঢাকাসহ যে কোনো বিভাগীয় জনসভায় ৫-৭ লাখ মানুষের উপস্থিতি কোনো ব্যাপার নয়। তারপর জনপ্রতি টাকা দিয়ে কীভাবে জনসভায় লোক আনা হয়, তা এখন সবাই জানেন- যে কথা একটু আগে আমিও উল্লেখ করেছি। সুতরাং জনসভায় মাঠভর্তি মানুষের উপস্থিতি দেখে যৌক্তিকভাবে এটা বলার সুযোগ নেই যে, সাধারণ মানুষ বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে সরকারের পতন চাইছে। বিএনপি ও তার একান্ত সমর্থকরা সরকার পতনের স্বপ্ন দেখতেই পারেন, এটা কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। বিএনপির স্বপ্ন ও একান্ত অনুসারীদের চিত্তাকর্ষক উত্তেজনা দেখে এ মুহূর্তে হঠাৎ করে রবীন্দ্রনাথের স্বপ্নমঙ্গল কবিতার অতি পরিচিত দুটি লাইন মনে এসেছে, ‘স্বপ্নমঙ্গলের কথা অমৃতসমান/গৌড়ানন্দ কবি ভনে, শুনে পুণ্যবান’। কেউ স্বপ্নে অমৃতপান এবং তা শুনে কেউ পুণ্যি লাভ করতে চাইলে করতে পারেন; কিন্তু তাতে দিন-দুনিয়ার কিছু যাবে আসবে না।

পৃথিবীতে কোনো কিছুই একতরফা নয়, সবকিছু তুলনামূলক। তবে গত ১৪ বছরে বাংলাদেশের জন্য প্যারাডাইস শিফটের মতো কিছু অর্জন ঘটেছে। স্বল্প উন্নত দেশের গ্লানি থেকে মধ্য আয়ের উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠেছে বাংলাদেশ। যার অফিশিয়াল স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘসহ সব আন্তর্জাতিক সংস্থা। এরকম অর্জনকে সব দেশে প্যারাডাইস শিফট বলা হয়।

দ্বিতীয়ত, আরেকটি প্যারাডাইস শিফটের মতো অর্জন হচ্ছে, সেই ১৯৪৭ সাল থেকে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে জিইয়ে থাকা সমুদ্র সীমানার দ্বন্দ্ব শান্তিপূর্ণ পন্থায় মীমাংসা হওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকার একচ্ছত্র মালিকানা পেয়েছে। অফুরন্ত সমুদ্রসম্পদের যথার্থ ব্যবহার করতে পারলে বাংলাদেশকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। তৃতীয়ত, এটাও একটি রেকর্ড যে, অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাতের উন্নয়ন পরিমাপের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃত যতগুলো সূচক রয়েছে, তার প্রায় সবকটিতে বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। সহজাতভাবে মুদ্রার অপর পিঠের মতো এমন কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে আওয়ামী লীগ সরকার মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। আমার বিবেচনায় আওয়ামী লীগের বড় ব্যর্থতা এই যে, একনাগাড়ে আজ ১৪ বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাতে অসাধারণ অর্জনের পরেও বৃহত্তর মানুষের মধ্যে মূল্যবোধগত মনোজগতের কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি, আর সে কারণেই রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে-বিপক্ষে জনমেরুকরণে কোনো পরিবর্তন গত ১৪ বছরে হয়নি। এটাই বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় সংকট। দ্বিতীয়ত, সামষ্টিকভাবে ম্যাক্রো এবং একই সঙ্গে মাইক্রো লেভেলে দুর্নীতি দমন ও নিয়ন্ত্রণে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। আওয়ামী লীগের যদি বিপদ ঘটে তাহলে এ দুটি কারণের জন্যই ঘটবে, অন্য কোনো উল্লেখযোগ্য কারণ নেই। তবে সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে ‘অ্যাট দ্য অ্যান্ড’ বিএনপি যেহেতু দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিল, তাই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সরকারের অর্জন-বিসর্জনের একটা চার্ট তৈরি করলে যে চিত্রটি ফুটে উঠবে তার বিবেচনায় বিএনপির সরকার পতনের আন্দোলনের সঙ্গে সাধারণ মানুষ যোগ দেবে তার পেছনে যৌক্তিক কোনো কারণ কেউ খুঁজে পাবে না। এমন পাঁচটি জায়গা, ক্ষেত্র বা ইস্যু সুনির্দিষ্টভাবে তুলনামূলক চিত্রের মাধ্যমে কেউ কি তুলে ধরতে পারবেন, যেখানে আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপির অপেক্ষাকৃত ভালো পারফরম্যান্সের রেকর্ড আছে। যুক্তিবাদ ও নব্য প্লেটোবাদের জনক প্লোটিনাস (২০৫-২৭০ খ্রি.) তার ৫৪ খন্ডের বিখ্যাত দর্শনগ্রন্থ ইনিয়াডসের ভিতরে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, কেউ কিছু বিশ্বাসযোগ্যভাবে তুলে ধরতে চাইলে তার পেছনে শুধু কারণ নয়, সে কারণ অথেনটিকেটেড (সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত) তথ্য দ্বারা সমর্থিত হতে হবে। যথার্থ সার্ভে বা গবেষণা ব্যতিরেকে জনগণ এটা চাইছে, ওটা চাইছে, এরকম মনগড়া বক্তব্য দেওয়া অনেক সহজ কাজ, যার কোনো মূল্য নেই। এবার সরকার পতনের ঐতিহাসিক লিগেসির কথা বলে লেখাটি শেষ করছি। ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের ২৩ বছর ও বাংলাদেশের ৫১ বছরের ইতিহাসে রাজনৈতিক আন্দোলনের মুখে সরকার পতনের ঘটনা ঘটেছে মাত্র তিনবার। প্রথমত, আইয়ুব খান সরকারের পতন ঘটে ১৯৬৯ সালে। সে সময় তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এবং পশ্চিম পাকিস্তানে পিপলস পার্টির নেতৃত্বে সর্ব পাকিস্তানের প্রায় শতকরা ৭০-৭৫ ভাগ মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে আইয়ুব খান পতন আন্দোলনে নেমেছিল। আইয়ুব খান সামরিক স্বৈরশাসক ছিলেন, রাজনৈতিক জনভিত্তি ছিল খুবই দুর্বল। সর্বোপরি বঙ্গবন্ধুর মতো ক্যারিশম্যাটিক সর্বজনগ্রাহ্য অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন আন্দোলনের মুখ্য ভূমিকায়। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে এরশাদ সরকারের পতন ঘটে ১৯৯০ সালে। আইয়ুব খান ও এরশাদের পতনের কারণ প্রায় একই রকম। এরশাদও ছিলেন সামরিক স্বৈরশাসক, অবৈধ ক্ষমতা দখলদারি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একত্রে এরশাদের পতনের জন্য আন্দোলন করেছে, এটাই ছিল সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর। তৃতীয়বার রাজনৈতিক আন্দোলনের মুখে সরকার পতনের ঘটনা ঘটে ১৯৯৬ সালের মার্চ মাসে। তখন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আন্দোলনের মুখে বিএনপির নতুন সরকার মাত্র এক মাসের মাথায় পদত্যাগে বাধ্য হয়। ২০১৪-২০১৫ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটাতে বিএনপির একই রকম আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্যবশিত হয়। তাতে প্রমাণ হয়, ১৯৯৬ সালের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। একই সঙ্গে সেখান থেকে এখন জনমানুষের দৃষ্টিভঙ্গিরও প্যারাডাইস শিফট ঘটেছে। ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটাবার জন্য অনেক ষড়যন্ত্র ও আন্দোলন হয়েছে এবং এ পর্যন্ত তার সবই ব্যর্থ হয়েছে। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পিলখানার হত্যাযজ্ঞের ঘটনা, ২০১২-২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত একত্রে সরকার পতনের চেষ্টা এবং ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জামায়াত-বিএনপি এবং তাদের সব মিত্র একত্রিত হয়ে প্রকাশ্যে সরকার পতনের জন্য মরিয়া হয়ে মাঠে নামে। ২০১৪-২০১৫ সালে বিএনপি কর্তৃক সরকার পতনের জন্য আন্দোলনের কথা লেখার ভিতরে উল্লেখ করেছি। উল্লিখিত সব আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেলে ছিলেন এবং এখন সরকারের কৃপায় নিজ বাসায় অবস্থান করছেন। সুতরাং ১৪ বছরে সরকার পতনের জন্য বিএনপি আন্দোলন কম করেনি। কিন্তু তার সবকটির ফল অশ্বডিম্ব ছাড়া আর কিছু মেলেনি। সুতরাং সরকার পতন আন্দোলনের ঐতিহাসিক লিগেসি, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক মেরুকরণে জনগণের মধ্যে স্পষ্ট বিভাজন, বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতির বর্তমান মেরুকরণ এবং ইতিপূর্বে বিএনপির সরকার পতন আন্দোলনের ব্যর্থতা ইত্যাদি সবকিছুর বিবেচনায় বিএনপির চলমান সরকার পতনের আন্দোলন কি আগের মতো অশ্বডিম্ব দেবে, নাকি অন্য কিছু হবে- তা কেবল সময়ই বলে দেবে।

লেখক : রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

[email protected]

সর্বশেষ খবর