বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

দন্ত রোগের ভেষজ চিকিৎসা

পীত ঝিমটি দাঁতের রোগের একটি ভালো ভেষজ। এটি ফুল গাছ হিসেবে বাগানে লাগানো হয়। তবে অনেকে শ্বেত ঝিমটিও সমান উপকারী বলে বর্ণনা করেছেন। বৈজ্ঞানিক নাম Barleria Cristata linn. গোত্র একানথেসি। এটির অন্য নাম কাঁটাশ্যাওলা। অনেকে একে ঝিমলি বলেও ডাকেন। এর বহু নাম যথা- ঝিন্টি, বন্যসহচরী, কণ্টকিনী, নীল কুসুমা ইত্যাদি। ছোট্ট গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। উচ্চতা ১ মিটারের মধ্যে। ফলে চারটি বীজ থাকে। পাতা চিবোলে যে রস বেরোবে, তা ব্যথাযুক্ত দাঁতের গায়ে লাগিয়ে রাখতে হবে। দিনে দু-তিন বার তিন-চার দিন এমন করলেই নড়া দাঁত পুনরায় বসে যাবে।

যাদের দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে এমনকি আঙুলে দাঁত মাজতে গেলেও রক্ত পড়ে তাদের ক্ষেত্রে রক্তচন্দন একটি মহৌষধ। বাজার থেকে কেনা খাঁটি রক্তচন্দন কাঠ এনে ছোট্ট করে কেটে ২০০ মিলি পানিতে ২০ গ্রাম রক্তচন্দন নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ সেদ্ধ করতে হবে। ছেঁকে ওই পানি নিয়ে দিনে তিন-চার বার কুলকুচি করে অন্তত ১০ মিনিট ওই পানি মুখে রাখতে হবে। গরম পানি দিয়ে করলে আরও ভালো ফল পাওয়া যায়। কালো দাঁত নড়ায় আমপাতা একটি মহৌষধ। আম আমাদের বহু পরিচিত উল্লেখযোগ্য ফল। যাদের অসময়ে দাঁত নড়ে, তারা কয়েকটি কচি আমপাতা নিয়ে সেগুলো চিবিয়ে ওই পাতা দিয়ে দাঁত মাজুন। সকালে ও রাতে এ অভ্যাস করলে অল্প দিনেই দাঁত পড়ার আশঙ্কাও রোধ হবে এবং দাঁত নড়াও বন্ধ হবে। অন্তত এক সপ্তাহ এ প্রক্রিয়াটি চালাবেন। দাঁতের মাড়িতে পুঁজ জমা ইত্যাদি ক্ষেত্রে মালতী ফুল গাছটি বিশেষ উপকারী ভেষজ। মালতী গাছের ডাল উল্লিখিত সমস্যাগুলো ছাড়াও যাদের দাঁতে পাইওরিয়াজনিত দুর্গন্ধ হয়, তারা ব্যবহার করলে উপকার পাবেন। যারা দাঁতের মাড়ি ফোলায় ভুগছেন তারা চানা বুট নিয়ে সেদ্ধ করে ওপরের জুসটি নিন এবং তা দিয়ে তিনবার কুলকুচি করুন। খুব দ্রুত মাড়ি ফোলা কমে যাবে। মাড়িতে ক্ষত বা ঘা হলে নিম অত্যন্ত উপকারী। নিম অতি পরিচিত উদ্ভিদ। কয়েকটি নিমপাতা নিয়ে সেদ্ধ করে কুলকুচি করলে যন্ত্রণা কমে। তবে স্থায়ী উপকার পেতে ক্ষতে নিম তেল লাগালে দ্রুত আরোগ্য হয়।

দাঁতের মাড়িতে ঘা হলে বা ফুলে উঠলে বা মাড়ি দুর্বল হলে যন্ত্রণা অনুভূত হয়। ওইসব ক্ষেত্রে ভৃঙ্গরাজ পাতা বেটে মিহি করে নিতে হবে। এরপর রোদে শুকিয়ে এক-দুই সপ্তাহ দাঁত মাজলেই এ সমস্যাগুলো চলে যাবে। যাদের দাঁতের গোড়ায় ছিদ্র হয় বা দাঁত থেকে গুঁড়া গুঁড়া দানাদার অংশ খসতে থাকে, তাদের ক্ষেত্রে ছিদ্রের ওপর ছাতিম গাছের তরুক্ষীর বা আঠা লাগিয়ে দিতে হবে। ছাতিম দেশের সর্বত্র পাওয়া যায়। দাঁতের রোগে যখন মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে থাকে সেসব ক্ষেত্রে খেসারি ডাল খুব উপকারী। ওই ডাল (১০ গ্রাম) আগের দিন রাতে গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরদিন ওই পানি দিয়ে কুলকুচি করবেন। অবশ্য পানিটি সামান্য গরম করে নিলে আরও ভালো হয়। মিনিট দশেক করে পাঁচ-সাত দিন কুলকুচি করলেই মাড়ির হাজা সম্পূর্ণ সুস্থ হবে। যাদের দাঁতে কোনো কিছু চিবোতে গেলে দাঁত শিরশির করে, অকালে মাড়ি আলগা হয়ে দাঁত নড়ে বা ঝুলে যায় তাদের ক্ষেত্রে তিল একটি অতি উল্লেখযোগ্য ভেষজ।

                আফতাব চৌধুরী

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর