রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

নদনদী কমছে

রুখতে হবে এই আত্মঘাতী প্রবণতা

বাংলাদেশকে বলা হয় নদনদীর দেশ। আয়তনের বিচারে বাংলাদেশে নদনদীর সংখ্যা এখনও বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক। কিন্তু দেশের এ বৈশিষ্ট্য ক্রমেই পাল্টে যাচ্ছে। গত পাঁচ দশকে নদনদীর সংখ্যা কমেছে আশঙ্কাজনকহারে। অনেক নদীর অস্তিত্ব লোপ পেয়েছে। যেসব নদী ছিল খরস্রোতা এবং এক তীর থেকে অন্য তীরের দেখা মিলত না, সেগুলোর বড় অংশ অস্তিত্ব ধরে রেখেছে খালের মতো শীর্ণকায় অবস্থায়। নদী গবেষকদের হিসাবে দেশে স্বাধীনতা-পরবর্তী সহস্রাধিক নদী থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবে বর্তমানে সে সংখ্যা ৪০৫। এ ছাড়া ৫৭টি আছে আন্তদেশি নদীসংযোগ। হিসাবের খাতা থেকে গত পাঁচ দশকে হারিয়ে গেছে অনেক নদী। আবার হিসাবে থাকা নদনদীর মধ্যে অনেক নদী দখল ও ভরাট হয়ে বিলুপ্তির পথে। রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের জরিপ অনুযায়ী স্বাধীনতা-পরবর্তী দেশে ১ হাজার ২৭৪টি নদনদী ছিল। গত বছর তারা নদনদীগুলোর নামসহ তালিকাও প্রকাশ করেছে। নদীরক্ষা কমিশন ৭২০টি নদনদীর হিসাব পেয়েছে অর্থাৎ ৫৫০টি নদনদী হারিয়ে গেছে। বাকিগুলোর অবস্থাও খুব খারাপ। পানি উন্নয়ন বোর্ড ৮ হাজার নদী, উপনদী ও খাল পেয়েছে যেগুলো পানির অভাবে মরতে বসেছে। অনেক স্থানে বড় নদীর সঙ্গে সংযুক্ত নদীর মুখে চর পড়েছে। এগুলো দ্রুত ড্রেজিং করে প্রবাহ না বাড়ালে মরে যাবে। দখল রোধে নিয়মিত ড্রেজিংয়ের পাশাপাশি উজান থেকে পানি আনতে হবে। তা হলেই নদনদীগুলো বাঁচানো যাবে। বাংলাদেশের কৃষি তথা গ্রামীণ অর্থনীতি নদনদী, খালবিলের ওপর নির্ভরশীল। এ কারণেই নদনদী-জলাশয়ের সুরক্ষা জরুরি। নদনদীর নাব্য ঠিক রাখতে জনগণের ট্যাক্সের টাকা ব্যয় করে কর্তাব্যক্তিরা ড্রেজিং করেন। ব্যক্তিস্বার্থ জড়িত থাকায় প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে অতি আন্তরিকতারও প্রতিফলন ঘটে। কিন্তু ড্রেজিংয়ে তোলা মাটি ও বালু নদীর তীরে স্তূপ করে রাখায় টাকারই শুধু শ্রাদ্ধ হয়। ওই বালুমাটি কিছুদিনের মধ্যেই নদীতে এসে জড়ো হয়। নদনদী রক্ষায় ড্রেজিংয়ের নামে যাতে প্রহসন না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। সরে আসতে হবে আত্মঘাতী প্রবণতা থেকে।

নদীরক্ষায় গড়ে তুলতে হবে জনসচেতনতা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর