খাদ্যে ভেজাল মেশানো একটি গুরুতর অপরাধ। সবার চোখে অনৈতিক ও অমানবিক কাজ। কতিপয় অসাধু অর্থলোভী লোক অধিক মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে ক্রেতাকে প্রতারিত করার মনোভাব নিয়ে খাদ্যকে আকর্ষণীয় করার জন্য বিভিন্ন ধরনের রং মেশানো ও দুধ, মধু, চাল, মুড়ি ইত্যাদিতে ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেশানো, ফলমূল, শাকসবজি এবং মাছ-মাংসে ফরমালিনের ব্যবহার, পশু মোটাতাজাকরণে নিষিদ্ধ স্টেরয়েড হরমোন ট্যাবলেট বা ইনজেকশন প্রয়োগ করা এবং ফল পাকানোর কাজে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহারের মতো মারাত্মক ক্ষতিকারক ও ভেজালযুক্ত অপকর্ম হরহামেশাই চালিয়ে যাচ্ছে। যা একটি দেশ ও জাতির জন্য চরম আশঙ্কাজনক। আমাদের জন্য ভেজালমুক্ত খাদ্য আর আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া যেন সমার্থক বিষয়। এসব ভেজালের সঙ্গে আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে মারাত্মক ক্ষতিকারক ও বিষাক্ত উপাদান। ইসলাম ধর্মে এ ধরনের কাজ চরমভাবে নিন্দিত। এ ভেজাল মিশ্রণের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ জড়িয়ে আছে। যেমন প্রতারণা, অন্যায়ভাবে অর্থ উপার্জন, আত্মসাৎ, সত্য-মিথ্যার সংমিশ্রণ, অমানবিকতা এবং সাধারণ মানুষ ও নিজের জীবন হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এসব কাজ ইসলামী শরিয়তের আলোকে মহাপাপ ও নিষিদ্ধ। এ পরিসরে কয়েকটি বিষয় আংশিক বিশ্লেষণের প্রয়াস পাব। খাদ্যে ভেজাল মেশানো ক্রেতার সঙ্গে প্রতারণার নামান্তর। প্রতারণা করা ইসলামে নিষিদ্ধ। সাহাবি আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত, ‘একবার রসুলুল্লাহ (সা.) বাজারে একটি খাদ্যস্তূপের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি খাদ্যস্তূপের ভিতরে হাত প্রবেশ করালেন। তাঁর হাতের আঙুলে আর্দ্রতা অনুভব হয়। তিনি খাদ্য বিক্রেতাকে বললেন এমন কেন? সে বলল, বৃৃষ্টিতে ভিজে গেছে হে আল্লাহর রসুল! রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তাহলে তুমি খাদ্যস্তূপের ওপরে রাখনি কেন? যাতে মানুষ দেখতে পেত। অতঃপর রসুল (সা.) বললেন, যে ব্যক্তি প্রতারণা করবে সে আমার উম্মত নয়।’ (সহিহ মুসলিম-২৫০৯)। প্রতারণা ও ধোঁকাবাজিতে আমাদের সমাজ ছেয়ে গেছে। আমাদের এ থেকে মুক্তির পথ খুঁজে বের করতে হবে। না হলে মানুষের ভোগান্তির অন্ত হবে না। ভেজাল মেশানোর অন্তরালে রয়েছে অবৈধভাবে এবং নিষিদ্ধ ও হারাম উপায়ে সম্পদ অর্জনের পথ। কোরআনে কারিমে মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করিও না।’ (সুরা আল বাকারা-২৮৮) যারা খাদ্যে ভেজাল মেশায় তাদের আল্লাহতায়ালার নির্দেশনার প্রতি সাবধান হওয়া উচিত। চিন্তা করা উচিত যে, নিজের বৈধ পণ্যের ব্যবসায় ভেজাল মেশানোর ফলে ব্যবসাটি হারামে রূপ নিচ্ছে, তা বিবেকবানের কাজ হতে পারে না। এ ছাড়া আরও ভাবনার বিষয় হলো, শরিয়তের অনুমোদনহীন পদ্ধতিতে উপার্জিত মাল যারা ভক্ষণ করে তাদের ইবাদত কবুল হয় না। এভাবে সত্যের সঙ্গে মিথ্যার সংমিশ্রণ একটি মহাপাপ। মহাপাপ মানুষ ও মানবতার ক্ষতি করা। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কিয়ামতের দিন ব্যবসায়ীদের পাপীরূপে উঠানো হবে, তবে যেসব ব্যবসায়ী আল্লাহকে ভয় করে, কল্যাণের কাজ করে ও সততা ধারণ করে তারা ব্যতীত।’ (তিরমিজি শরিফ-১২১০) মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘তোমরা সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে মিশ্রিত কর না এবং জানা সত্ত্বে তোমরা গোপন কর না।’ (সুরা আল বাকারা-৪২)।
লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা