মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

হত্যার সময় বড়দার দেহে চামড়া ছিল না

আফরোজা পারভীন

হত্যার সময় বড়দার দেহে চামড়া ছিল না

হেসে-খেলে আনন্দ-আহ্লাদেই বড় হচ্ছিলাম। অভাব-অনটন কোনো দিন স্পর্শ করেনি। আব্বা নামকরা উকিল, রাজনীতিবিদ, সমাজকর্মী। নড়াইল মহকুমা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ভাষাসৈনিক, তেভাগার আইন পরামর্শক। মা আপওয়ার নড়াইল শাখার সভানেত্রী। এলাকার সবাই এক নামে চেনে। আব্বা যা রোজগার করতেন কোর্ট থেকে বেরিয়েই তার সিংহভাগ দিয়ে আসতেন পার্টির কাজে। গরিব মানুষের কাছ থেকে মামলার পয়সা নিতেন না। বরং তাদের বাড়ি যাওয়ার ভাড়া দিয়ে দিতেন। আমাদের বেশ কয়েকটি জায়গা ছিল। আব্বা সব কটাই দান করেছিলেন দাতব্য কাজে।

শহরের কেন্দ্রস্থলে দোতলা বাড়ি ‘সাঈফ ভিলা’। এ বাড়ির প্রধান রাজমিস্ত্রি ছিলেন শিল্পী এস এম সুলতান (লাল মিয়া) কাকুর বাবা মিসির আলী। কাকুও নির্মাণকাজে হাত লাগিয়েছিলেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে খোয়া আর কয়লা দিয়ে ছবি এঁকে ভরে ফেলেছিলেন বাড়ির চারপাশের দেয়াল। এ গল্প মার কাছে শোনা। এ বাড়িতে এসেছেন মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, কমরেড অমল সেন, অবিভক্ত বাংলার স্পিকার ও মন্ত্রী সৈয়দ নওশের আলীসহ অনেক বড় বড় নেতা। তাদের সঙ্গে এসেছেন কর্মী-সমর্থক। সারা বাড়ি গম গম করত মানুষে। কোনো ভেদাভেদ ছিল না। ছিল না ধর্মের বাছবিচার। সব ধর্মবর্ণের মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে ভাগ করে খেয়ে বড় হচ্ছিলাম আমরা ছয় ভাইবোন। নিজের বলতে কিছু থাকতে হয় তা আমরা শিখিনি। আমাদের শেখায়নি কেউ।

বড়দা সাঈফ মিজানুর রহমানের ডাকনাম দুলু। দাদার জন্মের আগে মা গিয়েছিলেন কলকাতায় মামা সৈয়দ নওশের আলীর বাড়িতে বেড়াতে। সেখানে দেখেছিলেন মহররমের দুলদুল ঘোড়া। তার তেজ মুগ্ধ করেছিল মাকে। ভেবেছিলেন গর্ভের সন্তান হবে এমনই তেজোদীপ্ত, বলবান, ক্ষুরধার, শক্তিমত্ত। নাম রেখেছিলেন দুলদুল। মানুষের মুখে মুখে সেই নাম হয়ে গেল দুলু। ভালো নাম মিজান। মিজান অর্থ তুলাদ-, সত্য আর ন্যায়ের প্রতীক। আমৃত্যু এ নামের সম্মান রেখে গেছেন বড়দা।

বাড়িতে রাজনীতির আলাপ হতো। দেশভাবনা ছিল প্রতিটি সদস্যের অন্তরে। বড়দা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ করে চাকরিতে ঢুকেছেন। সেন্ট্রাল সিভিল সার্ভিসে লিখিত মৌখিক মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল করলেও তাকে পুলিশ ভেরিফিকেশনে আটকে দেওয়া হয়েছে দেশদ্রোহিতার অপরাধে। অভিযোগ গুরুতর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনকালে মোনেম খানের গাড়িতে ইট ছুড়েছিলেন তিনি। সেই ছবি ক্যামেরাবন্দি হয়েছিল। জাতীয় দৈনিকে ছাপা হয়েছিল পরদিন। শুধু তাই নয়, ১৯৫৬ সালে সামরিক একনায়ক নতুন সংবিধান জারি করলে সে সংবিধানের আওতায় নির্বাচিত হন সাচ্চা পাকিস্তানি মোনেম খান। গণপরিষদের অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য তিনি রাওয়ালপিন্ডি যাত্রার প্রাক্কালে তেজগাঁও বিমানবন্দরে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের মুখে পড়েন। তার কাছাকাছি পৌঁছে তীব্র নিন্দা ও প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেন আবদুর রাজ্জাক, রাশেদ খান মেনন ও সাঈফ মিজান। অতর্কিত এ পরিস্থিতিতে উত্তেজিত খান সাহেবের মাথার টুপি ভূলুণ্ঠিত হয়। পরদিন সেই ছবি সব জাতীয় দৈনিকে ছাপা হয়। কথিত আছে মোনেম খান সেই পত্রিকার কাটিং আনুগত্যের নিদর্শনস্বরূপ তার প্রভু আইয়ুব খানকে দেখিয়েছিলেন। এতকিছু অকাট্য প্রমাণের পর মিজানের কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি হলো না। তবে চাকরি দেওয়া হয় প্রাদেশিক সরকারে। প্রথম পোস্টিং খুলনা। বড়দা সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করলেন। মামলার প্রতিপাদ্য- ‘আমি যদি দেশদ্রোহীই হই তাহলে যে অপরাধে আমাকে কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হলো সেই একই অপরাধ বলবৎ থাকা অবস্থায় কী করে প্রাদেশিক সরকারের চাকরি দেওয়া হলো! তাহলে কি পাকিস্তান অখন্ড দেশ না।’ পাকিস্তানের অখন্ডতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বড়দা। তিনি যখন শহীদ হন তখনো এ মামলা বলবৎ ছিল। বিশ্বাস করি, বেঁচে থাকলে এ মামলায় জিততেন!

আমাদের সবার বড় বোন। তারপর তিন ভাই। এরপর দুই বোন। একাত্তর সালে দুই ভাই ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বড়দা পিরোজপুরের প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট ও ট্রেজারি অফিসার। আপা কলেজে চাকরি করছেন। আমি ক্লাস টেনে। ছোট বোন মাত্র আট বছরের। ’৬৬-এর উত্তাল ছয় দফা, আগরতলা মামলা, ’৬৯-এর গণআন্দোলনে শহীদ আসাদ ও শামসুজ্জোহার মৃত্যু আমাদের ভারাক্রান্ত করেছে প্রতিনিয়ত। ’৭০-এর নির্বাচন-পরবর্তী রাজনৈতিক অস্থিরতায় বুঝতে অসুবিধা হয়নি দেশ অনিবার্য পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে বড়দা এসেছিলেন নড়াইলে। যাওয়ার সময় মাকে বলেছিলেন, পরিস্থিতি খারাপ। সাবধানে থেকো। ছোট বোন হ্যাপী মখমলের জামার বায়না ধরেছিল। দুই বোনকে দুই হাতে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, আসার সময় মখমলের জামা নিয়ে আসবেন। মা বলেছিলেন, সাবধানে থাকিস। বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়া তোর স্বভাব।

বড়দা বলেছিলেন, দেশ ডাকলে সাড়া তো দিতেই হবে মা!

যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। ২১ মাইল রাস্তা কখনো পায়ে হেঁটে, কখনো গরুর গাড়িতে, কখনো ট্রাকে চেপে অন্তঃসত্ত্বা বোন নড়াইল এসেছিল। এক মুহূর্তও তিষ্টোতে পারেনি সেখানে। বাতাসে খবর ভেসে এসেছিল, আমাদের বাড়িতে আগুন দেওয়া হবে। মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আকাশছোঁয়া আগুনের লেলিহান শিখা দেখেছিলাম। আমাদের বাড়িটা পেট্রল ঢেলে জ্বালানো হচ্ছিল মহাউল্লাসে!

৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ভাষণে বলেছিলেন- ‘তোমাদের যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল’। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন। সেই রাতেই গ্রেফতার হলেন। বড়দা ছিলেন ট্রেজারির দায়িত্বে। তিনি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করলেন। ট্রেজারি খুলে দিলেন। অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ তুলে দিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে। মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে আত্মনিয়োগ করলেন। অ্যাডভোকেট আলী হায়দার খান, সেকেন্ড অফিসার আবদুর রাজ্জাক, এসডিপিও ফয়জুর রহমানসহ কয়েকজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যোদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলমাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করলেন। তিনি দেশ ছেড়ে যাননি। বঙ্গবন্ধু দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেননি। ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে বলেছিলেন। যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে বলেছিলেন। তিনি তাই করেছিলেন। মেজর জলিল ভারতে যেতে চাইলে তাকে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি বড়দাকেও সঙ্গে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। বড়দা বলেছিলেন, ‘সবাই চলে গেলে চলবে কেন। দেশে থেকে তো কাউকে না কাউকে কাজ করতে হবে। বঙ্গবন্ধু সেই নির্দেশই দিয়ে গেছেন’। অকুতোভয় যোদ্ধা মেজর জিয়াউদ্দিন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অর্থ সাহায্য করেছিলেন। এক সাংবাদিক বন্ধু পাকিস্তানিদের নৃশংস নির্যাতনের ফুটেজসহ ঢাকা থেকে অনেক কষ্টে পিরোজপুরে এলে তাকে ভারতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। সেই সাংবাদিক ভারতে পৌঁছে বিদেশের সংবাদপত্রে ছবিগুলো প্রকাশ করলে সারা বিশ্ব কেঁপে ওঠে পাকিস্তানিদের পৈশাচিকতায়! ফাঁস হয়ে যায় পাকিস্তানিদের নির্যাতনের চালচিত্র।

ছাত্রজীবনে বড়দা ছিলেন ফজলুল হক হলের আবাসিক ছাত্র। ছিলেন ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, হলের সাহিত্য ও পত্রিকা সম্পাদক। বঙ্গবন্ধু তাকে স্নেহ করতেন। প্রয়াত পানিসম্পদমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে হল ক্যাবিনেটে সভাপতি পদে নির্বাচন করে দলীয় ষড়যন্ত্রে সামান্য কয়েক ভোটে হেরে গিয়েছিলেন। তিনি তো আগে থেকেই চিহ্নিত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে তার সরাসরি অংশ নেওয়ার বিষয়টি দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। আর ওই এলাকায় ছিল শান্তি কমিটির সভাপতি খান মোহাম্মদ আফজালের মতো স্বাধীনতাবিরোধী। পিরোজপুরের ত্রাস দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বাড়ি পাশেই। সেদিন ৫ মে ’৭১। যুগপৎ নৌ বিমান সড়ক হামলা হয় পিরোজপুরে। শহরের প্রবেশমুখে অনেকক্ষণ প্রতিরোধ যুদ্ধের পর এক পর্যায়ে ভেঙে পড়ে প্রতিরোধব্যূহ। ধরা পড়েন বড়দা। পাকিস্তানিরা তাকে জিপের চাকায় বেঁধে শহরের এবড়ো-খেবড়ো রাস্তা দিয়ে ফুলস্পিডে জিপ চালিয়ে বলেশ্বর নদীর তীরে দাঁড় করিয়ে বলে- ‘বল পাকিস্তান জিন্দাবাদ’। বড়দা সর্বশক্তি দিয়ে উচ্চারণ করেন, ‘জয় বাংলা’। বুলেটে বুলেটে ঝাঁজরা করে ফেলে তার দেহ। ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় নদীতে। তার মৃতদেহ আমরা পাইনি। এ দেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইলের কোথাও তার কোনো কবর নেই। যেখানে আমরা দুই ফোঁটা চোখের জল ফেলতে পারি। তার কোনো সন্তানও নেই যার মাঝে তাকে খুঁজতে পারি। ১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে পরাজিত সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করার পর এভাবেই মুর্শিদাবাদের রাস্তা দিয়ে টানা হয়েছিল। পার্থক্য তিনি ছিলেন মৃত আর বড়দা ছিলেন জীবিত! বাতাসে ভেসে ভেসে এ খবর যখন আমাদের কাছে আসে আমরা তখন উদ্বাস্তু। পালিয়ে বেড়াচ্ছি এ গ্রাম থেকে ও গ্রামে। মানুষের ভালোবাসা আর দয়ায় বেঁচে আছি। মা ছুটে গিয়েছিলেন পিরোজপুরে বড়দার বাসায়। খুঁজেছিলেন পিরোজপুরের অলিগলি। দ্বারে দ্বারে ঘুরেছিলেন সঠিক খবরের আশায়। মার চোখের জলে কেঁদে উঠেছিল পিরোজপুরের মাটি। আমরাও বহুদিন আশায় আশায় ছিলাম, এই বুঝি বড়দার পদশব্দ শুনতে পাব!  মাঝে মাঝে ভাবি, এ মৃত্যুর কি কোনো প্রয়োজন ছিল! পরিবারের বড় ছেলে শহীদ হলে সে পরিবারের পাঁজর ভেঙে যায়। আমাদেরও গিয়েছিল। নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিলাম আমরা। লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, আব্বার প্র্যাকটিস ছেড়ে দেওয়া, ভাইয়েরা ছাত্র, সে এক দুর্ভার সময় আমাদের! সরকার, প্রশাসন, জনগণ কেউই আমাদের কোনো খবর নেয়নি। তখন দশভূজার মতো এগিয়ে এসেছিল বড় বোন। আমাদের আপা কে এফ সুফিয়া বেগম বুলবুল। যিনি একজন ভাষাসৈনিক। বড়দা তো পারতেন নিজের স্বার্থটা দেখতে। ভারতে অথবা প্রত্যন্ত কোনো নিরাপদ এলাকায় পাড়ি জমাতে। সবাই তো ভারতে গিয়ে অবদান রাখেনি। জহির রায়হানের মতো ‘স্টপ জেনোসাইড’ বানিয়ে বিশ্ববিবেক কাঁপায়নি! স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে অংশ নেয়নি। প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধ করেনি। অনেকে ছিল দুধে-ভাতে রমরমা। শুধু সীমান্ত পার হওয়ার কারণে বনে গেছে মুক্তিযোদ্ধা। সনদ পেয়ে হয়েছে বীর। কারও কারও গায়ে যুদ্ধের আঁচড়টিও লাগেনি। আর এ দেশের লুঙ্গি পরা, মালকোচা মারা মুক্তিযোদ্ধারা ভাতের অভাবে কাঁদে! দেশ স্বাধীন হলে অনেকের মতো বিজয়ীর বেশে পতাকা উড়িয়ে দেশে আসতে পারতেন বড়দা। কেন করলেন না! করলেন না কারণ দেশকে ভালোবেসেছিলেন প্রাণের চেয়ে বেশি!

বড়দা একজন নামকরা লেখক। ইংরেজি বাংলা দুই ভাষায় অর্থনীতির বই প্রকাশ হয়েছিল ১০টি। সে সময়ের সবকটি দৈনিকে নিয়মিত লিখতেন গল্প কবিতা। শহীদ হওয়ার সময় লিখছিলেন বিশাল ক্যানভাসের রাজনৈতিক নাটক ‘ক্রান্তিকালের আকাশ’। নাটক করতেন, রেডিওতে কথিকা পড়তেন। সাহিত্যিক রশীদ হায়দার ছিলেন তার রুমমেট, কবি আসাদ চৌধুরী আর তিনি একই কলেজে পড়াতেন। বেঁচে থাকলে তাদের মতো একজন বড় লেখক হতে পারতেন। হয়তো হতে পারতেন একজন মন্ত্রী। তার বন্ধু আবদুর রাজ্জাক, রাশেদ খান মেনন মন্ত্রী হয়েছেন। হতে পারতেন বন্ধু সৈয়দ রেজাউল হায়াতের মতো একজন স্মরণযোগ্য আমলা। হতে পারতেন একজন নামকরা অর্থনীতিবিদ। তার বন্ধু ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন হয়েছেন। কিন্তু তিনি কিছুই হলেন না, নিজের কথা ভাবলেন না, পরিবারের কথা ভাবলেন না, ভাবলেন দেশের কথা, বঙ্গবন্ধুর কথা! শহীদ হলেন।

বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিন আমাকে বলেছিলেন, ‘সাঈফ মিজানকে এতটা টর্চার করা হয়েছিল যে তার শরীরে চামড়া ছিল না’। সেদিন তাঁর মুখ থেকে এ কথা শুনে আমি চোখের জলে ভেসেছিলাম। তিনি আমার চোখের জল মুছিয়ে দিয়েছিলেন। বড়দার বন্ধুরা সবাই বিখ্যাত। কেউ মন্ত্রী, কেউ সচিব, কেউ লেখক, বুদ্ধিজীবী। তাদের সবাই বড়দাকে মনে রেখেছেন কি না জানি না।

তবে দেরিতে হলেও তার আত্মত্যাগের  স্বীকৃতি মিলেছে। ডাকটিকিট বেরিয়েছে, সেমিনার কক্ষ হয়েছে, রাস্তা হয়েছে এবং শেষাবধি ২০১৪ সালে স্বাধীনতা পদক। এর কোনোটিই আমার বাবা-মা দেখে যেতে পারেননি। তারপরও মুক্তিযুদ্ধের সরকার ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা!

                লেখক : কথাশিল্পী, গবেষক, সাবেক যুগ্ম সচিব।

সর্বশেষ খবর