বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

গড়তে হবে স্মার্ট বাংলাদেশ

মো. খসরু চৌধুরী

গড়তে হবে স্মার্ট বাংলাদেশ

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিশ্রুতি ছিল দেশবাসীর অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা ইত্যাদি মৌলিক অধিকার পূরণ করা। দুনিয়ার সবচেয়ে  ঘনবসতির দেশ বাংলাদেশে পাঁচ দশকে চাষযোগ্য জমি অর্ধেকে নেমে এলেও এবং জনসংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বাড়লেও খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে তিন গুণ। যে দেশের বেশির ভাগ মানুষ স্বাধীনতার আগে বিদেশে পুরনো পোশাকের ওপর নির্ভরশীল ছিল, সে দেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় পোশাক রপ্তানিকারক। চিকিৎসা ও শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে বাংলাদেশে। আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সরকার বিভিন্ন প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে চলেছে। রাজধানীতে যানজট দূর করতে মেট্রোরেল প্রকল্প চালু হয়েছে। ইতোমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে ও স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে বেশ কয়েকটি ফ্লাইওভার। নির্মাণ হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। এই বন্দরের ওপর চাপ কমাতে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় রাবনাবাদ চ্যানেলে পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০২৩ সালের মধ্যে ১৬ মিটার গভীরতায় চ্যানেল ড্রেজিং সম্পন্ন করে বন্দর গড়ে তোলা হবে। সমুদ্র পথে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও এগিয়ে নিতে শেখ হাসিনার সরকারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা রয়েছে। এ লক্ষ্যে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশি-বিদেশি নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে উন্নয়ন, অগ্রগতি আর সমৃদ্ধির পথে হাঁটছেন। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিগত ১৩ বছরে সর্বক্ষেত্রে যে সফলতা অর্জিত হয়েছে তার পথ ধরে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছানোর অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে।

টেকসই অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য শেখ হাসিনা সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সরকারের উন্নয়ন ভাবনা ও তার যথাযথ বাস্তবায়নের ফলে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে শেখ হাসিনার অবদান আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ ও প্রয়াত যুদ্ধবীরদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ‘বীরনিবাস’ নামে বাড়ি উপহার দিয়েছে সরকার। প্রতিটি নিবাসের আয়তন ৭৩২ বর্গফুট। একতলার এই বাড়িতে দুটি শয়নকক্ষ, একটি বসার কক্ষ, একটি খাওয়ার কক্ষ, একটি রান্নাঘর, একটি প্রশস্ত বারান্দা ও দুটি শৌচাগার থাকছে। প্রতিটি বাড়িতে থাকছে একটি উঠান, একটি নলকূপ, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি পালনের জন্য পৃথক শেড। প্রতিটি বাড়ির ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরেই ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন নোয়াখালী বর্তমান লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চরপোড়াগাছা গ্রামে ভূমিহীন-গৃহহীন, অসহায় ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দেশি ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার পর দেশের গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবার পুনর্বাসনের মতো জনবান্ধব ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলো স্থবির হয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু হত্যার দীর্ঘ ২১ বছর পর তাঁর সুযোগ্যকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধুর জনবান্ধব ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমগুলো পুনরায় শুরু করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে ২ লাখেরও বেশি ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে জমিসহ ঘর বিতরণ করেছেন। এ বছরে পর্যায়ক্রমে আরও ১ লাখ ঘর বিতরণ করবেন প্রধানমন্ত্রী। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য চারটি ভিত্তি সফলভাবে বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। এগুলো হলো-স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি। এর পাশাপাশি হাতে নেওয়া হয়েছে ২১০০ বদ্বীপ কেমন হবে- সেই পরিকল্পনা। স্মার্ট বাংলাদেশে সব কাজ, সম্পাদন করা হবে প্রযুক্তির মাধ্যমে। যেখানে প্রত্যেক নাগরিক প্রযুক্তি ব্যবহারে হবে দক্ষ। ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ হবে সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিভিত্তিক, জ্ঞানভিত্তিক এবং উদ্ভাবনী বাংলাদেশ। স্মার্ট সিটি ও স্মার্ট ভিলেজ বাস্তবায়নের জন্য স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট ট্রান্সপোর্টেশন, স্মার্ট ইউটিলিটিজ, নগর প্রশাসন, জননিরাপত্তা, কৃষি, ইন্টারনেট কানেকটিভিটি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে।

স্মার্ট সিটির কনসেপ্ট বাস্তবায়নে এরই মধ্যে কাজ করা শুরু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এ লক্ষ্যে সবার জন্য ঢাকা অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে, যার মাধ্যমে নাগরিকদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে করা ১ লাখ ২৮ হাজার ৭৬৭টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। ডিএনসিসিতে ৪৮ হাজার স্মার্ট লাইট স্থাপন করা হয়েছে-যা মোবাইল ফোন থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এসব লাইটের আলো প্রয়োজন অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ করে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা হচ্ছে। অনলাইনে ট্যাক্স আদায় শুরু করা হয়েছে। ড্রোনের মাধ্যমে ১ লাখ ২৮ হাজার বাসাবাড়িকে সার্ভের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বায়োমেট্রিক হাজিরা, অনলাইনে ট্রেড লাইসেন্স এবং আইওটির মাধ্যমে ২,৩৫০টি স্থানে ডিজিটাল কার পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।  নাগরিক সেবার সব কার্যক্রমকে পর্যায়ক্রমে আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে। এখন ৩৩৩-এর মাধ্যমে নাগরিকরা কোনো অভিযোগ করলে সঙ্গে সঙ্গে এর সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে।

♦ লেখক : সিআইপি, পরিচালক, বিজিএমইএ

সর্বশেষ খবর