জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বের অস্তিত্বকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। আবহাওয়ার ওপর বিস্তার করছে কালো ছায়া। দুনিয়াজুড়ে বাড়ছে উষ্ণতা। এ উষ্ণতার পরিণতিতে গলছে দুই মেরুর বরফের স্তর। গলছে হিমালয় পর্বতমালার বরফ। এর ফলে দেখা দিচ্ছে অকালবন্যা। বাড়ছে সাগরপৃষ্ঠের উচ্চতা। জলবায়ু পরিবর্তনের বেসামাল চিত্রে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন বোদ্ধাজনেরা। কানাডার ভ্যানকুভারে যেখানে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা কল্পনা করাও যেত না সেখানে গত গ্রীষ্মে ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মুখে পড়েছে মানুষ। অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে কানাডার ক্যালগারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশের ছয়জন গবেষক ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট- এ পাঁচ শহরের ওপর গবেষণা করেছেন। তাদের ভাষ্য, বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধি যেখানে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা হচ্ছে, সেখানে ঢাকার তাপমাত্রা গত ২০ বছরে প্রায় ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। গবেষণায় ঢাকার তাপমাত্রা বেশি বৃদ্ধির পেছনে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, জলাভূমি ভরাট ও গাছপালা কেটে ফেলাকে দায়ী করা হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়, ঢাকাসহ অন্য মহানগরগুলো ‘হিট আইল্যান্ড’ বা উত্তপ্ত দ্বীপে পরিণত হচ্ছে। এ দ্বীপের আশপাশে তাপমাত্রা কম থাকলেও দ্বীপটি দিনরাতই উত্তপ্ত থাকছে। এ ছাড়া বিগত তিন দশকে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা এর আগের তিন দশকের চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৭ উপলক্ষে প্রকাশিত বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্ল্যানে ওই তথ্য প্রকাশিত হয়। গাছপালার সংখ্যা অবিশ্বাস্য হারে হ্রাস পাওয়ায় ঢাকাসহ দেশের নগর এলাকায় উষ্ণতা বাড়ছে। ঢাকায় একসময় ছিল অর্ধশতাধিক বড় খাল ও লেক। ছোট খালের সংখ্যাও ছিল বিপুল। সেগুলো বেশির ভাগই এখন বাস্তবে অস্তিত্ব হারিয়েছে। উষ্ণতার কারণে এবং একের পর এক নদনদী বিলোপ হয়ে যাওয়ায় দেশে ভূগর্ভস্ত পানির স্তর নিচে নামছে। ঢাকায় তা নেমে যাচ্ছে বিপজ্জনক হারে। নিজেদের স্বার্থেই গাছপালা জলাশয় রক্ষায় যত্নবান হতে হবে।