রবিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

রমজান-পরবর্তী ১০ করণীয়

মুফতি মুহাম্মদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী

রমজান-পরবর্তী ১০ করণীয়

বছর ঘুরে মাহে রমজান আসবে আবার চলে যাবে এটাই নিয়ম। আল্লাহতায়ালা যাদের তৌফিক দিয়েছেন তারাই মাহে রমজানের রোজা পালন করেছেন। তবে মাহে রমজানের রোজা পালনেই কেবল দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। রমজান-পরবর্তী ১১টি মাসে সারা জীবনেও রয়েছে অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য। এসবের আলোকে আমাদের জীবন সাজাতে হবে। ওইসব দায়িত্বের অন্যতম হলো ১. রমজান-পরবর্তী আমাদের জীবনযাপন : রমজানের আগমন ও প্রস্থানে মানুষের সঙ্গে বেশ মিল খুঁজে পাওয়া যায়। কোনো পরিবারে যখন কেউ আগমন করে তখন তার পরিবার খুশি হয়। তেমনিভাবে রমজানের আগমনে মুমিনরা আনন্দিত হয়। আবার যখন কোনো মানুষ দুনিয়া থেকে চলে যায় তখন তার জন্য জীবিতরা কাঁদতে থাকে। তেমনিভাবে রমজানের প্রস্থানে মুমিনরা কাঁদতে থাকে।

২. নিজের আমল নিজে নষ্ট করা চলবে না : রমজান মাসে মুমিন-মুসলমানরা সিয়াম পালনের পাশাপাশি তারাবি আদায়, জিকির-আজকার, কোরআন তেলাওয়াতসহ বিভিন্ন সৎ আমলে ব্যস্ত থাকে। গুনাহের কাজ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখে। কিন্তু রমজান চলে গেলে অনেকেই এসব আমল থেকে দূরে সরে যায়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা কখনো সেই নারীর মতো হোয়ো না, যে অনেক পরিশ্রম করে নিজের জন্য কিছু সুতা কাটল কিন্তু পরে তা নিজেই টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলল...।’ সুরা আন নাহল : ৯২।

৩. বালাম বাউরার মতো না হওয়া : বালাম বিন বাউরার নাম অনেকেই জানি। তিনি বনি ইসরাইলের একজন বিখ্যাত বুজুর্গ। তিনি ইমানের স্বাদ গ্রহণ করেছিলেন কিন্তু পরে আবার আগের পথে ফিরে যান। তিনি হেদায়েতের বিনিময়ে ভ্রষ্টতা ও মাগফিরাতের বদলায় আজাব কেনেন। তার ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ‘(হে মুহাম্মদ!) আপনি তাদের কাছে এমন মানুষের কাহিনি (পড়ে) শোনান, যার কাছে আমি (নবীর মাধ্যমে) আমার আয়াতগুলো নাজিল করেছিলাম, সে তা থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে, এরপর শয়তান তার পিছু নেয় এবং সে সম্পূর্ণ গোমরাহ লোকদের দলভুক্ত হয়ে পড়ে।’ সুরা আল আরাফ : ১৭৫।

৪. ইবলিশ শয়তানকে ভয় করা : রমজানের পর শয়তানকে আবার আগের মতো ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু শয়তানের ষড়যন্ত্র দুর্বল যেমনটি আল্লাহ আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন। যে আল্লাহকে আঁকড়ে ধরবে আল্লাহ তাকে শয়তানের ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করবেন। শয়তানের লক্ষ্য হলো মানুষকে জাহান্নামে প্রবেশ করানো, গুনাহের কাজে জড়ানো। এসব মানুষের দোজখে প্রবেশের হাতিয়ার। তাই শয়তান সর্বদা চায় মুমিনদের রমজানের আমলগুলো কীভাবে ধ্বংস করা যায়। কিন্তু শয়তানের এমন ফাঁদে পা দেওয়া চলবে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘শয়তান হচ্ছে তোমাদের শত্রু, অতএব তোমরা তাকে শত্রু হিসেবেই গ্রহণ কর; সে তার দলবলদের এজন্যই আহ্বান করে যেন তারা (তার আনুগত্য করে) জাহান্নামের বাসিন্দা হয়ে যেতে পারে।’ সুরা ফাতির।

৫. নামাজ পরিত্যাগ না করা : রমজান মাসে প্রায় মুসলমানই জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করে। রমজানের পরও এ উত্তম অভ্যাসটি ধরে রাখতে হবে। কেননা নামাজ হচ্ছে জীবন ও মরণে আলো। নামাজ পরিবার ও সম্পত্তিতে বরকত হিসেবে কাজ করে। যার নামাজ ঠিক তার সব আমল ঠিক। নামাজ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নামাজগুলোর ওপর (গভীরভাবে) যত্নবান হও, (বিশেষ করে) মধ্যবর্তী নামাজ এবং তোমরা আল্লাহর জন্য বিনীতভাবে দাঁড়িয়ে যাও।’ সুরা বাকারা : ২৩৮।

রসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন বান্দার সব কাজের মধ্যে প্রথমে তার নামাজের ব্যাপারে হিসাব নেওয়া হবে। যদি তা ঠিক থাকে তাহলে সে সফলকাম হবে। আর যদি ঠিক না থাকে তাহলে সে ব্যর্থ ও ধ্বংস হবে।’ আহমদ।

৬. কোরআন তেলাওয়াত পরিত্যাগ না করা : যারা শুধু রমজানে কোরআন তেলাওয়াত করে আর বাকি বছর তা পরিত্যাগ করে তাদের দলভুক্ত হওয়া চলবে না। নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত করতে হবে।

৭. আল্লাহর জিকির অধিক পরিমাণে করা : রমজানের পরও অধিক হারে জিকির করতে হবে। জিকিরের মাধ্যমে সর্বদা জিবকে সিক্ত রাখতে হবে।

৮. দুরুদ অধিক পরিমাণে করা : সকাল-সন্ধ্যায় রসুল (সা.)-এর প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করতে হবে। বিভিন্ন কাজের শুরুতে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর শেখানো দোয়াগুলো পাঠ করে কাজ শুরু করতে হবে।

৯. সৎসঙ্গ গ্রহণ করা : প্রত্যেক মানুষের কর্তব্য হলো এমন বন্ধু গ্রহণ করা যে সৎ কাজে এবং আল্লাহর আনুগত্যের পথে সাহায্য করবে। সুতরাং মুমিনের উচিত এমন সাথি গ্রহণ করা যে অন্যায় ও পাপের পথ থেকে সতর্ক করে সঠিক পথের দিকে আহ্বান করবে।

১০. শাওয়ালের রোজা পালন করা : রমজানের পর শাওয়ালের রোজা পালনের ফজিলতের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবু আইয়ুব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানে সিয়াম পালন করল তারপর শাওয়ালের ছয়টি রোজা পালন করল তাহলে সে পুরো বছর রোজা পালন করল।’ সহিহ মুসলিম।

 

লেখক : খতিব, মনিপুর বায়তুল আশরাফ (মাইকওয়ালা) জামে মসজিদ মিরপুর, ঢাকা

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর