সংবাদমাধ্যমকে ফোর্থ স্টেটের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে সংবিধানে। সংবাদমাধ্যম মানুষের মতপ্রকাশের অধিকার সমুন্নত রাখে। সাংবাদিকরা ব্যক্তিপর্যায়ে কোনো দলের কিংবা মতের অনুসারী হতে পারেন, কিন্তু সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে সব মত মেনে নেওয়ার মানসিকতা পোষণ করতে হয়। দেশে চলতি মাসে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের যে আন্দোলন হলো তাতে সংবাদমাধ্যম বা সাংবাদিকরা কোনো পক্ষ নয়। তারা আন্দোলন-সংগ্রামের কথা তাদের সংবাদমাধ্যমে তুলে ধরার জন্যই দেশের সব প্রান্তে সক্রিয় ছিলেন। আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, ছবি সবকিছু সংবাদমাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে গুরুত্বের সঙ্গে। কিন্তু আন্দোলনের পেছনে ঘাপটি মেরে থাকা অপরাজনীতির নোংরা কীটরা নিজেদের চেহারা উন্মোচনের ভয়ে সাংবাদিকদের প্রতিপক্ষ ভেবেছে। আন্দোলন-সংগ্রামের খবরাখবর কভারেজ করতে গিয়ে সারা দেশে পুলিশের গুলিতে এবং আন্দোলনের পেছনে থাকা রাজনীতিক অপশক্তির হামলার শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত চার সাংবাদিক। আহতের সংখ্যা কয়েক ডজন। আন্দোলনের নামে দেশজুড়ে আগুনসন্ত্রাসের মুখে সরকার রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ও জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় সারা দেশে কারফিউ জারি করে। তার আগে কোটা সংস্কার দাবির আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দেয় সন্ত্রাসী কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নেই। শনিবার কারফিউর মধ্যে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় সড়ক অবরোধকারীদের সহিংসতার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে এক নারী সাংবাদিক পিকেটারদের নোংরা আচরণের শিকার হন। তাকে শুধু কিল-ঘুষি নয়, নগ্ন করে শ্লীলতাহানি করা হয়। সেলিনা আকতার সোনালী নামের ওই সাংবাদিক তাকে বিবস্ত্র ও নির্যাতন করার জন্য বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের তিন নেতার লোকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন। অন্য দুই নারীও নিগৃহীত হয়েছেন পিকেটারদের দ্বারা। সাংবাদিকদের ওপর যারা হামলা চালায়, নির্যাতন করে, কণ্ঠরোধের চেষ্টা চালায় তারা গণতন্ত্রের বন্ধু হতে পারে না। আমরা চাই চলমান সহিংসতায় সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে এমনটিও প্রত্যাশিত।