প্রিয় নবী রসুল (সা.) এর আগমন ঘটেছিল মানব জাতির জন্য রহমতস্বরূপ। তিনি তাঁর পুরো জীবনই অতিবাহিত করছেন মানুষের কল্যাণে। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তিনি ছিলেন অগ্রদূত। তাঁর জন্মের আগে আরব জাহানে ছিল হানাহানি আর বৈষম্যের যুগ। ছিল না বড় ছোট কোনো ভেদাভেদ। সমাজে ছিল না কোনো নিয়মানুবর্তিতা। তিনিই একমাত্র মানুষ যিনি সমাজের এ অস্থিরতা দূর করে সাম্য ও সম্প্রীতির আলো জ্বালিয়েছেন। রসুল (সা.) নিজেই বলেছেন, “আমাকে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য রহমতস্বরূপ পাঠানো হয়েছে।” (মুসনাদে আহমদ)। আল্লাহর রসুল (সা.) সব ধর্মের মানুষকে সম্মান দিতেন। ধনী-গরিব, উঁচু-নিচু সবার সঙ্গে ভদ্রতা বজায় রেখে চলতেন ও ভালো আচরণ করতেন। তাঁর আদর্শ অনুসরণীয়। একবার এক ইহুদির লাশ তাঁর সামনে দিয়ে অতিক্রম করার সময় দাঁড়িয়ে তিনি সম্মান দিয়েছিলেন যতক্ষণ না লাশটি তাঁর সামনে থেকে চলে যায়। পাশ থেকে জাবের (রা.) বলেছিলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ এটি তো একজন ইহুদির লাশ। আল্লাহর রসুল (সা.) উত্তর দিয়ে বলেছিলেন, সে কি মানুষ না? (বুখারি শরিফ, ১৩১১)। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, “হে মানব জাতি, অবশ্যই আমি তোমাদের একটি পুরুষ ও একটি নারী থেকে সৃষ্টি করেছি, তারপর আমি তোমাদের জন্য জাতি ও গোত্র বানিয়েছি, যাতে করে তোমরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে পার।” (সুরা আল হুজরাত, আয়াত ১৩)। এ আয়াত থেকে এটা সুস্পষ্ট যে মানুষ হিসেবে আমরা সবাই এক জাতি। চামড়ার রং, ধনী, গরিব, সামাজিক মর্যাদা, বংশ ইত্যাদি শুধু একে অপরকে জানার জন্য, যাতে চারিত্রিক ও মানসিক গুণাবলি দ্বারা একে অপরের উপকার করতে পারি। ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান। শান্তি ও কল্যাণের ধর্ম ইসলাম। এখানে সব ধর্মের মানুষের অধিকার সংরক্ষিত রয়েছে। এ ধর্মে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের কোনো স্থান নেই। যারা দুনিয়ার বুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ইসলাম কায়েম করতে চায় তারা কখনো শান্তির ধর্ম ইসলামের অনুসারী হতে পারে না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, দীনের ব্যাপারে কোনো জোর জবরদস্তি নেই। (সুরা বাকারা, আয়াত ২৫৬)। ইসলাম ধর্মে যদি বল প্রয়োগের বিধান থাকত তাহলে রসুল (সা.) এর মক্কা বিজয়ের পর কাফেরদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের জন্য বাধ্য করতেন এবং মক্কায় তাদের বসবাসে বাধা সৃষ্টি করতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি ক্ষমার মহানুভবতা দেখিয়ে তাদের হৃদয় জয় করলেন আর দলে দলে অমুসলিম কাফেররা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন। ইসলামের আদর্শ হলো শত্রুর সঙ্গে বন্ধুত্বসুলভ আচরণের দৃষ্টান্ত স্থাপন করা। আমাদের মনে রাখতে হবে আল্লাহ ও তাঁর রসুল (সা.)-এর নির্দেশিত পথের বাইরে যা কিছু করা হবে তা-ই হবে ইসলামবিরোধী। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, “তারা আল্লাহতায়ালার পরিবর্তে যাদের ডাকে তোমরা তাদের গালিগালাজ কর না, নইলে তারা শত্রুতার বশবর্তী হয়ে, না জেনে আল্লাহকে গালি দেবে।” (সুরা আল আনয়াম, আয়াত ১০৮)। মুসলিম ব্যক্তির প্রতিবেশী যদি অমুসলিম হয়, তার অধিকারের প্রতিও খেয়াল রাখা জরুরি। এটিও প্রতিবেশীর হকের অন্তর্ভুক্ত। বিদায় হজের ভাষণে রসুল (সা.) ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, ‘হে মানবমন্ডলী, তোমাদের আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয় এবং তোমাদের আদিপিতাও এক। একজন আরব একজন অনারব থেকে কোনো মতেই শ্রেষ্ঠ নয়। তেমনি একজন আরবের ওপর একজন অনারবের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। একজন সাদা চামড়ার মানুষ একজন কালো চামড়ার মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়, আবার কালোও সাদার চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়।’ সুতরাং বর্ণবাদ, পুঁজিবাদ, সামাজিক মর্যাদা, সম্পদশালী হওয়ার মাধ্যমে মানুষের মর্যাদার মূল্যায়ন হতে পারে না।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার